দানে প্রাচুর্য আনে
প্রকাশিত : ১৫:৪৬, ২৩ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ১৬:০৪, ২৪ মার্চ ২০১৮
প্রাচুর্যের পঞ্চসূত্রের একটি হলো দান। কারণ, দানের মাধ্যমে যখন সম্পদ বা অর্থ হস্তান্তরিত হয়ে সাময়িক শূন্যতা সৃষ্টি হয়, তখন তা পূরণের জন্যে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই অর্থের গতিশীলতা সৃষ্টি হয় এবং অর্থাগম ঘটে।
পাচুর্যের ক্ষেত্রে দান পাঁচভাবে ভূমিকা পালন করে। প্রথমত, দান উপার্জনকে শুদ্ধ করে। কারণ উপার্জন করতে গিয়ে জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতসারে যে অন্যায় হয়, অতিরঞ্জন হয় দান সে অন্যায়কে কাটায়। দ্বিতীয়ত, দান পাপমোচন করে। তৃতীয়ত, দান বালা-মুসিবত ও রোগ দূর করে। চতুর্থত, দান দারিদ্র্য বিমোচন করে ও দাতার অন্তরে তৃপ্তি প্রদান করে। পঞ্চমত, দান সম্পদে বরকত দেয়।
দান কীভাবে বৈষয়িক সমৃদ্ধি আনে তার একটি ঘটনা বর্ণিত হয়েছে মুসলিম শরীফে-একবার এক লোক পাহাড়ে হেঁটে বেড়ানোর সময় মেঘের ভেতর থেকে আওয়াজ শুনতে পেলো যে, ‘অমুকের বাগানে পানি দাও’।
কিছুক্ষণ পরই বৃষ্টি শুরু হলো এবং পানি পাহাড়ের পাশে একটি ঝর্ণা দিয়ে গড়াতে লাগলো। লোকটি কৌতূহলী হয়ে ওই নালাকে অনুসরণ করলো। যেতে যেতে এক জায়গায় পৌঁছে সে দেখলো, জনৈক ব্যক্তি কোদাল দিয়ে মাটি কেটে ওই পানি তার বাগানে ঢুকাচ্ছে। নাম জিজ্ঞেস করতেই সে চমকে উঠলো। কারণ এই নামই সে শুনেছিলো গায়েবি আওয়াজে। তার কাছে জানতে চাইলো যে, সে কী এমন পুণ্যের কাজ করেছে যে, প্রকৃতি এভাবে তাকে সহযোগিতা করছে। সে তখন বললো, আমি এ বাগানের ফসলকে তিন ভাগ করি। একভাগ পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্যে, একভাগ জমিতে বিনিয়োগের জন্যে এবং বাকি একভাগ দানের জন্যে ব্যয় করি। এজন্যেই হয়তো আমি এভাবে সহযোগিতা পাই।
দানের আত্মিক উপকার প্রসঙ্গেও একটি ঘটনা আছে। একবার কামেল বুজুর্গ জন্নুন মিসরি হজে গিয়েছেন। আরাফাতের ময়দানে মোরাকাবায় বসে তিনি শুনলেন, এ বছর সর্বপ্রথম হজ কবুল হয়েছে আহমেদ আশফাক নামে দামেস্কের জনৈক মুচির যিনি হজেই আসেননি। শুনে সাধক কৌতূহলী হলেন। দামেস্কে গিয়ে বহু খোঁজাখুজি করে তাকে পেলেন। তার কাছে শুনলেন ঘটনা। মুচি খুব সামান্য উপার্জন করেন। সংসারের খরচ মিটিয়ে যা বাঁচে তা একটি একটি করে জমিয়ে ৪০ বছর ধরে তিনি সংগ্রহ করেছিলেন হজে যাওয়ার খরচ। যাওয়ার সবকিছু যখন ঠিকঠাক, দিনক্ষণ দিখে যাত্রা করবেন ভাবছেন-এমন সময় ঘটলো একটি ঘটনা। একদিন তার ছোট ছেলে কাঁদতে কাঁদতে এসে জানালো, অমুক প্রতিবেশীর বাড়িতে সে গিয়েছিল। রান্নাঘর থেকে মাংস রান্নার গন্ধ পেয়ে একটু মাংস খেতে চাওয়ায় সেই প্রতিবেশী মাংস তো দিলোই না, উপরন্তু তাকে বললো সেখান থেকে চলে যেতে। শুনে আহমেদ আশফাক একটি উত্তেজিত হলেন। এ কেমন কথা! এইটুকু ছেলেকে সামান্য একটু মাংস দিতেও কার্পণ্য! মুচির চিৎকার শুনে প্রতিবেশী গৃহকর্তা বেরিয়ে এলো। বললো, ভাই, আপনার রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক। বাচ্চাটাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে আমারও কম খারাপ লাগেনি। কিন্তু আমি নিরুপায় ছিলাম। জেনেশুনে আপনার ছেলেকে আমি মরা ছাগলের মাংস খেতে দিতে পারিনি। আমাকে মাফ করবেন। এবার আহমেদ আশফাকের অবাক হওয়ার পালা। মরা ছাগল মানে কী? সব খুলে বল।
প্রতিবেশী তখন বললো, বেশ অনিকদিন হলো-কোনো কাজ যোগাড় করতে পারছি না। ঘরে যে খাবার ছিলো, তা-ও ফুরিয়ে যাওয়ার পর থেকে ছেলে-মেয়ে নিয়ে গত কয়েকদিন প্রায় অনাহারেই আছি। অবশেষে খিদের জ্বালা সইতে না পেরে আজ সকালে বের হয়েছিলাম কিছু জোটে কি-না দেখতে। হঠাৎ দেখলাম মাঠের ধারে পড়ে আছে একটা মরা ছাগল। তখনও পচন ধরেনি। তাই ছুরি দিয়ে খানিকটা মাংস কেটে এনে স্ত্রীকে দিয়ে বললাম রান্না করতে। তখনই আপনার ছেলে এলো। কিন্তু আমরা না হয় ক্ষুধার তাড়নায় মরা ছাগলের মাংস খেতে বাধ্য হচ্ছি, আপনার ছেলেকে তো তা খাওয়াতে পারি না।
শুনে আহমেদ আশফাক দুঃখে-অনুতাপে-সমবেদনায় কিছুক্ষণ কোনো কথাই বলতে পারলেন না। এরপর তার চোখ ফেটে পানি এলো। প্রতিবেশীকে জড়িয়ে ধরে বললেন, ভাই আমার! এত কষ্ট নিয়ে তুমি আছো! আমাকে তো একটু জানাতে পারতে। দৌড়ে গেলেন বাড়িতে। এক ঝটকায় তুলে নিলেন টাকার সেই থলেটা, ৪০ বছর ধরে যাতে তিনি জমাচ্ছিলেন হজে যাওয়ার রসদ। প্রতিবেশীর হাতে দিয়ে বললেন, এই নাও আমার ৪০ বছরের সঞ্চয়। এটা দিয়ে কোনো ব্যবসা শুরু কর। হজে যাওয়ার চেয়েও তোমার দুঃখমোচন আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। ভাগ্যে থাকলে পরে হজ করবো।
বাস্তবে হজে না গেলেও স্রষ্টার ইচ্ছায় সে বছর তার হজই কবুল হলো সর্বপ্রথম। অর্থাৎ পাচুর্য, তা বৈষয়িক বা আত্মিক-উভয় ক্ষেত্রেই দানের মাধ্যমে সমৃদ্ধ হয়। কারণ সূরা সাবার ৩৯ আয়াতে আল্লাহ বলছেন, তুমি যা দান করবে আমি এর প্রতিদান অবশ্যই দেবো।
সূরা বাকারার ২৭৪ আয়াতে বলা হয়েছে, যারা তাদের উপার্জন থেকে দিনে বা রাতে, প্রকাশ্যে বা গোপনে দান করে তাদের জন্যে পুরস্কার রয়েছে। তাদের কোনো ভয় বা পেরেশানি থাকবে না।
একে//এসএইচ/