ডিজিটাল খাত থেকেই আসবে জিডিপি’র ৬০ শতাংশ
প্রকাশিত : ২০:২৮, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
ডিজিটাল রুপান্তরের ফলে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) যোগ হবে ১ ট্রিলিয়নের বেশি মার্কিন ডলার। ২০২১ সালের মধ্যে জিডিপি’তে যোগ হওয়া অর্থের পরিমাণ হবে প্রায় এক দশমিক ১৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার।
আজ মঙ্গলবার প্রকাশিত এক গবেষণা পত্রে এসব তথ্য উঠে আসে। শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট এবং আন্তর্জাতিক ডাটা কর্পোরেশন (আইডিসি) এর যৌথ উদ্যোগে প্রকাশিত এই গবেষণা পত্রে আরও বলা হয় যে, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে শূন্য দশমিক আট শতাংশ।
এশিয়ার অর্থনীতিতে ডিজিটাল রূপান্তরের গতিতে নাটকীয় পরিবর্তন আসবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে ‘আনলকিং দ্য ইকোনমিক ইমপ্যাক্ট অব ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ইন এশিয়া প্যাসিফক’ নামক এই গবেষণাপত্রে।
এতে বলা হয়, ২০১৭ সালে, এ অঞ্চলের জিডিপি’র ৬ শতাংশ সরাসরি ডিজিটাল পণ্য ও সেবা থেকে এসেছে যা সরাসরি ডিজিটাল প্রযুক্তি যেমন মোবিলিটি, ইন্টারনেট অব থিঙ্কস (আইওটি) ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহারের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে। যেটা ধারণা করা হচ্ছে প্রযুক্তিগত পণ্য ও সেবা থেকে এশিয়ার জিডিপি’ ২০২১ সালের মধ্যে ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
এ অঞ্চলের ১৫টি দেশের মাঝারি ও বৃহৎ সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের ১৫শ’ ৬০ জন ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত প্রণেতাদের নিয়ে জরিপটি পরিচালিত হয়। প্রথাগত ব্যবসায়িক মডেলে ডিজিটাল রূপান্তর দ্রুতগতিতে যে প্রভাব ফেলছে ও ব্যাপকভাবে ‘ডিজিটাল ডিসরাপশন’ হচ্ছে তার ওপরে জোর দিয়ে জরিপটি পরিচালিত হয় বলে এক বিবৃতিতে জানায় মাইক্রোসফট।
ডিজিটাল রূপান্তরের পাঁচটি সুবিধা
গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী, ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দ তাদের প্রচেষ্টার থেকে ইতিমধ্যেই ১৫ থেকে ১৭ শতাংশ উন্নয়ন দেখতে পাচ্ছেন। এসব সুবিধার ফলে তারা আশা করছেন ২০২০ সালের মধ্যে ডিজিটাল ক্ষেত্রে গ্রাহকসেবার বড় ধরনের মানোন্নয়নের মাধ্যমে ৫০ শতাংশ উন্নতি ঘটবে।
এ নিয়ে মাইক্রোসফট এশিয়ার প্রেসিডেন্ট রালফ হপ্টার বলেন, “এশিয়া প্যাসিফিকের অর্থনীতিতে ডিজিটাল রূপান্তরের অত্যন্ত ইতিবাচক ও পরিমাপযোগ্য প্রভাব রয়েছে এবং এটা প্রায় সর্বব্যাপী স্বীকৃত যে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকেই ডিজিটাল হতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, প্রকৃতপক্ষে আমাদের গ্রাহকরা তাদের জীবনে ক্রমবর্ধমান এসব প্রযুক্তি যেমন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন প্রযুক্তি; প্রাত্যহিক জীবনে ডিজিটাল রূপান্তরে ব্যবহার করছেন এবং যেটা সামনে আরও বৃদ্ধি পাবে।’
এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে অর্থনৈতিক সুযোগের সিংহভাগ অর্জন করবেন ডিজিটাল ক্ষেত্রের নেতৃবৃন্দ
যেখানে এ অঞ্চলের ৮৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ডিজিটাল রূপান্তরের যাত্রায় মধ্যপথে রয়েছে, সেখানে মাত্র ৭ শতাংশ এক্ষেত্রে নেতা হিসেবে বিবেচিত হবে। অন্তত, এক তৃতীয়াংশ ডিজিটাল পণ্য ও সেবা নিয়ে এসব সংস্থা আর প্রতিষ্ঠানই সম্পূর্ণ অথবা আংশিকভাবে ডিজিটাল রূপান্তরের কৌশল গ্রহণ করেছে। এছাড়াও, এসব প্রতিষ্ঠান তাদের বিভিন্ন ব্যবসায়িক মুনাফায় এ উদ্যোগে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ উন্নতি দেখছেন।
গবেষণার পূর্বাভাস অনুযায়ী, ডিজিটাল নেতৃবৃন্দরা তাদের অনুসারীদের চেয়ে দ্বিগুণ সুবিধা পাচ্ছেন এবং ২০২০ সালের মধ্যে এটা আরও বৃদ্ধি পাবে। এসব নেতৃবৃন্দের প্রায় অর্ধেকের (৪৮ শতাংশ) সম্পূর্ণরূপে ডিজিটাল রূপান্তরের কৌশল রয়েছে।
এ নিয়ে আইডিসি এশিয়া/প্যাসিফিকের ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন প্র্যাকটিস লিডের রিসার্চ ডিরেক্টর ড্যানিয়েল জো জিমিনেজ বলেন, ‘ডিজিটাল রূপান্তর দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং আইডিসি’র ধারণা অনুযায়ী ২০২১ সালের মধ্যে, ডিজিটাল সেবাদানকারী শিল্পখাতের সেবা, কার্যক্রম এবং সম্পর্কের প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের জিডিপি’র অন্তত ৬০ শতাংশ ডিজিটাল হয়ে যাবে। গবেষণা অনুযায়ী, এক্ষেত্রে নেতৃবৃন্দরা, উৎপাদনশীলতা, ব্যয় কমানো ও গ্রাহক সেবাদানের মাধ্যমে অনুসারীদের চেয়ে দ্বিগুণ সুবিধা লাভ করবেন। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবশ্যই নতুন মেট্রিকস, প্রতিষ্ঠানের কাঠামোর পুনর্বিন্যাস এবং প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্ম নতুন করে সাজাতে হবে।’
ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দের জরিপ অনুযায়ী, ডিজিটাল রূপান্তর সমাজে নিম্নোক্ত শীর্ষ তিনটি সুবিধা নিয়ে আসবে:
১. স্মার্ট ও নিরাপদ শহর
২. আরও বেশি মানসম্পন্ন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি
৩. ফ্রিল্যান্স ও ডিজিটাল কাজের মাধ্যমে মানুষের আয় বৃদ্ধির সম্ভাবনার বৃদ্ধি
এছাড়াও, ৮৫ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, ডিজিটাল রূপান্তরের কারণে আগামী তিন বছরে চাকরি ক্ষেত্রেও অনেক রূপান্তর ঘটবে এবং বর্তমানে বাজারে বিদ্যমান অর্ধেক চাকরি ডিজিটাল যুগের প্রয়োজন মেটাতে মানসম্পন্ন চাকরিতে পরিবর্তিত হবে।
এসএইচএস/টিকে
আরও পড়ুন