ঢাকা, শনিবার   ১২ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

আল্লাহ সব সৃষ্টিকে নির্দিষ্ট কাজ দিয়েছেন

প্রকাশিত : ১৮:০৭, ২০ মে ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

আল্লাহ সব সৃষ্টিকে নির্দিষ্ট কাজ দিয়েছেন। ফেরেশতাদের যার যার কাজ নির্ধারিত। যিনি দাঁড়িয়ে আছেন তিনি অনন্তকাল ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। যিনি বসে আছেন তিনি অনন্তকাল ধরে বসে আছেন। কিন্তু মানুষকে তিনি স্বাধীনতা দিয়েছেন, ইচ্ছার স্বাধীনতা। সুতরাং মানুষের মধ্যে দুটি সত্তা বিরাজমান-একটি তার দেহ-নির্ভর নফস বা প্রবৃত্তি, অন্যটি তার মধ্যে আল্লাহর যাতের একটি অংশ।

একটির প্রবণতা হচ্ছে মঙ্গল, সত্য এবং সুন্দরের দিকে। অন্যটির প্রবণতা হচ্ছে পশু প্রবৃত্তির দিকে যা তাকে সহজে আকর্ষণ করে। এ দুয়ের মাঝে তার বিবেক স্থাপিত একটি প্রদীপের মত। সে প্রদীপ তাকে কোনদিন আলো দেখাবে সেটা নির্ভর করবে তার নিজস্ব প্রকৃতি বা স্বভাবের উপর। তার দেহ যে চারটি আনাসির বা উপাদান দিয়ে তৈরি তার উপর।

 মানুষকে আল্লাহ তিনটি ক্ষমতা দিয়েছেন-

ক. চরম মঙ্গল অর্জনের ক্ষমতা।

খ. চরম অমঙ্গলের ক্ষমতা।

গ. মঙ্গল ও অমঙ্গলের তারতম্য বুঝতে পারার ক্ষমতা।

মানুষের মধ্যে দুটি সত্তা রয়েছে: একটি মানবিক সত্তা, অন্যটি পশু সত্তা। মানুষের প্রকৃতিতে পশুসত্তাই প্রবল। চারটি আনাসির বা এলিমেন্ট দিয়ে মানুষের দেহ তৈরি: আগুন, হাওয়া, মাটি ও পানি। এর অনুপাত অনুসারেই মানুষের প্রকৃতি নির্ধারিত হয়। মনে রাখতে হবে যে, এই আনাসিরের মধ্যে মাটি ছাড়া অন্য তিনটি মানুষের জন্য ক্ষতিকারক। এই ক্ষতিকারক দিকগুলেকে নিয়ন্ত্রণ করে মানবতার বিকাশ ঘটানোর নামই আধ্যাত্মিক সাধনা।

মানুষের মধ্যে স্থিত মঙ্গল ও অমঙ্গলের দ্বন্দ্ব প্রতি পালের দ্বন্দ্ব। যে মানুষের কোন নিয়মন্ত্রণকারী শক্তি নেই সে মানুষ যে কোন মুহূর্তে বিভ্রান্ত হতে পারে। সেটা নারীর প্রতি আসক্তি হতে পারে। অর্থবিত্তের লোভ হতে পারে। মানুষ পাপ থেকে বিরত থাকে- হয় ভয়ের জন্যে, তা না হলে ভালোবাসার জন্য। এ জন্যই বলা হয়েছে ঈমানের স্থান হচ্ছে ভয় এবং ভালোবাসার মাঝাখানে।

জীবনকে সম্পূর্ণভাবে হালাল পথে উপভোগ করতে হবে। যার যার হক পূরণ করতে হবে। খাওয়া-দাওয়া, অর্থ উপার্জন, আনন্দ সবই করবে-একজন মুসলমানের জন্য এ সবই এবাদত। কিন্তু মুমিন মনে রাখবে এর মধ্যে সে নিমজ্জিত হবে না। তার নৌকা চলবে জীবন নামক সমুদ্রে কিন্তু তার নৌকায় পানি উঠবে না। ভগবত গীতায় একেই বলা হয়েছে নিষ্কাম কর্ম। মানুষ কাজ করবে কিন্তু ফলাফলের প্রত্যাশা করবে না।

কথা হচ্ছে জীবনের কোন কাজেই কোন মোহ থাকবে না। মোহ মানুষকে অন্ধ করে দেয়। উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত করে দেয়। জীবনকে সত্যিকার অর্থে অর্থহীন করে দেয়।

প্রত্যেক জিনিসই তার মূলের দিকে প্রত্যাবর্তন করে। মানুষের শরীর যে উপাদান বা আনাসির দিয়ে তৈরি সেগুলো তাদের নিজ নিজ সত্তায় বিলীন হয়ে যায়। মাটি মাটিতে মিশে যায়, আগুন আগুনে মিশে যায়, হাওয়া হাওয়ায় মিশে যায়, পানি মিশে যায় পানিতে। কিন্তু তার মধ্যে যে ‘আমরে রাব্বি’ আল্লাহর হুকুম হয়ে তার রুহে অবস্থান করছিল সেটা কোথায় যায়? সেটাও ফিরে যায় তার মূলে। মূলে ফিরে যাওয়া ছাড়া জীবনের আর কোন উদ্দেশ্য থাকতে পারে? নাকি থাকা উচিৎ?

মুসলমানের যখন জন্ম হয় তখন আজান দেওয়া হয়। শিশুর কানে সে আজানের ধ্বনি শোনানো হয়। সে শিশু জীবনের শেষে যখন মৃত্যুবরণ করে তখন তাকে দাফন করার আগে একটা নামাজ হয়, জানাযার নামায। কিন্তু এ নামাজের কোন আজান হয় না। অর্থাৎ মানব জীবন হচ্ছে একটি আজান থেকে নামাজ শুরু হওয়া পর্যন্ত  একটা সংক্ষিপ্ত সময়। এ সময় আমরা কিভাবে ব্যবহার করবো আমরাই জানি। কিন্তু আমাদের রব বলেছেন, ‘আমি জ্বিন ও ইনসানকে সৃষ্টি করেছি আমার এবাদতের জন্য।’ আমাদের গোড়াতেই একটা অঙ্গিকার রয়েছে। সে কথা মানুষ বিস্মৃত হয়। কিন্তু যিনি সত্যিকারের মানুষ তিনি জানেন দেহকে নির্ভর করে যে ‘আমি’ প্রতিনিয়ত আমিত্বের আস্ফলন করে সে ‘আমি’ কোনদিনই মূলে প্রত্যাবর্তন করবে না। তাই তার অন্তহীন প্রয়াস হচ্ছে তার নিজের মধ্যে সেই ‘বৃহৎ আমি’কে জাগিয়ে তোলা।

পথ তো যার যার নির্দিষ্ট, কিন্তু গাছের ফুল ফল বীজের দিকে, বীজকে আমরা মাটির নচে পুঁতে দেই। সে বীজ যতক্ষণ পর্যন্ত পচে গিয়ে নিঃশেষে মাটির সঙ্গে না মিশে ততক্ষণ পর্যন্ত নতুন জীবনের অংকুর উদগম হয় না। ক্ষুদ্র আমিত্বকে নিঃশেষে বিসর্জন দেবার পরই ‘বৃহৎ আমি’ এসে স্থান করে নেয়। বোতলে পানি ভরলে বাতাস বের হয়ে যায়। পানি আর বাতাস যেমন একই পাত্রে একই সাথে অবস্থান করতে পারে না তেমনি ক্ষুদ্র ‘আমি’ এবং ‘বৃহৎ আমি’ একসঙ্গে থাকতে পারে না। এজন্যই সব শাস্ত্রেই বলে ‘নিজেকে জান’, ‘নো দাইসেলফ’ বা ‘আত্মানং বিদ্ধ’। এমনভাবে যখন মানুষ জীবনকে দেখতে শেখে তাখন প্রতিটি মানুষের মধ্যে সে নিজেকেই দেখতে পায়।

এ জন্যই কোরআনুল করিমে বলা হয়েছে, যারা ইহকালে অন্ধ তার পরকালেও অন্ধ হয়ে উঠবে। যে স্বেচ্ছায় অন্ধত্বকে বরণ করে তার স্বেচ্ছাচারিতার দায় দায়িত্ব তার প্রভু নেবেন কেন। এ জন্যই রয়েছে বেহেশত ও দোজখ। কিন্তু যে মানুষ পুরুষোত্তমের সাধনায় নিমগ্ন সে কিন্তু বেহেশত দোজখ নিয়ে মাথা ঘামায় না। তার প্রেমাস্পদ যেখানে রয়েছে সেটাই তার দোজখ। তার বেহেশত দোজখের শুরুও এখান থেকেই। এখন চোখ খুলে পৃথিবীর দিকে তাকাও, দেখবে মানুষ নিজেকে নিয়েই ব্যস্ত। পশুত্বের সব চিহ্ন তার স্বভাবে। কেউ হায়েনার মত হিংস্র, কেউ শিয়ালের মত ধূর্ত। এই মানুষের সঙ্গে পশুর তফাৎ কোথায়? এদের মুখে কোরআন হাদিস থাকতে পারে। এরা চেহারা সুরতে ধার্মিক হতে পারে কিন্তু এদের সেজদায় কখনো ‘মেরাজ’ হবে না। আজকের এই সমাজে এদে সংখ্যাই বেশি। এদের মধ্যে পরিচ্ছন্নতা হয়তো আছে কিন্তু পবিত্রতা নেই।

তথ্যসূত্র: হযরত সৈয়দ রশীদ আহমদ জৌনপুরির (রহ) এর ‘সংলাপ সমস্র’ বই থেকে সংগৃহীত।

 

এমএস// এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি