ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

রোগবালাই থেকে মুক্তির ফলপ্রসু আমল দান 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:২৯, ১৯ মার্চ ২০২০

একসময় মনে করা হতো সম্পদই সুখের উৎস। সম্পদ বাড়ালেই বোধ হয় মানুষ সুখী হবে। কিন্তু দেখা গেল, অঢেল সম্পদ আর সীমাহীন প্রাচুর্য থাকার পরও মানুষ সুখী হতে পারছে না। আসলে দান যে শুধু তৃপ্তি আর প্রশান্তিই এনে দেয়, তা নয়, সম্পদে বরকত এনে দেয়, দূর করে বালা মুসিবত, রোগবালাই, দুর্দশাও।   

আল্লাহ তাআলা কোরআনুল করীমে বলেন: ‘হে ঈমানদারগণ! আমার দেওয়া রিজিকের কিয়াদাংশ দান করে দাও এমন এক মহা সংকটপুর্ণ দিন আসার পূর্বে, যে দিন না কোন বেচা-কিনা চলবে, না কোন বন্ধুত্ব কাজে আসবে এবং আল্লাহর অনুমতি ভিন্ন না কোন সুপারিশের সুযোগ হবে।’ –সুরা বাকারা, আয়াতঃ ২৫৪।

হযরত আনাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- “সদকা (দান) আল্লাহ তায়ালার ক্রোধ প্রশমিত করে এবং মৃত্যুযন্ত্রণা লাঘব করে।”

অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালার কছে সদাকা বা সাধারণ দানের অনেক মূল্য। দানের দ্বারা আল্লাহ তায়ালার ক্রোধ প্রশমিত হয়। দানের দ্বারা বালা-মসিবত দূর হয়। রোগবালাই থেকে মুক্তির জন্যেও দান একটি ফলপ্রসু আমল।

দানের ব্যাপারে শুধু ইসলাম তথা কোরআন ও হাদিসে নয়, ঋগবেদ, ভগবদ্গীতা, বাইবেলেও দানের ব্যাপারে বিস্তৃত আলোচনা করা হয়েছে। 

ঋগবেদে বলা হয়েছে, “নিঃশর্ত দানের জন্যে রয়েছে চমৎকার পুরস্কার। তারা লাভ করে আশীর্বাদধন্য দীর্ঘজীবন ও অমরত্ব”-ঋগবেদ-১.১২৫.৬

বাইবেলে ঘোষণা করা হয়েছে, “ যখন দান করো গোপনে কর। তোমার নীরব দান সদাপ্রভু দেখছেন। তিনি তোমাকে পুরস্কৃত করবেন।”-মথি ৬:৩-৪

বেদে দান করা সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি দুঃস্থদের সাহায্য করে না, অজ্ঞানী এবং অন্তঃদৃষ্টিহীন তার সকল উন্নতিই বৃথা, সকল সম্পত্তিই অনর্থক। যে অন্যদের সাহায্য করে না, অন্যকে অভুক্ত রেখে কেবল নিজে খায় সে মূলত পাপই ভোজন করে।’

একবার বনী ইসরাইলের এক লোক স্বপ্নে দেখল, তার জীবনের দুই অংশ। এক অংশে তার খুব সম্পদ, প্রাচুর্য, বিলাসিতা থাকবে। আরেক অংশে থাকবে দারিদ্র, অভাব, দুঃখ, কষ্ট। স্বপ্নেই তাকে জিজ্ঞেস করা হলো, এ দুই অংশের মধ্যে কোন অংশ সে প্রথমে পেতে চায়, তা বেছে নেয়ার স্বাধীনতা তার আছে।

এটুকু দেখেই ঘুম ভেঙে গেল তার। বিষয়টি তাকে খুব ভাবাচ্ছিল। স্ত্রীর সাথে আলাপ করল। স্ত্রী তাকে পরামর্শ দিল, ঠিক আছে, যেহেতু দুটো অংশই তোমার নিয়তি, কাজেই প্রথমে তুমি সম্পদ আর প্রাচুর্যই চাও। পরদিন সে আবারো স্বপ্নে দেখল। স্বপ্নেই বলল, সে প্রথম প্রাচুর্যময় জীবনই চায়।

তা-ই হলো, পরদিন থেকেই জমি, ব্যবসা ইত্যাদি নানানভাবে বিপুল অর্থ সমাগম হতে লাগল তার বাড়িতে। এদিকে তার স্ত্রী একজন বুদ্ধিমতী মহিলা ছিল। স্বামীর এই বিপুল ধন সম্পত্তিকে শুধু নিজেদের জন্যে খরচ না করে সে স্বামীকে দিয়ে উদার হাতে সে বিলাতে লাগলো গরীব আত্মীয়, প্রতিবেশী, অভাবীদের মাঝে। এত বেশি দান খয়রাত করতে লাগল যে আস্তে আস্তে সে জনপদের চেহারাই পাল্টে গেল।

এদিকে বনী ইসরাইলীর জীবনের প্রথম অংশ শেষ হয়ে এল। এবার দ্বিতীয় অংশের পালা- দুঃখ, অভাব, বিপদ আর ঝামেলার জীবন! কিন্তু কোথায় সেসব! বনী ইসরাইলী দেখল, সে-তো দিব্যিই আছে। কোনো বিপদাপদ, ঝামেলা নেই। প্রাচুর্যেরও কমতি নেই।

এমন সময়ই সে আবারো স্বপ্ন দেখল, গায়েবি কণ্ঠ তাকে বলছে, যেহেতু তুমি তোমার সম্পদ গরীব দুঃখীদের জন্যে ব্যয় করেছ, আল্লাহ তাই তোমার ওপর সন্তুষ্ট হয়েছেন। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তোমাকে তিনি আরো সম্পদ দান করবেন। যাতে তুমি আরো বেশি বেশি মানুষের কল্যাণে ব্যয় করতে পার। 

তাই আপনার উপার্জনের একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ মানুষের জন্যে ব্যয় করুন। প্রাকৃতিক নিয়মেই আপনি ভালো থাকবেন, বিপদ-আপদ থেকে দূরে থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, আনন্দে থাকবেন, সুখী হবেন। আপনার সম্পদেও বাড়বে সমৃদ্ধি। বর্তমানে প্রাকৃতিক মহামারীর দুর্যোগের সময় বেশি বেশি দান করা উচিত। 

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি