দুনিয়া হচ্ছে সুন্দরী নারীর মতো
প্রকাশিত : ১৫:৫১, ১৭ মে ২০১৯ | আপডেট: ১৭:৫৩, ১৭ মে ২০১৯
মানুষের এক দিকে রয়েছে একটি দেহ, অন্যদিকে একটি মন। দেহের মধ্যে রয়েছে পাঁচটি জ্ঞানেন্দ্রিয় এবং পাঁচটি কর্মন্দ্রিয়। এই ইন্দ্রিয়গুলোর নিজস্ব কোন ভাল-মন্দের ব্যাপার নেই।
এগুলো হচ্ছে যন্ত্রবিশেষ যা মানুষ তার প্রয়োজনে ব্যবহার করে। মানুষের মধ্যে দেহজ উপাদান বা আনাসিরের কারনেই রয়েছে ষড়রিপু বা নফস। এই রিপুগুলো তার মধ্যে নিরন্তর পশু প্রবৃত্তি জাগিয়ে তোলে।
অন্যান্য জীবের মাতো মানুষকেও তিনটা জিনিস কারো কাছে শিখতে হয় না। নিদ্রা, খাওয়া এবং যৌনতা। এই তিনটি জিনিস তার অস্তিত্বের সঙ্গেই মিশে আছে স্বজ্ঞা হয়ে। দেহের বিবেচনায় মানুষতো আসলে একটা পশু।
তার মধ্যে প্রবৃত্তি যখন প্রবল প্রতাপে জাগ্রত হয় তখন তার মধ্যে আর পশুতে কোন তফাৎ থাকে না। কিন্তু সে সম্পূর্ণত পশুও হতে পারে না তার বিবেকের জন্য।
বিবেক তাকে ভালোমন্দের তারতম্য বুঝতে শেখায়। কিন্তু ভালো কাজের দিকে সে ধাবিত হবে কিনা সেটা নির্ভর করবে তার ইচ্ছা এবং কর্মের উপর।
মানুষের গুন বা সিফাত কোন স্বভাবগত জিনিস নয়। তার মধ্যে গুন এবং নির্গুণের সম্ভাবনা দুই-ই রয়েছে। সে সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত করার জন্য দেহ নামক একটা আশ্চর্য সুন্দর যন্ত্রও তাকে দেওয়া হয়েছে।
আমরা আফলাতুন এবং আরিস্তু এর নাম শুনেছি। আফলাতুন মনে করতেন গুন মানুষের স্বভাবগত অর্জন। কিন্তু আরিস্তু বলতেন গুন হচ্ছে কর্মের মাধ্যমে অর্জনের জিনিস। এই গুন বা সিফাত অর্জনের জন্য মানুষ যখন তার দেহকে ব্যবহার করে তখনই সে সাধক হয়।
নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত-এগুলো শরীয়তের হুকুম আহকামের জিনিস। এ হুকুম পালন করার পরও একজন মানুষের প্রবৃত্তির উপর নিয়ন্ত্রন নাও থাকতে পারে। প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রেনে আনার জন্যই সাধনার প্রয়োজন।
সাধনার দ্বারাই মানুষ দেহ ও মনের ভারসাম্য অর্জন করে। ভারসাম্য নষ্ট হলেই দেহ ও মন দুই-ই রোগগ্রস্থ হয়। এই রোগগ্রস্থ মানুষই হলো মোহগ্রস্থ মানুষ।
মানুষের মোহ যখন নিরন্তন সাধনা বা রিয়াজতের মাধ্যমে কেটে যেতে থাকে তখনই তার অন্তরের চোখ খুলে যায়। একেই শাস্ত্রকাররা বলেছেন তৃতীয় নয়ন। আর এ তৃতীয় নয়ন খুলে গেলেই মানুষ নিজের মধ্যে তার আরাধ্যকে দেখতে পায়।
মানুষের কাছে দুনিয়া হচ্ছে সুন্দরী নারীর মতো যার রুপের ছটা মানুষের চোখে মোহজাল বিস্তার করে, যার ছলনায় মানুষ বিমোহিত হয়। ইসলামে সাধনা মানে এই রূপসীর কাছ থেকে পালায়ন নয়। মুমিন এই রুপসীর পাশেই থাকবে কিন্তু তার মোহজালে আবদ্ধ হবে না।
রাজাহাঁসের মতো কাদা পানিতে চলবে অথচ শুভ্র পালকে কোন পঙ্কিলতা স্পর্শ করবে না। প্রবৃত্তি আছে অথচ প্রবৃত্তির দাসত্ব নেই, এখানেই মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব। এইখানেই তার মনুষ্যত্ব।
আল্লাহ, মৃত্যু এবং শয়তান এই তিন বাস্তবতাকে মানুষ ভুলে থাকে। আল্লাহ মানুষের সঙ্গে আছেন, মানুষ তাকে ভুলে থাকে। আর ভুলে থাকে বলেই সে বিপথে যেতে পারে।
মৃত্যু তাকে ছায়ার মতো অনুসরণ করছে কিন্তু মৃত্যু ভুলে আছে বলেই মানুষ কামনা-বাসনা নিয়ে এমন নিরুদ্বেগ জীবন যাপন করতে পারে। শয়তানের অস্তিত্ব সম্পর্কে সজ্ঞানে চিন্তা করলেও মানুষ শয়তানের প্ররোচণা থেকে বাঁচতে পারে। এই ভুলে থাকাটাকেই কিন্তু জীবন বলে। সে জন্যেই মৃত্যুকে এমন ভয়।
সূত্র : হযরত সৈয়দ রশীদ আহমদ জৌনপুরি’র (রহ) সংলাপ সমগ্র বই থেকে সংগৃহীত।
এমএস/