ঢাকা, শুক্রবার   ১১ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

কোরআনে বর্ণিত জুলকারনাইন কে ছিলেন?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৪০, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

Ekushey Television Ltd.

জুলকারনাইন কুরআনে উল্লিখিত একজন ব্যক্তি। কুরআনের সূরা কাহাফ্-এ জুলকারনাইন নামটি উল্লিখিত আছে। এই জুলকারনাইন কে এবং কোন যুগে ছিলেন—এ বিষয়ে তাফসিরবিদরা একমত হতে পারেননি। প্রাচীন তাফসিরবিদদের মধ্যে ইমাম রাজি (রহ.)-এর মতে, জুলকারনাইনের প্রকৃত নাম সিকান্দার, যিনি আলেকজান্ডার নামে পরিচিত। তিনি দারা ইবনে দারাকে একাধিকবার পরাজিত করেছেন।

কুরআনের তাফসিরকারীদের কারো কারো মতে তিনি একজন নবী ছিলেন। অন্যপক্ষে, প্রাচীনকালে আরব উপদ্বীপে জুলকারনাইন নামটি পরিচিত ছিল অল্প বয়সী উচ্চ ক্ষমতাধর একজন শাসক হিসেবে। 

জুলকারনইন শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল ‘দুই শিং বিশিষ্ট’। কুরআন শরীফের সূরা কাহাফের আয়াত নম্বর ৮৩-১০১ অংশে জুলকারনাইন সম্পর্কিত বর্ণনা আছে। নবী হিসেবে জুলকারনাইনের নাম উল্লেখ নেই যদিও কিন্তু তিনি নবী ছিলেন না এমনটিও বলা হয়নি। বলা হয়েছে যে, আল্লাহ তাকে সব বিষয়ে পথনির্দেশ বা দিকনির্দেশ অথবা কার্যপোকরণ দিয়েছেন। তিনি এরপর দুটি পথ অনুসরণ করেন। এর মধ্যে এক পথে গিয়ে তিনি ইয়াজুজ মাজুজের হাতে অত্যাচারিত এক জাতির দেখা পান। তিনি তাদের জন্য গলিত তামার তৈরি একটি প্রাচীর বানিয়ে দেন। সূরা কাহাফ ৮৩-৮৬ নম্বর আয়াতে নিম্নরূপ বর্ণিত আছে-

‘তারা আপনাকে জুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। বলুন, আমি তোমাদের কাছে তার কিছু অবস্থা বর্ণনা করব।

আমি তাকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত করেছিলাম এবং প্রত্যেক বিষয়ের কার্যোপকরণ দান করেছিলাম। অতঃপর তিনি এক কার্যোপকরণ অবলম্বন করলেন। অবশেষে তিনি যখন সূর্যের অস্তাচলে পৌঁছালেন; তখন তিনি সূর্যকে এক পঙ্কিল জলাশয়ে অস্ত যেতে দেখলেন এবং তিনি সেখানে এক সম্প্রদায়কে দেখতে পেলেন। আমি বললাম, হে যুলকারনাইন! আপনি তাদেরকে শাস্তি দিতে পারেন অথবা তাদেরকে সদয়ভাবে গ্রহণ করতে পারেন।’

জুলকারনইন পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে বেড়াতেন নির্যাতিত, বঞ্চিত, শাসকের হাতে শোষিত লোকদের মুক্তি দিতেন। কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী অরুণাচলে, যেখান থেকে সূর্য উদিত হয় সেখানে ইয়াজুজ, মাজুজের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করার জন্য দেয়াল তুলে দিয়েছিলেন জুলকারণাইন। আর সে স্থানটি পাহাড়ের প্রাচীরের মাঝখানে। সূরা কাহাফের ৯৩ হতে ৯৮ নম্বর আয়াতে জুলকারনাইনের এই প্রাচীর নির্মাণের উল্লেখ আছে। ধারণা করা হয় এই জাতি ধাতুর ব্যবহার জানত। তারা হাপর বা ফুঁক নল দ্বারা বায়ু প্রবাহ চালনা করে ধাতুকে উত্তপ্ত করে গলাতে পারত এবং তারা লোহার পিণ্ড ও গলিত তামাও তৈরি করতে পারত। জুলকারনাইন তাদের প্রতিরোধ প্রাচীর তৈরি করার জন্য উপাদান ও শ্রম সরবরাহ করতে বললেন। তারা নিজেরাই জুলকারনাইনের আদেশ মতো দুই পর্বতের মাঝে শক্ত লোহার প্রাচীর বা দ্বার তৈরি করলো। আধুনিক যুগের গবেষক ও পণ্ডিতদের মতে, কুরআনে উল্লিখিত জুলকারনাইনের মাধ্যমে ঐতিহাসিক সম্ভাব্য ৩ টি চরিত্র নির্দেশ করা হতে পারে। তারা হলেন- আলেকজান্ডার, সাইরাস দি গ্রেট এবং হিমায়ার সাম্রাজ্যের একজন শাসক। 

জুলকারনাইনের প্রাচীরটির সঠিক অবস্থান জানা যায়নি। এ সম্পর্কে নানা মতবাদ প্রচলিত। একটি মতবাদ অনুসারে, কুরআনের বর্ণনা অনুযায়ী অরুণাচলে, যেখান থেকে সূর্য উদিত হয় সেখানে ইয়াজুজ, মাজুজের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করার জন্য দেয়াল তুলে দিয়েছিলেন জুলকারনাইন। আর সে স্থানটি পাহাড়ের প্রাচীরের মাঝখানে। এই বর্ণনার সাথে মিলে যায় এমন একটি দেয়াল রয়েছে কাসপিয়ান সাগর উপকূলে। 

ইতিহাসবিদদের দ্বারা স্বীকৃত যে এ দেয়াল তৈরি করেছিলেন আলেকজান্ডার। যা তৈরি করতে লোহা ও তামা ব্যবহৃত হয়েছে। সেখানে একটি তোরণ রয়েছে যেটি ‘কাসপিয়ান গেট’ বা আলেকজান্ডারের গেট নামে পরিচিত। দারিয়াল এবং দারবেন্ত নামে দুটি শহরে এর ব্যাপ্তি। দারিয়াল রাশিয়া এবং জর্জিয়ার সীমান্তে অবস্থিত। এটিকে বলা হয় কাজবেক পাহাড়ের পূর্ব প্রান্ত। দারবেন্ত রাশিয়ার দক্ষিণে অবস্থিত একটি শহর। কাসপিয়ান সাগরের দক্ষিণপূর্ব উপকূলে নির্মিত এ দেয়ালটি তোলা হয়েছে দুটি পাহাড়ের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানে। এ পাহাড় দুটিকে বলা হয় পৃথিবীর উঠান। আলেকজান্ডার নির্মিত এ দেয়ালের উচ্চতা ২০ মিটার এবং এটি ৩ মিটার (১০ ফুট) পুরু।

একে//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি