ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

আল-কুরআনের বার্তা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:১০, ২৬ মার্চ ২০২৪

যদি আল-কুরআন গভীর মনোনিবেশ সহকারে অধ্যয়ন করেন তাহলে আপনার কাছে এই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে উঠবে যে, আল-কুরআন শুধু একটি বিষয় নিয়েই উদ্বিগ্ন। আর তা হলো—আপনাকে আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচানো। এটিই আল-কুরআনের প্রধান চিন্তার বিষয়। 

আল্লাহ এই দুনইয়ার জীবন তৈরী করেছেন। তারপর মানুষের মৃত্যু হবে, এরপর বিচার দিবসে সকল মানুষের বিচার হবে। তারপর কেউ যাবে জাহান্নামে আর কেউ জান্নাতে। এই বইয়ের প্রধান উদ্দেশ্য হলো আপনাকে আমাকে জাহান্নামের আগুন সম্পর্কে সতর্ক করা। এটাই আল-কুরআনের প্রধান বার্তা। 

প্রতিটি মানুষকে এই জীবন দেওয়া হয়েছে মৃত্যু পরবর্তী জীবনের প্রস্তুতি নিতে। সহজ বিষয়। কুরআন এই ব্যাপারে খুবই পরিষ্কার। এই দুনইয়া তোমার বাড়ি নয়। এটা তোমার বাসস্থান নয়। সবার জীবনকাল এখানে অল্প কিছু সময়ের জন্য। এরপর তুমি মারা যাবে। সবাইকে তাদের রবের সামনে দাঁড়াতে হবে। সবার বিচার হবে। 

যদি এখানে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ অনুযায়ী ভাল জীবন অতিবাহিত করে থাক, তুমি জান্নাতে প্রবেশ করবে। যারা ব্যর্থ হবে তারা জাহান্নামে যাবে। এই বিষয়ে কুরআন একেবারেই পরিষ্কার। প্রতিটি ব্যক্তির বিচার হবে শেষ বিচারের দিন। সেখানে তোমাকে কোন কোন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে কুরআন সেগুলোও পরিষ্কার করে তুলে ধরেছে। 

কিন্তু আমরা অনেকেই কুরআন পড়ি, কিন্তু কুরআন বোঝার চেষ্টা করি না। অথচ কুরআনকে উপলব্ধির জ্ঞানই দুনিয়ায় মানুষকে কর্মনিষ্ঠ ও তাকওয়াবান করে তোলে। ফলে সে পরিণত হয় সময়ের শ্রেষ্ঠ মানুষে। কুরআনি জীবনপদ্ধতির অনুকরণ ও অনুসরণে যেমন প্রতিষ্ঠিত হতে পারে একটি সুন্দর সমাজ তেমনি একটি সুন্দর রাষ্ট্র। যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হজরত মুহাম্মদ সা:-এর প্রতিষ্ঠিত সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা। ইসলামের ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, সাহাবায়ে আজমাইন হজরত আবুবকর রা: থেকে শুরু করে হজরত আলী রা:-এর সময়কার ইসলামী শাসনব্যবস্থা। যা সর্বকালের শাসকদের জন্য শিক্ষণীয় বিষয়। এই শাসনব্যবস্থার অভূতপূর্ব সাফল্য কোনো মানুষের কৃতিত্বের জন্য নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে আল-কুরআনের অবদান। কুরআনই নিশ্চিত করেছে মানুষের মর্যাদা, দায়িত্বজ্ঞান ও জবাবদিহিতা।

বিশ্ব মানবতার জন্য আল-কুরআন মুক্তির বার্তা নিয়ে এসেছে। যারা একে অনুসরণ করে মুক্তির দিশা পেতে চায়, কুরআন তাদের সঠিক পথ নির্দেশ করে। যারা এই কুরআনের হুকুম বাস্তবায়নের জন্য দ্বীনের দাওয়াত দেয় তাদের জন্য রয়েছে মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে মহাপুরস্কার। 

এ প্রসঙ্গে সুনানে আত-তিরমিজিতে হজরত আলী ইবনে আবু তালিব রা. থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল-কুরআন অধ্যয়ন করবে আর একে প্রতিষ্ঠার জন্য চেষ্টা করবে, পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হালালকে হালাল হিসেবে মেনে নেবে, হারামকে হারাম হিসেবে জানবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। আর পরিবারের এমন ১০ জনের জন্য জান্নাতের সুপারিশ করার অধিকার দেবেন যাদের সবার ব্যাপারে জাহান্নামের ফায়সালা হয়ে গিয়েছিল।’

অনেকে কুরআন পড়েন, কিন্তু কুরআনের তিলাওয়াতের মাধ্যমে যে একটা স্বাদ উপভোগ করা যায় তারা সেটি পান না। কুরআন যেহেতু আমাদের মাতৃভাষায় নয়, আরবি ভাষায় নাজিলকৃত, তাই হাতেগোনা কিছু মানুষের এই ভাষার ওপর দখল থাকলেও বেশির ভাগ মানুষই কিন্তু পড়ে এর মর্মার্থ বুঝতে পারে না। অথবা বোঝার জন্য যেটুকু প্রচেষ্টা থাকা দরকার সেটুকুও আমরা করছি না। ফলে আমরা যেটা পড়ছি সেটা অনুধাবন করতে পারছি না। কোনো কিছু পড়ে অর্থ বুঝতে পারলে ভাষা মনের সাথে একটা যোগসূত্র তৈরি করে। তাই ভাষাজ্ঞানের এই সীমাবদ্ধতার কারণে অনেকের মনে কুরআনের এই অন্তর্নিহিত ভাবটি আর জেগে উঠে না। ফলে জ্ঞানের একটা শূন্যতা থেকে যায়।

আল-কুরআনের শিক্ষায় নিজেকে আলোকিত করতে হলে অবশ্যই কুরআনকে বুঝতে হবে। কাজে লাগাতে হবে কুরআন থেকে অর্জিত জ্ঞান। এর ফলে মানুষ যেমন মন্দ কাজ থেকে ফিরে থাকতে পারবে তেমনি ভালো কাজের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হবে। আল-কুরআনকে বুঝতে পেরেছেন বলেই যে ওমর মূর্খতার কারণে একদিন খোলা তরবারি হাতে মহানবী সা:কে হত্যা করতে এসেছিলেন সেই ওমর রা: একসময় পরিণত হয়ে গেলেন ইসলামের একজন একনিষ্ঠ খাদেম হিসেবে। যার সম্পর্কে মহানবী সা: বলেছেন, ‘আমার পরে আর কোনো নবী আসবে না। যদি কোনো নবী আসত তাহলে সে হতো ওমর।’ ইসলামের সাহচর্য ও কুরআনের শিক্ষাই মানুষকে আমূল বদলে দিতে পারে। পরিণত করতে পারে যুগশ্রেষ্ঠ মানুষ হিসেবে।

এমএম//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি