ঢাকা, রবিবার   ০৯ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

মাহে রমজানে দানের হাত বাড়িয়ে দিন 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:৫৬, ১২ মার্চ ২০২৪ | আপডেট: ১৭:০১, ১২ মার্চ ২০২৪

Ekushey Television Ltd.

মাহে রমজান মুসলিম উম্মাহর জন্য অধিক মর্যাদাশীল ও বরকতময় মাস। এ মাসে বান্দা যত আমল করবে তার পরকালীন ভাণ্ডার ততই সমৃদ্ধ হবে। রমজানের অন্যতম আমল হলো দান-সদকা। রমজানে প্রতিটি ভালো কাজের নেকি ৭০ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে এ মাসে যত বেশি দান-সদকা করা যাবে, তা বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। মাহে রমজানে হজরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আমলগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, রমজান এলে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দানের মাত্রা বাড়িয়ে দিতেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘রমজান এলে হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) দানের হাতকে আরও বেশি প্রসারিত করে দিতেন।’  

রমজান মাসে একটি নফল আমল ফরজের মর্যাদায় সিক্ত। সে হিসেবে রমজান মাসে আমাদের প্রতিটি দান-সদকাই ফরজ হিসেবে আল্লাহতায়ালার কাছে গণ্য। দান-সদকার এমন ঈর্ষণীয় ফজিলত অন্যান্য মাসে কখনোই পাওয়া যাবে না। শুধু রমজানেই এই অফার সীমাবদ্ধ।

হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, হজরত মোহাম্মদ (সা.)-এর দানের হাত এতটা প্রসারিত ছিল যে, সকালবেলা যদি উহুদ পরিমাণ সম্পদও রাসুল (সা.)-এর কাছে রাখা হয়, আমার মনে হয়, মাগরিব আসার আগেই তিনি সব দান করে শেষ করে ফেলবেন। সহিহ্ বোখারি ও মুসলিম। 

রমজানে রোজা পালন মানুষকে দানশীলতা, বদান্যতা, উদারতা ও মহত্ত্বের শিক্ষা দেয়। কোনো প্রকার অপচয় না করে রোজার মাসে মানুষের সেবায় দান-সাদকা করলে অভাবক্লিষ্ট মানুষের কল্যাণ হয় এবং মানবতা উপকৃত হয়। দান কত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটা আমরা অধিকাংশ মানুষই বুঝি না। দান মানেটা কী? আপনার যা আছে যা আপনি নিজে ব্যয় করার পরেও সেখান থেকে মানুষের জন্যে দেয়া, মানুষের জন্যে ব্যয় করাই দান। কারণ আপনি যা পেয়েছেন এটা স্রষ্টার অনুগ্রহ।

সূরা কাসাসের ৭৭ নম্বর আয়াত হচ্ছে, আল্লাহ যেমন তোমার প্রতি অনুগ্রহ করেছেন তেমনি তুমিও মানুষের উপকার করো। রমজানের রোজা অনুভব করায় ক্ষুধার্ত ও বঞ্চিত মানুষের কষ্ট। শিক্ষা দেয় মিতব্যয়িতার। ভোগ নয়, ত্যাগের আদর্শে আমাদের উদ্দীপ্ত করে। 

দানের ব্যাপারে অনেকগুলো হাদিস রয়েছে। আজ আমরা কিছু হাদিস উল্লেখ করলাম। 

১. প্রত্যেকটি ভালো কাজই সৎকর্ম, সাদাকা বা দান বা সেবা।
- জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা); বোখারী, মুসলিম

২. সাদাকা বা দান বা অন্যের সেবা হচ্ছে ঈমানের প্রমাণ।
- আবু মালেক আশয়ারী (রা); মুসলিম, নববী

৩. মহাবিচার দিবসে তোমাদের প্রত্যেকের সাথেই তার প্রতিপালক কথা বলবেন। এই কথাবার্তায় কোনো দোভাষী থাকবে না। যখন ডানে তাকাবে, তুমি তখন তোমার অতীত ভালো কাজ দেখতে পাবে। বামে তাকালে তুমি তোমার অতীত মন্দ কাজ দেখবে। আর সামনে দেখবে জাহান্নামের লেলিহান আগুন।- আদী ইবনে হাতিম (রা); বোখারী, মুসলিম

৪. আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে দান করলে সেই সাদাকা বা দান গ্রহীতার হাতে পৌঁছার আগেই আল্লাহর কাছে পৌঁছে যায়।- তাবারানী

৫. নিজের প্রিয় ও পছন্দনীয় জিনিস থেকে দানই উত্তম দান।- আনাস ইবনে মালেক (রা); বোখারী, মুসলিম

৬. সর্বোত্তম দান হচ্ছে নিজের শ্রম দ্বারা অর্জিত অর্থ থেকে সাধ্যমতো দান করা।- আবু হুরায়রা (রা); বোখারী

৭. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যে তুমি যা ব্যয় করবে, তোমাকে তার পুরস্কার দেয়া হবে, এমনকি স্ত্রীর মুখে এক লোকমা আহার তুলে দিলেও।- সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা); বোখারী, মুসলিম

৮. আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে নিজের পরিবার-পরিজনের জন্যে যা খরচ করা হয়, তা-ও দান বা সাদাকা হিসেবে গণ্য হবে।- আবু মাসউদ (রা); বোখারী, মুসলিম

৯. হালাল উপার্জন থেকে কেউ যদি একটি খেজুরের মূল্যের সমপরিমাণ দান করে, আল্লাহ তা দানকারীর জন্যে বৃদ্ধি করতে থাকেন। এই বৃদ্ধির উপমা হচ্ছে—তোমরা কেউ একটি বাছুর দিলে আল্লাহ তাকে বৃদ্ধি করে পরিণত করলেন পাহাড়সম শক্তিমান বৃষে।- আবু হুরায়রা (রা); বোখারী, মুসলিম

১০. তোমরা রোগ নিরাময়ের জন্যে সাদাকা দাও।- জামে উস-সগীর

১১. তোমরা ক্ষুধার্তকে খাবার দাও। রোগীর সেবা করো। (মনোজাগতিক শৃঙ্খলে বন্দিসহ) বন্দিদের মুক্ত করো।- আবু মুসা আশয়ারী (রা); বোখারী

১২. ক্ষুধার্তকে পেটপুরে খাওয়ানো উত্তম দান।-আনাস ইবনে মালেক (রা); মেশকাত

১৩. মৃত মায়ের জন্যে কোন দান উত্তম হবে? একজন সাহাবী প্রশ্ন করলেন। ‘পানি’—নবীজীর (স) উত্তর। [কূপ খনন, পুকুর-দীঘি, টিউবওয়েল বা পানি সরবরাহের ব্যবস্থা মৃতের জন্যে উত্তম সাদাকা।]- সাদ ইবনে উবাদা (রা); আবু দাউদ, নাসাঈ, মেশকাত

১৪. মৃত পিতামাতার নামে দান উত্তম সাদাকা। [মৃত পিতামাতার নামে বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহের ব্যবস্থা উত্তম সাদাকা। তাদের নামে কোরআনের জ্ঞান বিতরণও সদকায়ে জারিয়া।- আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা); বোখারী, তিরমিজী

১৫. নবীজীর (স) কাছে একজন জানতে চাইলেন, ‘আমার মা হঠাৎ মারা যান। আমার মনে হচ্ছে, তিনি যদি মৃত্যুর আগে বলে যেতে পারতেন, তাহলে দান করার কথা বলতেন। এখন আমি যদি তার পক্ষ থেকে দান করি, তবে কি তিনি এর সওয়াব পাবেন?’ নবীজী (স) স্পষ্ট উত্তর দিলেন, ‘হাঁ! অবশ্যই - আয়েশা (রা); বোখারী, মুসলিম

১৬. দাতার হাত গ্রহীতার হাতের চেয়ে উত্তম। উদারতা শুরু করো নির্ভরশীলদের দান করে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ থেকে দান করা উত্তম সাদাকা। - হাকিম ইবনে হিজাম (রা), আবু হুরায়রা (রা); বোখারী, নাসাঈ

১৭. তুমি যদি এত গোপনে দান করো যে, তোমার বাম হাতও জানে না—ডান হাত কী দিয়েছে, তাহলে মহাবিচার দিবসে তুমি আরশের ছায়ায় থাকবে। - আবু হুরায়রা (রা); বোখারী, মুসলিম, আশকালানী

১৮. সততার সাথে দান সংগ্রহকারী ও দান বিতরণকারী দাতার মতোই সমভাবে পুরস্কৃত হবে। (দান সংগ্রহ ও বিতরণ ব্যবস্থাপনা উত্তম সাদাকা।) - আবু মুসা আশয়ারী (রা); বোখারী, মুসলিম

১৯. নীরব ও গোপন দান আল্লাহর গজব থেকে রক্ষা করে।- আনাস ইবনে মালেক (রা); মেশকাত

২০. দান ও সাদাকায় (প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে) বাধা দান বা নিরুৎসাহিতকারীর ওপর লানত।- আলী ইবনে আবু তালিব (রা); নাসাঈ, মেশকাত

২১. দান করে কখনো তা ফেরত নেবে না। তোমার দান করা জিনিস যদি গ্রহীতা স্বেচ্ছায়ও তোমার কাছে বিক্রি করতে চায়, তবুও তা কিনবে না। এটাও দান ফেরত নেয়ার সমান। আর যে তা করবে, সে যেন নিজের বমি নিজে খেলো।
-ওমর ইবনে খাত্তাব (রা); বোখারী, মুসলিম

২২. কৃপণ আবেদের চেয়ে নিরক্ষর দাতা আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়।- আবু হুরায়রা (রা); মেশকাত

২৩. প্রতিদিন সকালে দুজন ফেরেশতা অবতীর্ণ হন। একজন (সকালে যে দান করেছে এমন) দাতার জন্যে প্রার্থনা করেন : ‘হে আল্লাহ! দাতাকে সর্বোত্তম পুরস্কার দান করো।’ আর অন্যজন (দান করা থেকে বিরত কৃপণের জন্যে) প্রার্থনা করে : ‘হে আল্লাহ! কৃপণের ধন বিনষ্ট করো।’ - আবু হুরায়রা (রা); বোখারী, মুসলিম

২৪. আমাকে যদি ওহুদ পাহাড়ের সমপরিমাণ ওজনের সোনা দেয়া হয়, তবে তিন রাতের মধ্যেই আমি আনন্দিতচিত্তে সব দান করে দেবো।
- আবু হুরায়রা (রা); বোখারী, মুসলিম

২৫. আল্লাহ বলেন, ‘হে আদমসন্তান! কল্যাণার্থে ব্যয় করো, তোমাকেও সেভাবেই দেয়া হবে।’- আবু হুরায়রা (রা); বোখারী, মুসলিম

২৬. নারীদের উদ্দেশ্যে নবীজী (স) বলেন : ‘দান করো, দান করো।’ নারীরাই বেশি দান করেছিল।- আবু সাঈদ খুদরী (রা); মুসলিম, নাসাঈ

২৭. পানি যেভাবে আগুনকে নিভিয়ে ফেলে, দানও তেমনি পাপমোচন করে।- আনাস ইবনে মালেক (রা), মুয়াজ ইবনে জাবল (রা); তিরমিজী, ইবনে মাজাহ

২৮. প্রত্যেক দাতা মহাবিচার দিবসে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার সাদাকা বা দানের সুশীতল ছায়ার নিচে থাকবে।- আবু মাসউদ (রা); ইবনে হিব্বান, হাকেম, আশকালানী। 

সূত্র- হাদিস শরীফ বাংলা মর্মবাণী বই থেকে নেয়া। 
কেআই//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি