যে কারণে ভাসানচরে যেতে আগ্রহী নয় রোহিঙ্গারা (ভিডিও)
প্রকাশিত : ১৫:০২, ৯ অক্টোবর ২০২০
উন্নয়ন সংস্থাগুলোর নেতিবাচক প্রচারণাসহ নানা কারণে ভাসানচরে যেতে আগ্রহী নয় রোহিঙ্গারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভাসানচরে সংস্থাগুলোর কার্যক্রম পরিচালনা ও পর্যটন শহর কক্সবাজারের মতো আরাম-আয়েশ ও সুবিধাজনক পরিবশ না থাকায় রোহিঙ্গাদের নিরুৎসাহিত করছে তারা। তৃতীয় কোন পক্ষের সুবিধা-অসুবিধায় প্রভাবিত না হয়ে, নিজেদের কল্যাণে ভাসানচরকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বেছে নেয়ার পরামর্শ তাদের।
টেকনাফ ও উখিয়ায় ক্যাম্প নির্মাণ করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয় বাংলাদেশ। প্রতিনিয়তই বাড়ছে রোহিঙ্গাদের নতুন প্রজন্ম। ঘিঞ্জি ও জনবহুল হয়ে উঠেছে বাস্তুচ্যুত মানুষগুলোর অস্থায়ী এই আবাস।
বাড়ছে পাহাড় ধস কিংবা দুর্যোগে প্রাণহানির শঙ্কাও। নিজেদের দেশে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি সময় সাপেক্ষ ও অনিশ্চিত।
এসব বিষয় বিবেচনায়, নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে নৌবাহিনীর সহায়তায় নির্মাণ করা হয়েছে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ণ প্রকল্প। ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ও তিন মিটার উঁচু বেড়িবাধ দিয়ে চরটিকে করা হয়েছে সুরক্ষিত।
এক লাখ মানুষ বসবাসের সুবিধা সম্বলিত এ প্রকল্পে, ১শ’ ২০টি গুচ্ছ গ্রামে স্থায়ী অবকাঠামো তৈরির কাজও শেষ। আশ্রয়কন্দ্র, থাকার ঘর, খাদ্যগুদাম, মসজিদ, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল-খেলার মাঠ, কবরস্থানসহ মাছ চাষের পুকুর। সব সুবিধাই আছে এখানে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক সাহেব এনাম খান বলেন, যে রিফিউজ ক্যাম্পগুলো আছে সেখানে কিন্তু জনসংখ্যা বাড়ছে। সুতরাং এটার একটা প্রাকটিক্যাল সলিউশন দরকার এবং এই প্রাকটিক্যাল সলিউশনের দিক থেকে যদি চিন্তা করেন তাহলে ভাসানচর একটা ভূমিকা রাখবে। কারা যাবেন, কি ধরনের মানুষ যাবেন এবং সেখানে যাওয়ার সেখানে কি করবেন সেই বিষয়গুলো নিয়ে এক ধরনের নির্দেশনা দিলে আমার মনে হয় যে শরণার্থী আছেন তারা যাবেন।
বসবাসের উপযোগীতা যাচাইয়ে রোহিঙ্গাদের নেতা বা মাঝিরা প্রকল্প ঘুরে দেখে এসেছে। শুরুতে সন্তুষ্ট হলেও ফিরে এসে ভোল্ট পাল্টেছে তারা। তবে নতুন ঠিকানায় যেতে অনাগ্রহ সৃষ্টিতে কাজ করছে একটি মহল।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন অতিরিক্ত কমিশনার সামসুদ্দোজা বলেন, নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জোনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ বলেন, তাদের যে পৈতৃক ভিটার সংযোগ আছে, বাস্তুভিটার যে সংযোগ আছে সেটি বিচ্ছিন্ন হবে। যে শরণার্থী আছেন তাদের জন্য সুযোগ তৈরি করা হোক। কিন্তু শরণার্থীদের জন্য দেখভাল করার জন্য যারা থাকবেন তাদের জন্য সেখানে কোন সুবিধা তৈরি করা হয়নি। এজন্য তারা আগ্রহী নয়। এখানে ফাইভ স্টার, থ্রি স্টার হোটেল নাই, থাকা-খাওয়ার লজিস্টিক সুবিধা নেই।
সমুদ্রপথে মালয়েশিয়া পাড়ি দেয়ার চেষ্টায় ভেসে থাকা ৩শ’ ৬ জন রোহিঙ্গাকে রাখা হয়েছে ভাসানচরে। তারা বেশ ভালোই আছে। এমনকি ঘূর্নিঝড় আম্পানে ক্ষতি না হওয়ায় চরটি ঝুঁকিমুক্ত। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, তাদেরকে জোর করা হবে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ইন্টারন্যাশনাল এনজিওগুলো বুঝাচ্ছে ওখানে যেয়ো না, গেলে তোমরা বন্দি হয়ে থাকবা। কিন্তু তারা বন্দি হয়ে থাকবে কেন, আয়ারল্যান্ডে তো লোক থাকে। বরং আয়ারল্যান্ডের চেয়ে ওটা অনেক সুন্দর এলাকা। ওখানে গেলে তারা অর্থনৈতিক কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারবে।
যারা এ ভাসানচরে স্থানান্তরের আপত্তি জানাচ্ছে, তারা ঠিক কাজ করছে না বলেও ক্ষোভ জানালেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এএইচ/এমবি
আরও পড়ুন