শুকরিয়ায় মন প্রশান্ত হয়, জীবনে আনে ইতিবাচকতা
প্রকাশিত : ২০:৫৯, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
সাফল্যের পথে প্রথম পদক্ষেপ হলো শুকরিয়া (কৃতজ্ঞতা) ও সবর (ধৈর্য)। শোকর আলহামদুলিল্লাহ, থ্যাংকস গড, প্রভু তোমাকে ধন্যবাদ। ছোট্ট এ বাক্যটি বলার মধ্য দিয়েই প্রকাশ পায় সঠিক জীবনদৃষ্টি। অর্থাৎ আপনি প্রথম পা ফেলতে শুরু করলেন সাফল্যের পথে। শুকরিয়া মনকে প্রশান্ত করে। মুহুর্তে ব্যক্তির চিন্তার জগতকে বদলে দেয়। ব্যাক্তি সচেতন হয়ে উঠে বর্তমান উপকরণ সর্ম্পকে, ভাবতে পারে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে।
মানুষের সহজাত অভ্যাস হলো মানুষ নিজের দিকে না তাকিয়ে অন্যের দিকে তাকায়। অন্যের কী আছে, অন্যে কী বলল, কী ভাবলো, কী করলো এ নিয়েই বেশি ভাবে। অন্যের মতামতকে বেশি প্রাধান্য দেয়, অন্যের জিনিসটা বেশি দামী মনে হয়, অন্যের হাসি দেখলে বেশি সুখী মনে হয় ইত্যাদি।
অন্যের দিকে তাকাতে গিয়ে মানুষ আসলে নিজের কী আছে তা-ই ভুলে যায়। অন্যের দিকে তাকিয়ে কোন লাভ নেই। আমাদের তাকাতে হবে নিজের দিকে। যত নিজের দিকে অন্তরদৃষ্টি দিয়ে তাকাবেন ততই বিস্মিত হবেন। যাদের সাফল্য আমাদের ক্ষণিকের জন্য ঈর্ষান্বিত করে তোলে তাদের প্রাপ্তির পেছনের সব উপকরণ সব মানুষের মধ্যে বিদ্যমান, যা দিয়ে সে অনায়াসে নতুন উদ্যমে শুরু করতে পারে।
আজ যে আমরা সুস্থ্যদেহে ঘুম থেকে উঠতে পেরেছি এজন্য স্রষ্টার কাছে শুকরিয়া আদায় করা প্রয়োজন। গতকাল কয়েক অনেক মানুষ পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নিয়েছেন, বহু মানুষ অসুস্থ্য হয়ে বিছানায় পড়ে আছেন। আপনি বেঁচে আছেন, কাজ করার, জীবনকে উপভোগ করার আরও একটি দিন পেয়েছেন, আপনার শোকরগোজার হওয়ার জন্যে এটাই যথেষ্ট। আমরা যে এখনও বেঁচে আছি দম নিতে পারছি এটিই হতে পারে শুকরিয়া আদায়ের একটি প্রধান কারণ। হাসপাতালের বেডে শায়িত রোগীর কথা ভাবুন , যিনি দমও নিতে পারছেন না, যাকে অক্সিজেন দেওয়া হচ্ছে। মানবদেহের কথাই ভাবুন। এতে রয়েছে পাঁচ শতাধিক মাংশপেশী, দুই শতাধিক হাড়, ৭০ থেকে ১০০ ট্রিলিয়ন দেহকোষের সমন্বয়ে গঠিত শরীরের প্রতিটি কোষে খাবার ও অক্সিজেন পৌঁছে দিচ্ছে, শিরা ও ধমনীর ৬০ হাজার মাইল দীর্ঘ পাইপলাইন দিয়ে। রয়েছে ফুসফুসের মত রক্ত শোধনাগার। হার্ট কোনরকম ক্লান্তি ছাড়াই প্রতিদিন প্রায় লক্ষবার স্পন্দনের মাধ্যমে ১৬ শত গ্যালনেরও বেশি রক্ত পাম্প করে দেহকে সচল রাখছে। রয়েছে লেন্সের মতো একজোড়া ছোট্ট চোখ, যা দিয়ে বিশাল পৃথিবীর সৌন্দর্য্য অবলোকন করা যায়। রয়েছে মানুষের মনোদৈহিক কার্যক্রম পরিচালনাকারী মস্তিস্করূপী জৈব কম্পিউটার যা যেকোন কম্পিউটারের চেয়েও কমপক্ষে ১০ লক্ষ গুণ বেশি শক্তিশালী। কম্পিউটারের দামের অনুপাতে প্রতিটি মানুষের মস্তিস্কের মূল্য কমপক্ষে পাঁচ হাজার কোটি টাকা।
বিশ্বের সাড়ে ছয় শত কোটি মানুষের মধ্যে প্রতিটি মানুষ অনন্য। একজনের মত হুবহু কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। সৃষ্টিকর্তা প্রত্যেককে অনন্য করে সৃষ্টি করেছেন। তিনি আপনাকে এমন কিছু মেধা ও যোগ্যতা দিয়েছেন যা আর কাউকে দেননি। যত নিজের দিকে তাকাবেন তত দেখবেন, সাফল্যের জন্য যে উপকরণ প্রয়োজন তার সবই আপনার রয়েছে । এ উপকরণগুলো ব্যবহার করে একজন মানুষ নির্মাণ করতে পারে নিজের ভবিষ্যত।
এজন্য প্রথমে এক এক করে তালিকাভুক্ত করতে হবে কী কী আছে আপনার। কোন কোন জিনিষের জন্য আপনি শোকরগোজার হবেন। আপনি কী কী পারেন, আপনার বিশেষ গুণ বা বৈশিষ্টগুলো কী? দেখবেন নিজের ভেতরের গুণ বা যোগ্যতাগুলো মনে আসলে নিজেই অবাক হবেন। একটা সাহস ও আত্মবিশ্বাস জন্মাবে।
শোকরগোজার মন প্রশান্ত মন। প্রশান্ত মন সুস্পষ্ট বুঝতে পারে করণীয়-বর্জনীয় সর্ম্পকে, সহজেই সংযুক্ত হয়ে যায় শক্তির মূল উৎসের সাথে, যেখান থেকে উৎসারিত হয় সাফল্যের ফল্গুধারা।
পৃথিবীর সকল ধর্মেই স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের কথা প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘‘হে মানুষ! আমি পৃথিবীতে তোমাদের(প্রাচুর্য, সম্পত্তি ও ক্ষমতায়) প্রতিষ্ঠিত করেছি এবং দিয়েছি জীবনের সব উপকরণ। হায়! তারপরও তোমরা কত কম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো’’।
‘‘হে নবী! ওদের বলো, আল্লাহই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন। তিনি তোমাদের শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি দান করেছেন। সেই সঙ্গে দিয়েছেন বিচারবুদ্ধি, অন্তকরণ। অথচ তোমাদের শুকরিয়া বা কৃতজ্ঞতার প্রকাশ খুবই কম’’।
ধৈর্য ও কৃতজ্ঞতা একই সূত্রে গাঁথা। ধৈর্যশীল ব্যক্তি সহজে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারে । ধৈর্য সর্ম্পকে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, ‘‘হে বিশ্বাসীরা তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথেই থাকেন’’।
‘‘নিশ্চয়ই আমি তোমাদের অনেককে ভয়, ক্ষুধা, জানমাল ও শ্রমের ফল বিনষ্ট করে অর্থাৎ বিপদ-আপদ দিয়ে পরীক্ষা করবো। তবে এ বিপদের মধ্যে যারা ধৈর্যধারণ করে তাদের সুসংবাদ দাও। ধৈর্যশীলরা বিপদে পড়লে বলে আমরা আল্লাহর। তাঁর কাছ থেকে এসেছি। তাঁর কাছেই ফিরে যাব’’।
‘‘মানুষ সহজাতভাবে অস্থিরচিত্ত। যখনই মানুষ অভাব বা বিপদে পড়ে তখন হা-হুতাশ করে আবার যখন সচ্ছলতা বা সৌভাগ্য আসে তখন হয়ে যায় স্বার্থপর, অতিকৃপণ’’।
এজন্যই শোকর ও সবর আধ্যাত্মিক সাধনার কেন্দ্রে অবস্থান করছে। ইসলাম হচ্ছে সবর ও শোকরের মাঝে স্থিত একটি আলোকরশ্মি । এই আলো তারই অন্তরে প্রবিষ্ট হবে যার সকল সংকটে ‘‘শোকর আলহামদুলিল্লাহ’’ বলার ক্ষমতা এবং ধৈর্য আছে।
তাই জীবনের সর্বক্ষেত্রে সর্বাবস্থায় সৃষ্টিকর্তার কাছে বলুন, শোকর আলহামদুলিল্লাহ/ প্রভুকে ধন্যবাদ/ থ্যাংকস গড(যার যার ভাষায়) ইত্যাদি কৃতজ্ঞতাসূচক বাক্য। সবসময় শোকরগোজার মানুষদের সংস্পর্শে থাকুন, সৎ সঙ্গে থাকুন। যা আপনাকে সবসময় প্রাণশক্তিতে উজ্জীবিত রাখবে এবং জীবনে আসবে ইতিবাচক পরিবর্তন।
এসএইচ/