ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

হাদিস শরিফে কুরআন মাজিদ সম্পর্কে কি বলে?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:৩১, ৫ এপ্রিল ২০২৪ | আপডেট: ২০:১৮, ৫ এপ্রিল ২০২৪

মহাগ্রন্থ আল কুরআন ও মহানবি (সা:) এর অমীয় বাণি আল হাদীস ইসলামী জীবন বিধানের মূল ভিত্তি। কুরআন যেখানে জীবন ব্যবস্থার মৌলনীতি পেশ করে, হাদীস সেখানে এই মৌলনীতির বিস্তারিত বিশ্লেষণ এবং তা বাস্তবায়নের কার্যকর পন্থা বলে দেয়।কুরআন এবং হাদীস অবতরণের উৎস, পালনের আবশ্যকতা এবং ইসলামী আকিদার মৌল উৎস হিসেবে একটি অন্যটির সম্পূরক। যেমনিভাবে নবী করীম (সা:) কুরআন এবং হাদীসকে আলাদা না করে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য এবং সম্প্রীতির রক্ষাকবজ হিসেবে এই দুইটিকে তাঁর সর্বশেষ ভাষণে এভাবে উল্লেখ করেছেন : “আমি তোমাদের নিকট দুটি জিনিস রেখে গেলাম।

তোমরা যতক্ষণ এই দুটি জিনিস দৃঢ়ভাবে ধারণ করে থাকবে তোমরা কখনো গোমরাহ হবেনা। তাহলো, আল্লাহর কিতাব (আল কুরআন মাজিদ) ও রাসূলের সুন্নাত (আল হাদিস)। (মুয়াত্তা ইমাম মালিক ও মিশকাত- হা.নং- ১৮৬) 

কুরআন ও হাদীসের পরিচয়: আল্লাহতায়ালা রাসুলুল্লাহ (স:) এর নিকট দুই ধরনের ওহী পাঠাতেন। যেমন: এক) ওহি মাতলোবা প্রকাশ্য ও পঠিতব্য ঐশীবাণী; তা হলো, কুরআন মাজিদ। যার প্রতিটি অক্ষর, শব্দ ও বাক্য এমনকি ভাব-ভাষা সবই আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত। কুরআনের ওহী পুরোটাই আল্লাহতায়ালা জিবরাঈল (আ:) এর মাধ্যমে পাঠিয়েছেন।

তিনি তা নবী করীম (সা:) কে শুনিয়েছেন। নবী করীম (সা:) তা মুখস্থ করেছেন। জিবরাঈল (আ:) এর কাছ থেকে শুনবার পর তিনি তা সাহাবীদের শোনাতেন। সাহাবাগণও সাথে সাথে মুখস্থ করে নিতেন এবং লিপিবদ্ধ করে নিতেন।

এ প্রকার ওহীর একটি অক্ষরও পরিবর্তন করার ক্ষমতা বা অধিকার নবী করীম (সা:) এর ছিলনা। যেমন মহান আল্লাহ বলেন, “যদি এ নবী নিজে কোন কথা বানিয়ে আমার কথা বলে চালিয়ে দিতো। তাহলে আমি তার ডান হাত ধরে ফেলতাম এবং তার ঘাড়ের শিরা কেটে দিতাম।

কেননা রাসুলুল্লাহ (সা:) যাহা কিছু বলেন তাহা ওহী ভিন্ন আর কিছুই নয়। যেমন মহান আল্লাহ বলেন: "তিনি (মুহাম্মদ সা:) নিজের ইচ্ছামতো কোনো কথা বলেননা। তিনি যা কিছু বলেন সবই আল্লাহর ওহী। (সূরা নাজম- ৫৩ : ৩-৪) 

আল্লাহর ইবাদাত ও আনুগত্য করা যেমন রাসুল (সা:) এর আনুগত্য ও বাস্তব অনুসরণ ব্যতীত সম্ভব নয়, অনুরূপভাবে হাদীসকে বাদ দিয়ে কুরআন অনুযায়ী আমল করাও সম্ভব নয়। যেমন মহান আল্লাহ বলেন :“ বলুন হে নবী, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবাস তবে আমাকে অনুসরণ করে চলো। তাহলে আল্লাহও তোমাদের ভালবাসবেন, তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ গুনাহ মার্জনাকারী ও দয়াশীল।” (সূরা আলে ইমরান-৩ : ৩১)

আল কুরআনের পরই হাদীসের স্থান। কুরআন এবং হাদীসের মূল উৎসই হলো আল্লাহতায়ালা। তাই কুরআন এবং হাদীসের পারস্পরিক সম্পর্ক একশত ভাগ নিশ্চিত।

হাদিসে কুরআন মাজিদ সম্পর্কে কিছু হাদিস বর্ণিত হয়েছে- সেগুলো তুলে ধরা হয়েছে- 

কোরআন অধ্যয়ন করো। মহাবিচার দিবসে অধ্যয়নকারীর জন্যে কোরআন সুপারিশকারী হিসেবে আবির্ভূত হবে।- আবু উমামা (রা); মুসলিম

নবীজীর (স) চরিত্র ও আচরণ পবিত্র কোরআনের বাস্তব উদাহরণ।- আয়েশা (রা); মুসলিম

যে অন্তরে কোরআনের কোনো জ্ঞান নেই, সেই অন্তর হচ্ছে একটি পরিত্যক্ত (পুঁতিগন্ধময়) ঘর।- আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা); তিরমিজী

‘মানুষের মাঝেই রয়েছে আল্লাহর লোক’। সাহাবীরা জানতে চাইলেন—আল্লাহর লোক কারা? নবীজী (স) বললেন, কোরআনকে যারা অন্তরে ধারণ করে (সে অনুসারে জীবন পরিচালনা করে) তারাই আল্লাহর লোক।- আনাস ইবনে মালেক (রা); ইবনে মাজাহ, আহমদ

তোমাদের মধ্যে সে-ই উত্তম, যে নিজে কোরআনের জ্ঞানে জ্ঞানী হয়ে অন্যদের সেই শিক্ষায় শিক্ষিত করে।- উসমান ইবনে আফফান (রা); বোখারী, আবু দাউদ

সকল জাহেরী, বাতেনী, সূক্ষ্ম ও অনন্ত জ্ঞানের আকর হচ্ছে কোরআন।- আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা); ইবনে হিব্বান

সবকিছুরই অলংকার আছে। কোরআনের অলংকার হচ্ছে সুন্দর কণ্ঠ।- আনাস ইবনে মালেক (রা), আল বারা ইবনে হিজাম (রা); হাকেম, বায়হাকি, দারিমি

কোরআনে পাঁচ ধরনের আয়াত রয়েছে—১. হালাল (বৈধ)। ২. হারাম (অবৈধ)। ৩. মুহকামাত (সুস্পষ্ট বিধিবিধান)। ৪. মুতাশাবেহাত (রূপক)। ৫. কেসাস (উদাহরণ)। তোমরা হালালকে হালাল মানবে। হারাম থেকে দূরে থাকবে। আল্লাহর সুস্পষ্ট বিধিবিধান মোতাবেক কাজ করবে। মুতাশাবেহাত আয়াতের ওপর বিশ্বাস রাখবে (এ নিয়ে কোনো বিতর্কে যাবে না)। কেসাস বা উদাহরণ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে।- আবু হুরায়রা (রা); বোখারী, মুসলিম

কোরআনের শ্রেষ্ঠ মর্যাদাসম্পন্ন সূরা হচ্ছে সূরা ফাতেহা।- আবু সাঈদ রাফাই (রা); বোখারী

হেদায়েতের জন্যে যে ব্যক্তি কোরআনকে যথেষ্ট মনে করবে না, সে আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।- আবু হুরায়রা (রা); বোখারী

একজন মুসলমান—যে নিয়মিত কোরআন চর্চা করে, তার উপমা হচ্ছে কমলালেবু। কমলালেবুর রঙ সুন্দর, ঘ্রাণ মনোরম এবং খেতে সুস্বাদু। আর একজন মুসলমান—যে কোরআন অধ্যয়ন করেছে কিন্তু নিয়মিত চর্চা করে না, তার উপমা হচ্ছে খোরমা। খোরমা শুষ্ক ঘ্রাণহীন কিন্তু মিষ্টি। কোরআন পাঠকারী একজন মুনাফেকের উপমা হচ্ছে এমন ফল, যার ঘ্রাণ আছে কিন্তু স্বাদ একেবারে তেতো। আর কোরআন পাঠ করে না এমন মুনাফেকের উপমা হচ্ছে এমন ফল, যার কোনো ঘ্রাণ নেই, আবার তেতোও।- আবু মুসা আশয়ারী (রা); বোখারী, মুসলিম

কোরআন অধ্যয়নের জন্যে, কোরআনের জ্ঞানে জ্ঞানী হওয়ার জন্যে মানুষ যখন কোথাও সমবেত হয়, কিতাবের জ্ঞান নিয়ে আলোচনা করে, তাদের ওপর তখন আল্লাহর বিরামহীন রহমত নাজিল হয়। প্রশান্তি তাদের চারপাশ ছেয়ে ফেলে। ফেরেশতারা তাদের ওপর বিস্তার করে রহমতের ছায়া। আর আল্লাহ তাঁকে বেষ্টনকারী ফেরেশতাদের কাছে এই সমাবেশের কথা উল্লেখ করেন।- আবু হুরায়রা (রা); মুসলিম

যে ব্যক্তি কোরআনের একটি হরফ অধ্যয়ন করবে, সে একটি নেকি পাবে। এই একটি নেকি অন্য ভালো কাজের ১০টি নেকির সমান।- আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা); তিরমিজী

কোরআনের কোনো বিষয় নিয়ে বিতর্ক-বাদ-প্রতিবাদে লিপ্ত হওয়া কুফরী।- আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা), আবু হুরায়রা (রা); আহমদ, আবু দাউদ, বায়হাকি 

যদি কোনো ব্যক্তি রাতে ওজিফা (সূরা বা সূরার অংশ) পুরোপুরি বা আংশিক না পড়েই ঘুমিয়ে যায় এবং পরদিন জোহরের আগেই তা পড়ে ফেলে, তাহলে রাতে পড়ার সমান সওয়াবই সে পাবে।- ওমর ইবনে খাত্তাব (রা); মুসলিম, নাসাঈ

আল্লাহ বহু জাতির উত্থান ঘটাবেন কোরআনের মাধ্যমে। আবার (অনুসরণ না করার কারণে) বহু জাতির পতনের কারণও হবে কোরআন।
- ওমর ইবনে খাত্তাব (রা); মুসলিম। 
কেআই//


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি