সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়টি সবচেয়ে হেলায় নষ্ট হয় যেভাবে!
প্রকাশিত : ১৫:৫৭, ১৪ মার্চ ২০২৪
দুনিয়ায় দেওয়া আল্লাহর অসংখ্য নেয়ামতের একটি হলো সময়। কোরআন-হাদিসের বিভিন্ন স্থানে এ নেয়ামতের যথার্থ মূল্যায়নের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কেননা, সময়ের যথাযথ মূল্যায়ন ও ব্যবস্থাপনা ছাড়া মানবসম্পদ উন্নয়ন সম্ভব নয়। ইসলামি শরিয়ত এ কারণে সময় ব্যবস্থাপনাকে মানবজীবনের গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করে।
কোরআনে কারিমে অনর্থক কাজে সময় ব্যয়ের বিষয়ে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এমনকি আল্লাহতায়ালা সময় বোঝানোর জন্য কোরআনে কারিমে অনেক প্রতিশব্দ ব্যবহার করে এর প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন।
বিশ্বাসীদের জন্যে রমজান ইবাদতের বসন্তকাল। এই বসন্তকে চিরস্থায়ী করে রমজানের শেষ দশক।
নবীজী (স) নির্দেশ দিয়েছেন, “তোমরা রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল-কদর খোঁজ করো”। (বোখারী)
হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, ‘যখন রমজানের শেষ ১০ রাত আসত, তখন নবীজী (স) বেশি বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন এবং রাত জেগে থাকতেন। আর পরিবার-পরিজনকেও তিনি জাগিয়ে দিতেন’। (বোখারী)
রমজানের যে সময়টা নিজের পরিত্রাণের জন্যে ব্যয় করার কথা সেই সময়টা আপনি হেলায় নষ্ট করছেন না তো?
রমজান শুধু পানাহার বর্জনের মাস নয়, রমজান আত্মশুদ্ধির মাস।
রোজা রেখে আপনি যেভাবে নিজের শরীরের বিষাণুগুলোকে বের করছেন, আপনার অন্তরও কিন্তু বিশ্বাসের শক্তিকে বলিয়ান হচ্ছে।
কিন্তু আপনি যদি দিনভর ঘুমান এবং ওয়েব সিরিজ, থ্রিলার মুভি কিংবা সোশাল মিডিয়ায় বুঁদ হয়ে থাকেন তাহলে আপনি রোজার নামে শুধু পানাহারই বর্জন করছেন।
ঈদের কেনাকাটায় শেষ ১০ দিন সময় ব্যয় করছেন এতেও আপনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময়টি নষ্ট করছেন।
রাত জেগে রেস্টুরেন্টে আড্ডা দিয়ে এবং গাল-গল্পের নামে গীবত অর্থাৎ অন্যের ছিদ্রান্বেষণে সময় কাটাচ্ছেন তখনও আপনি সময়ের অপব্যবহার করছেন।
ভরপেট সেহরি-ইফতার করাতেও রোজার মাহাত্ম্য বাড়ে না। ঈদের পর আপনার ওজন কমার বদলে যদি বাড়ে তাহলেও বুঝবেন সঠিকভাবে রমজানকে আপনি কাজে লাগান নি।
আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রোজাদার যদি মিথ্যাচার ও অশোভন কাজ পরিহার না করে, তবে তার পানাহার বর্জন আল্লাহর কাছে কোনো গুরুত্ব বহন করে না। (বোখারী)
রমজান মাসে কোরআন নাজিল হয়েছে বলেই রমজানের এত গুরুত্ব। অথচ এ মাসে কোরআনকে বোঝার বদলে কীভাবে তাড়াহুড়ো করে খতম দেয়া যায় কিংবা তারাবিতে দ্রুততার সাথে কোরআন পড়া যায় এরই প্রতিযোগিতাই দেখা যায়!
অনেকে স্ট্যাটাস বাড়াতে বা ভোজন-উৎসব করতে ইফতার ও সেহেরিতে সেলফি তোলে সোশাল মিডিয়াতে আত্মপ্রদর্শন নিয়ে ব্যস্ত। কিন্তু স্রষ্টার সন্তুষ্টি ব্যতীত আত্মপ্রদর্শনের উদ্দেশ্যে করা কাজ আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
আপনি জানেন না, এই রমজানই আপনার জীবনের শেষ রমজান কিনা! তাই যে দিনগুলো চলে গেছে তা নিয়ে না ভেবে এই শেষ দশকের করণীয়ের ব্যাপারে সচেতন হোন।
আয়েশা (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রসুল! আমি যদি কদরের রাত পেয়ে যাই, তাহলে কী দোয়া পড়ব? তিনি তাকে এই দোয়া শিক্ষা দেন যে, হে আল্লাহ, তুমি ক্ষমাকারী, তুমি ক্ষমা করতে ভালবাস। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করো। (ইবনে মাজাহ)
আমরা স্রষ্টার কাছ থেকে এসেছি এবং তার কাছেই ফিরে যেতে হবে। এই ফিরে যাওয়াটা যেন সুন্দর ও সফল হয় সেজন্যে পবিত্র কোরআন হোক আপনার জীবনের পথ-নির্দেশক।
এমএম//