আরাফার দিনের ফজিলত-মর্যাদা ও আমলের বিশেষ সময়সূচি
প্রকাশিত : ১৭:২৩, ১৩ জুন ২০২৪
আরবি জিলহজ মাসের নবম দিনটিকে আরাফার দিন বলা হয়। এ দিনে হাজিরা মিনা থেকে আরাফার ময়দানে সমবেত হন এবং সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। এটিই হজের প্রধান রুকন। ফজিলত হিসেবে এ দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম।
হাদিসে আছে, হজরত আনাস (রা.) বলেন, জিলহজ মাসের প্রথম দশকের প্রতিটি দিন ১ হাজার দিনের সমতুল্য আর আরাফার দিনটি ১০ হাজার দিনের সমান মর্যাদাপূর্ণ। -ফতহুল বারি
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আরাফার দিনটি সব দিবসের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। -উমদাতুল কারি
নানা কারণে এ দিবসটি মুসলমানদের কাছে স্মরণীয়। স্বয়ং আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে কারিমে এ দিনের কসম খেয়েছেন। আরাফার ময়দানে অবস্থানরত হাজিদের ওপর আল্লাহতায়ালার অজস্র রহমত বর্ষিত হয়।
এ প্রসঙ্গে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, বদরের যুদ্ধের দিন বাদে শয়তান সবচেয়ে বেশি অপদস্থ, ধিকৃত ও ক্রোধান্বিত হয় আরাফার দিনে। কেননা এ দিন শয়তান আল্লাহ পাকের অত্যধিক রহমত এবং বান্দার অগণিত পাপরাশি মাফ হতে দেখতে পায়। -মুয়াত্তা ও মিশকাত
আরাফার দিনটি মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত গর্বের। তাই এ দিন বেশি বেশি ইবাদত-বন্দেগিতে মনোনিবেশ করা অপরিহার্য। আরাফার দিনের আমলসমূহের মাঝে রয়েছে-
১. জিকির ও তাসবিহ পাঠ করা।
২. বেশি বেশি দোয়া ও এস্তেগফার পড়া। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেছেন, সর্বোত্তম দোয়া হচ্ছে আরাফার দিনের দোয়া। এ দিনে দোয়া ও তওবা কবুলের সমুহ সম্ভাবনা রয়েছে।
৩. রোজা রাখা। নবী করিম (সা.) বলেন, আরাফার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী যে, তিনি এ রোজা দ্বারা পূর্ববর্তী এক বছরের এবং পরবর্তী এক বছরের গোনাহ মাফ করে দেবেন।
আসুন আমরা আনুগত্য বা নৈকট্যের একটি কাজ যা দ্বারা এমনভাবে নিকটবর্তী হই, যা ব্যতীত আমাদের কোন নিঃশ্বাস অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে শূন্য না হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য চেষ্টা করি। যদি আমাদের কাছে বিশ্বের রত্নগুলির মধ্যে একটি থাকে এবং তা যদি চলে যায় তাহলে আমরা ভিষণ বিরক্ত হবো এবং কষ্ট পাই তাহলে পৃথিবীর সেরা দিনগুলো কিভাবে নষ্ট করবো..!
কুদরতের রাত জানা নাই কিন্তু আরাফার দিন আমরা জানি। লায়লাতুল কদরে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা ফেরেশতারাদের বলেন দুনিয়ায় অবতরণ করতে আর আরাফাতের দিন আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা নিকটবর্তী স্থানে সয়ং অবতরণ করেন। তাই সুযোগটি কাজে লাগাই এবং যতটা সম্ভব কঠোর পরিশ্রম করি।
আরাফাহ দিবসের একটি চমৎকার সময়সূচী আমরা পালন করতে পারি। আসুন এটি আমাদের প্রিয়জনদের কাছেও পাঠাই, যা বছরে একদিনই পালনের সুযোগ হয়।
সময় সূচিঃ
১. আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতায়ালার আনুগত্য করার জন্য নিজেকে শক্তিশালী করতে আরাফার রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমানো।
২. সেই দিন রোজা রাখার নিয়তে সেহরির জন্য প্রস্তুত হওয়ার জন্য ভোর হওয়ার আগেই উঠা।
৩. তারপর কমপক্ষে দুই বা চার রাকাত তাহাজ্জুদের নামায আদায় করা, দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের জন্য সিজদা করার সময় আমাদের পালনকর্তার কাছে দোয়া করা এবং তাঁর প্রশংসা করা যে আমরা এমন একটি দিনে পৌঁছেছি যেদিন রহমত ও ক্ষমা অবতীর্ণ হয়।
৪. ভোর হওয়ার আগে, ক্ষমা চাওয়ার জন্য সময় কাটানো, যতক্ষণ না আমরা ভোর বেলার ক্ষমা প্রার্থনাকারীদের একজন হিসাবে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতায়ালার কাছে নথিভুক্ত হই।
৫. ফজরের আযানের পাঁচ মিনিট আগে ফজরের নামাযের জন্য প্রস্তুত থাকা এবং অনুভব করা যে ওযুর শেষ ফোঁটা দিয়ে আমার গুনাহগুলো ধুয়ে ফেলা হচ্ছে। অতঃপর দুরুদ পড়ি।
৬. ফজরের নামাজ জামাতে পড়ার চেষ্টা করা এবং সালামের পরপরই তাকবীর শুরু করা। সূর্যোদয়ের ১৫ মিনিট পর পর্যন্ত নিজ জায়নামাজে বসে থাকা এবং জানা কিছু আমল করা সূর্যোদয় পর্যন্ত, কোরআন পাঠ করা, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতায়ালার প্রশংসা করা।
৭. আমাদের ইতোমধ্যেই যাদের হজ্ব ও ওমরাহ হজ্বের নসিব হয়েছে এবং যারা হজ্বরত আছি সবাই রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে আমাদের হজ্জ ও ওমরার সওয়াব লিপিবদ্ধ করার জন্য সূর্যোদয়ের পরে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়া। এই সুযোগ না হারাই।
৮. ক্লান্তি দূর করতে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতায়ালার আনুগত্যে নিজেকে শক্তিশালী করার অভিপ্রায়ে এক ঘন্টা ঘুমানো।
৯. এরপর ঘুম থেকে উঠে, অজু করে এবং কমপক্ষে ৪ রাকাত, সালাতুত দুহা নামাজ পড়া। তাকবীর, যিকির, তেলাওয়াত এবং আরও অনেক কিছু করা। একমাত্র আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতায়ালা ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, উনার কোন শরীক নেই। রাজত্ব ও প্রশংসা উনারই এবং তিনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান।
১০. জোহরের নামায পড়ি, তাকবির, তাসবিহ বলা এবং কুরআন থেকে কিছু তেলাওয়াত করা।
১১. সমস্ত মনোযোগ দিয়ে আরাফাতের খুতবা শুনার চেষ্টা করা।
১২. আসরের নামায পড়ি, তাকবীর বলি এবং যিকির করি..
১৩. সূর্যাস্তের প্রায় এক ঘন্টা আগে পর্যন্ত কুরআন পড়া। বিনয়ের সাথে দোয়ার দরখাস্ত শুরু করা পাশাপাশি আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতায়ালার সামনে আমাদের অবস্থান স্মরণ করি। আমাদের মুসলিম ভাইদের জন্য দোয়া করতে না ভুলি।
এমএম//