ঢাকা, রবিবার   ০১ ডিসেম্বর ২০২৪

রোজার দিনে যত খাও তার কোনো হিসাব নাই- ধর্মের নামে অপপ্রচার!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:৪১, ৩ এপ্রিল ২০২৩ | আপডেট: ১৬:৩৯, ৯ মার্চ ২০২৪

ধর্মের নামে অপপ্রচার, বলে যে, রোজার দিনে যত খাও তার কোনো হিসাব নাই। সবসময় পরিমিত সংযমের মাসে দু-তিন কেজি ওজন কমা মানে কিন্তু দুর্বল হওয়া না। দু-তিন কেজি ওজন কমা মানে হচ্ছে আপনার স্ট্রেন্থ আরো বাড়া।

একবার হলো একজন সাহাবী তার ভুঁড়িটা একটু বড় ছিল। তিনি বললেন যে দেখ এই ভুঁড়িটা ভরার চেয়ে অতিরিক্ত খাবার যদি তুমি সদকা দিয়ে দাও এটা অনেক ভালো হবে তোমার জন্যে উপকারি হবে।

আসলে যতদিন পর্যন্ত সাহাবীরা এবং সাহাবীদের পরে যারা তাবেইন ছিলেন তাবে তাবেইন। তারা যতদিন পর্যন্ত নবীজীর এই সুন্নতকে অনুসরণ করেছেন অর্থাৎ পরিমিত খাবার গ্রহণ করেছেন তাদের অসুখবিসুখ খুব কম হতো। মদিনাতে অসুখবিসুখ বাড়া শুরু হলো চার খলিফার তিরোধানের পরে যখন সম্পদের প্রাচুর্য হলো এবং প্রচুর খাবার আসতে শুরু করল তখন।

নবীজীর জামানাতে নবীজী কিন্তু কখনো খুব মিহি আটা খেতেন না, ময়দা খেতেন না কখনো। উনি সবসময় রুটি খেতেন। এখন যে জিনিসগুলো বলা হচ্ছে হোলগ্রেইন খাও সাদা খেও না।

চিকিৎসা বিজ্ঞান বলে রমজান দেহকে সব ধরনের দূষণমুক্ত করার মাস। শারীরিক মানসিক সামাজিক আত্মিক যতরকম দূষণ আছে, যতরকম টক্সিন আছে, সমস্ত টক্সিন থেকে মুক্ত থাকার মাস হচ্ছে রমজান।

নবীজী (স.) বলেছেন, যে তোমরা রোজা রাখো যাতে তোমরা সুস্থ থাকতে পারো। একসময় আমাদের কারো কারো মধ্যে ধারণা ছিল যে রোজা রাখলে সে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। কিন্তু নবীজীর নির্দেশনা যে কত নির্ভুল ছিল তা প্রথম বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ করলেন এখন থেকে আট বছর আগে জাপানী গবেষক ইউশিনোরি ওসুমি। তিনি তার গবেষণায় সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করেন রোজা বা উপবাস দেহকে টক্সিনমুক্ত করে এবং ক্যান্সার প্রতিরোধ করে এবং তিনি এই টক্সিনমুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়ার নাম দিয়ে নাম দিলেন অটোফেজি। এই গবেষণার জন্যে তিনি নোবেল পুরস্কার পান।

জাপানী গবেষক ওসুমি অটোফেজিকে যেভাবে শরীরের শুদ্ধি প্রক্রিয়া হিসেবে বর্ণনা করেছেন সেই একই বর্ণনা আমরা পাই রসুলুল্লাহর (স.) হাদীসে। তিনি বলেছেন, সবকিছুর যাকাত রয়েছে, যাকাত অর্থ হচ্ছে শুদ্ধি প্রক্রিয়া। শরীরের যাকাত হচ্ছে রোজা। এই জন্যেই প্রত্যেক ধর্মে রোজা বা উপবাসের বিধান রয়েছে। সনাতন হিন্দুধর্ম, খ্রিষ্টধর্ম, ইহুদিধর্ম, বৌদ্ধধর্ম এবং ইসলাম ধর্ম। প্রত্যেক ধর্মেই এই উপবাস বা রোজার যে কল্যাণ এই কল্যাণের কথা তারা বলেছেন।

গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে রোজা রাখলে প্রদাহ জ্বালাপোড়া সংক্রমণ ইত্যাদি কমে যায়। বেড়ে যায় দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ার সাথে সাথে বার্ধক্য প্রতিহত করার শক্তি এবং মস্তিষ্ককে ক্ষুরধার করা, স্মৃতিকে শাণিত করার শক্তিও বেড়ে যায়। 

বিশেষজ্ঞরা বলেন, শারীরিক মানসিক ভালো থাকা খাবার ও পানীয়ের সাথে সরাসরি যুক্ত। একজন মানুষ যা খায় সেখান থেকে সংগৃহীত পুষ্টি দেহের কোষগুলোর মেমব্রেনস বোনম্যারো রক্ত হরমোন টিস্যু অঙ্গ ত্বক চুল সবকিছুর গঠন প্রকৃতি নির্ধারণ করে। কিন্তু কোনো কারণে খাবার এবং পানীয়ের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে গেলে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা থেকে এমন রাসায়নিক উপাদান নিঃসরণ হয় যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে প্রদাহ সৃষ্টি করে। অন্যদিকে, দীর্ঘক্ষণ না খেয়ে থাকলে শরীল অভ্যন্তরীণ জৈব রাসায়নিক ব্যবস্থাকে সুষম এবং সুন্দর করে তোলার সুযোগ পায়। তাই রোজা বা উপবাস কীভাবে করবেন- এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। খাবার ও পানীয় কী গ্রহণ করবেন সেটার ওপর নির্ভর করবে আপনার শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। আপনার সুস্থ থাকার সামর্থ্য। 

খাবার দাবাড় খাওয়ার ক্ষেত্রে হোয়াইট কালার যেটা হচ্ছে যে সাদা চাল থেকে শুরু করে সাদা আটা মানে ময়দা সাদা আলু গোলআলুর চেয়ে মিষ্টি আলু কিন্তু অনেক বেটার।

পাস্তা তারপরে আরো কী কী আছে যেগুলো সাদা। এগুলো যত না খাওয়া হয় তত ভালো। যত রিফাইন হবে ফুড এবং চিনি। চিনিটাকে মনে করবেন যে এটা হচ্ছে মিসরিছুরি যে খেতে মিষ্টি কিন্তু কেটে ফেলে সবকিছু।

চিনি হচ্ছে মিসরিরছুরি মানে আপনার সর্বনাশ করার জন্যে আপনার স্বাস্থ্যের ১২টা বাজানোর জন্যে অতিরিক্ত চিনি-ই হচ্ছে যথেষ্ট। অতএব চিনির ব্যাপারে খুব আমরা সতর্ক থাকব।

ফিজিকেল ফিটনেসের জন্যে কোরআনের শিক্ষা- 'পরিমিত খাও! এবং সবচেয়ে বড় জিনিস হচ্ছে যে খাবার পরিমিত খাওয়া।

এবং এখানেই কোরআনের বিশেষত্ব যে কোরআন আপনাকে সুস্থ জীবনাচারের শিক্ষা দিয়েছে, সুস্থ জীবনাচার অনুসরণ করতে বলেছে এবং পরিষ্কার বলে দিয়েছে যে কী করলে কী হবে। মানা না মানা এটা তো প্রত্যেকের স্বাধীনতা কোরআন দিয়ে দিয়েছে যে মানবে কি মানবে না এটা তোমার ব্যাপার। মানলে তুমি পুরস্কৃত হবে আর না মানলে তুমি তিরস্কৃত হবে তুমি বিনাশিত হবে।

কারণ কোরআনের শিক্ষা কোরআনের জ্ঞানার্জন করা ফরজ এই কারণে যাতে আপনি আপনার নিজের যত্ন নিতে পারেন যাতে আপনি টোটালি ফিট থাকতে পারেন।

এই টোটাল ফিটনেসের ম্যানুয়েল হচ্ছে কোরআন। আপনি যত কোরআনের গভীরে ডুবে যাবেন তত দেখবেন ফিজিকেল ফিটনেসের জন্যে যা প্রয়োজন পরতে পরতে রয়েছে, মেন্টাল ফিটনেসের জন্যে যা প্রয়োজন পরতে পরতে সেই উপদেশ রয়েছে সেই নির্দেশনাবলী রয়েছে। সোশ্যাল ফিটনেসের জন্যে যা প্রয়োজন পরতে পরতে তার নির্দেশনা রয়েছে।

কেআই//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি