ঢাকা, শনিবার   ১২ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

বিদ্যার অহঙ্কার ঈমান নষ্ট করে

প্রকাশিত : ২০:০১, ১৭ মে ২০১৯ | আপডেট: ২০:০৫, ১৭ মে ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

বিদ্যার্জনকে ইসলামে ফরজ করা হয়েছে। হুজুর পাক (সা:) বলেছেন, ‘বিদ্যার্জনের জন্য প্রয়োজন হলে সুদূর চীনে যাও।’ এটা পার্থিব বিদ্যা। অন্যদিকে ইলমে তাসাউফকেও ইসলামে বিরাট মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমি সে বিদ্যাকে অন্তঃসার শূন্য বলেছি যে বিদ্যা অহঙ্কারী, বিনয়ী নয়। বিদ্যার সাধারণ প্রবণতা হচ্ছে অহঙ্কার, ঔদ্ধত্য। আর জ্ঞানের সাধারণ প্রবণতা হচ্ছে বিনয়। সুতরাং বিদ্যার্জন করার সময় সে কথা মনে রাখতে হবে। সে জন্যই একটি হাদিসে বলা হয়েছে, প্রকৃত বিদ্বান হচ্ছেন তিনি যিনি সর্বদা আল্লাহর ভয়ে কম্পমান।

বিদ্যার একটা মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে সত্যের সন্ধান করা। বিদ্যা সব ধরনের সত্য অনুসন্ধান করার একটা সহায়ক শক্তি। কিন্তু সত্য বিকৃত হচ্ছে বিদ্বানের দ্বারা। এরা এদের গবেষণার মাধ্যমে সত্যের হাজারটা রূপ দাঁড় করাচ্ছে। রাজশক্তি যখন যেদিকে যায় তাদের ‘সত্য’ ও সেই মতো দিক পরিবর্তন করে। অথচ এরা সবাই সত্যের সন্ধানী এ জন্যই মহাকবি ইকবাল বলেছেন-

‘হাক্কিকত ছ্প নেহি সেকতি

বানাওয়াট কে উসুলোঁ সে

কে খুশবু আ নেহি সেকতি

কভি কাগজ কে ফুলোঁ সে।’

অর্থাৎ সত্যকে কখনও মিথ্যার নীতিবাক্যে আড়াল করা যায় না। যেমন কাগজের ফুল থেকে কখনো সুগন্ধ আসতে পারে না। তোমাদের তথা কথিত বিদ্বানদের অবস্থাটা ঐ কাগজের ফুলের মত। এরা কখনই সুবাস ছড়াতে পারে না। কারণ ওদের বিদ্যার মধ্যে সত্য প্রিয়তা নেই। নেই বিনয়ের মহত্ত্ব। আলেম সমাজকে আজকে এ কথাটি অতি গুরুত্বের সঙ্গে উপলব্ধি করতে হবে। ধর্মকে এরা বিদ্যার অহঙ্কারে কাগজের ফুলে পরিণত করেছেন। ফুলের জায়গায় ফুল আছে কিন্তু সুবাস নেই। এ সব আলেমরা পৃথিবীর যশ, বিত্ত, অর্থ এ সবই কামনা করে। ফলে বিদ্যার ইস্পিত ফজিলত এদের নসিব হয় না।

মানুষ জন্মগতভাবে পশুর চেয়ে কম কিন্তু ফেরেস্তার চেয়ে বেশী। তার জন্মের মধ্যেই রয়েছে পশুত্ব-সুতরাং নফসের বা প্রবৃত্তির তাড়না তার মধ্যে থাকবেই। কিন্তু মানুষ সবটাই প্রবৃত্তি নয়। তার মধ্যে ফেরেশতার খাসলতও আছে। সে জন্যই সে পশুর চেয়ে কম। অন্য দিকে ফেরেশতার এবাদতে কোন স্বাধীনতা নেই বলেই তার অর্জনও মানুষের চেয়ে কম অর্থাৎ প্রকৃত মানুষ ফেরেশতার চেয়ে বড়। মানুষের মধ্যে আল্লাহর ভয় না থাকলে তার পশুত্ব যেমন তার বিপদের কারণ হতে পারে তেমনি তার মালাকুতি স্বভাবও তার বিপদের কারণ হতে পারে। কেবল প্রবৃত্তির তাড়নায় চালিত হলে তার জীবন হবে পশুর চেয়েও অধম।

অন্যদিকে ভয় না থাকলে তার মহত্ত্বও তার বিপদ ডেকে আনবে। যেমন বিপদ হয়েছিল শয়তানের। শয়তানের মত এত এবাদত তো কেউ করেনি কিন্তু বিদ্যার অহঙ্কার তাকে চিরকালের মতো আল্লাহ রহমতের ছায়া থেকে সরিয়ে দিলেন। সুতরাং আল্লাহর ভয় হচ্ছে সেই জিনিস যা তাকে চিরকালের মতো আল্লাহর রহমতের ছায়া থেকে সরিয়ে দিল। সুতরাং আল্লাহর ভয়ের সম্পর্কটা এখানেই।

আল্লাহর স্মরণই বিদ্বানের অহঙ্কারকে সংযত করে। বিদ্বান বুঝতে পারে তার সীমিত অনুভবের পরিধি কোথায়। সে জন্যই বলা হয়েছে যারা শুধু শিখলো তাসাউফ শিখলো না তারা ফাসেক-যারা শুধু তাসাউফ শিখলো কিন্তু ইলম শিখলো না তারা জেন্দিক। কিন্তু যারা দুটোই অর্জন করবে তারাই হবেন মোহাক্কিক বা সত্যিকারের জ্ঞানী বা সিদ্ধ পুরুষ।

আমাদের সমাজে আজ আলেম আছে কিন্তু আমল নেই। আলম এবং ইলম যতক্ষণ বিন্দুতে না এসে মিশবে ততক্ষণ বিদ্যার কোন বরকত হবে না। সে জন্যই হুজুর পাক (সা:) বিদায় হজ্বের ভাষণে বলেছেন, তোমরা দুটো জিনিসকে আঁকড়ে থাকবে। আল কুরআন এবং আল হাদিস। অন্যত্র বলা হয়েছে, আমার আহলে বায়েতের তোমরা অনুসরণ করবে। আজ আমাদের মধ্যে নকলের ভীড়ে আসল হারিয়ে যাচ্ছে। এই যামানায় তাই ঈমান ঠিক রাখা দায় হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় যা তোমাকে প্রদীপের মত পথ দেখাতে পারে তা হচ্ছে আল্লাহ এবং রাসূলের (সা:) মহব্বত। এই মহব্বত থাকলেই দেখবে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না।

সূত্র : হযরত সৈয়দ রশীদ আহমদ জৌনপুরি’র (রহ) সংলাপ সমগ্র বই থেকে সংগৃহীত।


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি