পাপ মোচনের মাধ্যমেই শেষ হয় হজের আনুষ্ঠানিকতা
প্রকাশিত : ১৮:৩১, ১১ আগস্ট ২০১৯ | আপডেট: ১৮:৫১, ১১ আগস্ট ২০১৯
হজ ইসলামের পঞ্চম রোকন। বিশ্ব মুসলিমের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। প্রত্যেক আর্থিক ও শারীরিক সামর্থ্যবানের ওপর হজ ফরজ। একজন হাজীকে আল্লাহ নিষ্পাপ শিশুর সঙ্গে তুলনা করেছেন। হজ পালনকারী তখনই নিষ্পাপ হবেন, যখন তার হজ আল্লহর দরবারে কবুল হবে।
তাই হজে গমনকারী প্রত্যেককেই হজের সকল আহকাম বিস্তারিত জানতে হবে। আর হজের অন্যতম আনুষ্ঠানিকতা হলো আরাফার ময়দানে অবস্থান, খুতবা শ্রবণ, কংকর নিক্ষেপ, মাথা মুন্ডন করা, দোয়া ও ইস্তিগফারে দিনযাপন করা। আর এসব আহকাম পালনের মধ্যদিয়ে পাপ মোচন হয় একজন হাজীর, শেষ হয় হজের আনুষ্ঠানিকতা।
মূলত হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয় ৭ জিলহজ।এবছর পৃথিবীর প্রায় ২৫ লাখেরও বেশি মুসলমান সন্ধ্যার মসজিদুল হারাম থেকে ইহরাম বেঁধে মিনার উদ্দেশে যাত্রা করেন। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় মুসলমানদের অন্যতম ফরজ ইবাদত পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা। আর লাখ লাখ মানুষের ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক' ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে পুরো অঞ্চলটি।
পবিত্র হজ পালনকারীদের জন্য মিনায় অবস্থান করা সুন্নত। তাই কেউ যানবাহনে, কেউ আবার দীর্ঘ যানজট এড়াতে মিনায় যান পায়ে হেঁটেই। ৭ থেকে ১২ জিলহজ পাঁচ দিন মিনা, আরাফাহ, মুজদালিফায় অবস্থান করবেন হাজিরা। ৮ জিলহজ সারাদিন মিনায় অবস্থান শেষে ৯ জিলহজ ফজরের নামাজ আদায় করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফার ময়দানে অবস্থান করবেন হাজিরা।
আরাফায় অবস্থান:
প্রত্যেক হাজীকে এদিন সূর্য পশ্চিমাকাশে হেলে পড়ার আগেই অর্থাৎ জোহরের পূর্বেই আরাফার ময়দানে এসে হাজির হতে হয়। এ ময়দানে প্রদত্ত খুতবা শ্রবণ করে আল্লাহ তাআলার দরবারে দোয়া ও ইস্তেগফারের মাধ্যমে দিনটি অতিবাহিত করতে হয়।
এ দিনটি আল্লাহ তাআলার নিকট অন্য দিনগুলো থেকে আলাদা এবং এ দিনের ইবাদাত-বন্দেগির সাওয়াব অন্য দিনের তুলনায় দিগুণ। এ দিনের আমল হলো-দু’হাত উত্তোলন করে বেশি বেশি দোয়া করা। বিশেষ করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামসহ পূর্ববর্তী নবী-রাসুলগণ যে দোয়া পাঠ করেছেন, তা পাঠ করা। আরাফার ময়দানের অন্যতম দোয়া হলো-
উচ্চারণ :‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুওয়া আ’লা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির।’
এদিনে পঞ্চ ইন্দ্রিয় তথা চোক, কান, নাক, জিহ্বা তথা স্পর্শসহ যাবতীয় হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা হাজিদের অবশ্য করণীয়। হাদিসের পরিভাষায়- এ দিন যে ব্যক্তি তার কান, চোখ ও জিহ্বাকে সঠিক কাজে ব্যয় করবে,আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন।
এছাড়া বিশেষ করে কুরআন তিলাওয়াত ও বিশ্বনবীর প্রতি দরূদ প্রেরণ হলো আরাফার ময়দানের সর্বোত্তম আমল। সম্ভব হলে আরাফার ময়দানে আল্লাহ তাআলার সিজদায় দোয়া ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে সময় অতিবাহিত করা।
পাথর সংগ্রহ ও নিক্ষেপ:
পরে সূর্যাস্তের পর সঙ্গে সঙ্গে মাগরিব না পড়ে মুযদালিফার দিকে রওনা হন হাজিরা। এরপর মুজদালিফায় গিয়ে রাত যাপন ও পাথর সংগ্রহ করেন তারা। ১০ জিলহজ ফজরের নামাজ আদায় করে মুজদালিফা থেকে আবার মিনায় ফিরে আসবেন তারা।
সেখানে বড় জামারাতে ৭টি কংকর তথা পাথর নিক্ষেপ করবেন হাজিরা। আর তা জোহরের আগেই সম্পন্ন করা কর্তব্য। তিন ধাপে মিনায় মসজিদে খায়েফের সন্নিকটে অবস্থতি জামরায়ে উলা তথা বড় জামরায় কংকর মারা শুরু করবে। অত:পর ৭টি কংকর একের পর এক নিক্ষেপ করতে হবে। এ দিন শুধু বড় জামরায় কংকর নিক্ষেপ করবে।
কুরবানি করা:
বড় জামরাতে কংকর নিক্ষেপ করেই হজের মূল কাজ ১০ জিলহজ মিনায় কুরবানির পশু জবাই করা ও মাথা মুণ্ডন করা। এ ক্ষেত্রে যারা ব্যাংকের মাধ্যমে কুরবানি সম্পন্ন করবেন, তারা ব্যাংকের লোকদের কাছ থেকে মাথা ন্যাড়া বা মুণ্ডন করার নির্দিষ্ট সময় জেনে নেয়া।
মাথা মুণ্ডন করা:
কুরবানির পর পরই মাথা ন্যাড়া করার মাধ্যমে হজের ইহরাম থেকে হালাল হন একজন হাজী। মাথা মুণ্ডনের মাধ্যমে হাজী ইহরামের কাপড় পরিবর্তন করাসহ সব সাধারণ কাজ করতে পারলেও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকতে হবে।
ফের কংকর নিক্ষেপ:
একজন হাজী ১১ ও ১২ জিলহজ দুইদিনই মিনায় অবস্থান করবেন এবং ধারাবাহিকভাবে ছোট, মধ্যম ও বড় জামরাতে ৭টি করে ২১টি কংকর নিক্ষেপ করবেন। উভয় দিন প্রথমে ছোট জামরায় কংকর মারা শুরু করবে এবং একের পর এক সাতটি কংকর মারবে।
তারপর মধ্যম জামরায়ও একইভাবে সাতটি কংকর নিক্ষেপ করবে এবং সর্বশেষ বড় জামরায় কংকর মারার মাধ্যমে মিনায় কংকর মারার ওয়াজিব কাজ সম্পন্ন করবেন।
তাওয়াফে জিয়ারত:
হজের সর্বশেষ হুকুম হলো তাওয়াফে জিয়ারত। যা ১১ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ সূর্য ডোবার আগ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করতে হয়। ১২ জিলহজ সূর্য ডোবার আগে তাওয়াফে জিয়ারত না করতে পারলে দম বা কুরবানি কাফফারা আদায় করতে হবে।
তবে, যদি কেউ ১২ জিলহজ সূর্য ডোবার আগে মিনা ত্যাগ করতে না পারে কিংবা থাকার ইচ্ছা করে তাকে ১৩ জিলহজ ৭টি করে আরও ২১টি কংকর নিক্ষেপ করতে হবে। বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১৩ জিলহজও মিনায় অবস্থান করেছিলেন।
বিদায়ী তাওয়াফ:
সারাবিশ্ব থেকে আগত সব হজপালনকারীর জন্য দেশে রওয়ানা হওয়ার আগে তাওয়াফ করা আবশ্যক। এ তাওয়াফকে বিদায়ী তাওয়াফ বলে। তবে জিলহজ মাসের ১২ তারিখের পর যে কোনও নফল তাওয়াফই বিদায়ী তাওয়াফে হিসেবে আদায় হয়ে যায়।
এনএস/কেআই