ঢাকা, শুক্রবার   ০৮ নভেম্বর ২০২৪

রমজানে যেভাবে আসবে আত্মশুদ্ধি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:০৯, ৪ মার্চ ২০২৪

বছরের অন্য মাসগুলোর চেয়ে রমজান মাসের মহিমা অনেক বেশি। কারণ এ-মাসে নাজিল হয়েছে পবিত্র কোরআন। আত্মশুদ্ধির মাস হিসেবে সমধিক পরিচিত এই মাস। আল্লাহর রহমত ও বরকতে ধন্য এই মাস আমাদের জন্য আত্মিক পরিশুদ্ধি অর্জনের দারুণ একটা উপলক্ষ।

রমজানে কীভাবে আত্মিকভাবে ফিট হওয়া যায় সে ব্যাপারে কোরআন এবং হাদীসে রয়েছে সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা।

আল্লাহ বলেন, হে বিশ্বাসীগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন করা হয়েছিল তোমাদের পূর্বসূরিদের ওপর। যাতে তোমরা আল্লাহ-সচেতন থাকতে পারো। (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৩)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) ও আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে, রোজা রাখো, যাতে তোমরা সুস্থ থাকতে পারো। (তাবারানী)

তিরমিজী শরিফে সুফিয়ান সাওরী (র) হতে বর্ণিত হয়েছে, রোজা সবরের অর্ধেক। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা-পবিত্রতা ঈমানের অর্ধেক।

ইবনে মাজাহ'তে আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে, সবকিছুর জন্যেই যাকাত (শুদ্ধি প্রক্রিয়া) রয়েছে। শরীরের যাকাত হচ্ছে রোজা।

বোখারী ও মুসলিম শরীফে আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসে কুদসিতে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ বলেন, মানুষের প্রতিটি আমল বা কাজ হচ্ছে তার নিজের জন্যে। আর রোজা হচ্ছে কেবল আমার জন্যে। (আমার জন্যেই সে খাবার ও পানীয় গ্রহণ থেকে বিরত থাকে এবং যৌন কামনা-বাসনাকে সংযত করে।) তাই রোজার পুরস্কার আমিই তাকে দেবো। রোজা হচ্ছে (পাপাচার ও জাহান্নামের আগুনের বিরুদ্ধে) বর্ম। অতএব তোমরা যখনই রোজা রাখো, তখন ফালতু আজেবাজে অপ্রয়োজনীয় কথা বলবে না, চেঁচামেচি করবে না। কেউ গালি দিলে বা ঝগড়া করতে এলে বলবে, আমি রোজাদার। রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মৃগনাভির (বিশেষ সুগন্ধি) গন্ধের চেয়েও পছন্দনীয়। রোজাদার দুটি আনন্দ লাভ করে। প্রথমত, ইফতারের সময়। দ্বিতীয় আনন্দ লাভ করবে—যখন সে তার প্রতিপালকের সাথে মিলিত হবে।

মুসলিম শরীফে আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, মানুষের প্রত্যেকটি সৎকর্মের নেকি আল্লাহ গুণিতক করেন। ১০ থেকে ৭০০ গুণ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি দান করেন। আর রোজার নেকি আল্লাহ নিজে দেবেন, কোনো সীমা ছাড়া, তাঁর ইচ্ছানুসারে।

তিরমিজী শরীফে আনাস ইবনে মালেক (রা) থেকে বর্ণিত হয়েছে রমজানে দান শ্রেষ্ঠ দান।

বোখারী, মুসলিম-এ আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আত্মশুদ্ধির নিয়তে যে রমজান মাসে রোজা রাখে, তার অতীতের সব গুনাহ মাফ হয়ে যায়।

কোরআনের জ্ঞান অর্জন এমনিতেই সকলের জন্য ফরজ। তাছাড়া কোরআন নাজিলের কারণেই যেহেতু রমজান মাসের মহিমা বেড়েছে, তাই পুরো মাসজুড়ে সময় দিতে হবে কোরআনের জ্ঞান অর্জনের জন্যে। আরবির পাশাপাশি জানতে হবে পবিত্র কোরআনের বাংলা অর্থও।

পবিত্র রমজানে আল কোরআন বাংলা মর্মবাণী পড়ুন নিয়মিত। আপনার অনুভূতির স্তরে আসবে নতুন উপলব্ধি। কোরআনের জ্ঞানে জ্ঞানী হবেন আপনি। শুধু আত্মিক ফিটনেসই না, এ জ্ঞান আপনাকে উপহার দেবে টোটাল ফিটনেস!

হাদীস হলো কোরআনের শিক্ষার ফলিত রূপ। তাই কোরআন বুঝতে হলে হাদীসের জ্ঞান জরুরি।

রমজানজুড়ে হাদীসের বাংলা অর্থ পড়ুন বেশি বেশি; ডুবে যান বাক্যের গভীরে। আপনি পাবেন পথের দিশা। জীবনের বাঁক বদলাবে। আপনার উত্তরণ ঘটবে উচ্চতর মানবে।

দানের জন্যে শ্রেষ্ঠ সময় হলো মাহে রমজান। কারণ রমজান মাসে দানের সওয়াব অন্য যে-কোনো মাসের চেয়ে ৭০ গুণ বেশি!

অন্যদিকে, রুপার বাজারদর হিসাবে এক চান্দ্রবছর জমা থাকলে আপনাকে যাকাত দিতে হবে। মাহে রমজান যাকাত প্রদানেরও সেরা সময়। সঙ্ঘবদ্ধ দান ও যাকাত প্রদান করুন।

রমজান মাসের বিশেষ অনুষঙ্গ তারাবিহ সালাত। নবীজীর (স) সুন্নত হিসেবে সচেষ্ট হোন তারাবিহ নামাজ আদায়ে।

নবীজী (স) বলেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানে দিনে রোজা পালন করবে ও রাতে তারাবিহ সালাত আদায় করবে, সে গুনাহ থেকে এরূপ পবিত্র হবে, যেরূপ নবজাতক শিশু মাতৃগর্ভ থেকে নিষ্পাপ অবস্থায় ভূমিষ্ঠ হয়। (সুনানে নাসাঈ)

তাহাজ্জুদের সালাত রাতের শেষ তৃতীয়াংশে পড়া উত্তম। এ সালাতের রাকাত সংখ্যা সর্বনিম্ন দুই, সর্বোচ্চ বারো।

আবু হুরায়রা (রা) বলেন, নবীজী (স) বলেছেন, ফরজ সালাতের পর সব নফল সালাতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হলো তাহাজ্জুদ সালাত তথা রাতের সালাত। (মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ)

তাহাজ্জুদ আদায়ের জন্যে ঘুম থেকে ওঠা অনেকের জন্যেই চ্যালেঞ্জিং। তবে রমজান মাসে সেহরি গ্রহণের জন্যে যেহেতু উঠতেই হয়, আরেকটু আগে উঠে আপনি অনায়াসে তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করতে পারবেন। আত্মিক ফিটনেস অর্জনের অপূর্ব সুযোগ এই আমল।

রসজানে আপনি এতেকাফে বসতে পারেন। এতেকাফ প্রত্যেক বিশ্বাসীর জন্যে জরুরী। নবীজী (সা) রমজানের শেষ দশকে এতেকাফ করেছেন এবং এতেকাফ করতে বলেছেন।

এতেকাফ করলে আপনার জীবনাচরণ পরিবর্তন হয়ে যাবে, আপনার জীবন আল্লাহর রহমত বরকতে পূর্ণ হয়ে যাবে।

পবিত্র রজনী কদর খোঁজার জন্যে যে ইবাদত আমরা করি আল্লাহ তা এত পছন্দ করেন যে স্বয়ং নবীজীর (স) কাছেও তিনি শবে কদরের নির্দিষ্ট দিন প্রকাশ করেন নি।

নবীজী (স) বলেছেন, রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে তোমরা লাইলাতুল কদর খুঁজবে।

শবে কদরের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম। কদরের রাত যেহেতু রমজানের শেষ দশকে লুকায়িত আছে তাই হিসেব করে বেজোড় রাত্রগুলোতে আপনি নৈশায়ন তথা ইবাদতের মধ্যদিয়ে রাত্রি যাপনের জন্যে বাছাই করে নিতে পারেন।

শুধু পানাহার বর্জন করাই রোজা নয়। নবীজী (স) বলছেন, প্রকৃত রোজা হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় কথা, ঝগড়া-ফাসাদ, তর্ক-বিতর্ক, অশ্লীল-খারাপ আচরণ ইত্যাদি যাবতীয় গুনাহর কাজ থেকে বেঁচে থাকা।

রমজান মাসে আমরা যদি অপ্রয়োজনীয় কথা, গীবত, পরনিন্দা, পরচর্চা থেকে মুক্ত থাকি; তর্ক-বিতর্ক এড়িয়ে চলি, প্রতিক্রিয়াশীল না হই, তাহলে আমাদের আত্মিক শক্তি জাগ্রত হবে। জৈবিকতার শৃঙ্খল তথা লোভ লালসা রাগ-ক্ষোভ ঘৃণা হিংসা বিদ্বেষ থেকে মুক্ত হয়ে আমরা অর্জন করবো আত্মিক ফিটনেস।

এমএম//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি