ঢাকা, শনিবার   ০২ নভেম্বর ২০২৪

মৃত্যুশয্যায় যে প্রশ্ন রেখে গেলেন হকিং

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:০২, ২২ মার্চ ২০১৮

আমাদের এই ব্রহ্মাণ্ড ধ্বংস হলেও সব কিছু শেষ হয়ে যাবে না। তার পরও অস্তিত্বের সম্ভাবনা আছে। মৃত্যু যখন তাঁর শিয়রে, সেই ফুরিয়ে যাওয়ার সময়েও অঙ্ক কষে তাঁর সেই বিশ্বাসকে কীভাবে প্রমাণ করা যেতে পারে, মৃত্যুশয্যায় লেখা শেষ গবেষণাপত্রে তার উপায় বলে গেছেন বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং।

কিংবদন্তি বিজ্ঞানী হকিংয়ের সেই শেষ গবেষণাপত্রটির শিরোনাম- ‘আ স্মুদ এগজিট ফ্রম ইটার্নাল ইনফ্লেশন?’। বেলজিয়ামে ল্যুভেঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর থিয়োরিটিক্যাল ফিজিক্সের অধ্যাপক টমাস হের্টগকে সঙ্গে নিয়ে লেখা তাঁর এই গবেষণাপত্রটির কাজ হকিং শেষ করেছিলেন গত জুলাইয়ে। কিন্তু, তার পরও সন্তুষ্ট হননি। থেমে থাকেননি। নিজের শেষ গবেষণাপত্রটি নিয়ে কাটাছেঁড়া, সংযোজন, বিয়োজন, সংশোধন, পরিমার্জন করে গেছেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত।

মৃত্যুশয্যাতেও সৃষ্টি রহস্যের জট খোলায় মগ্ন হকিং এতটাই খুঁতখুঁতে ছিলেন যে, অঙ্ক কষে তাঁর বিশ্বাসের সত্যতা বুঝতে পারার পরও গবেষণা পত্রের শিরোনামে প্রশ্ন চিহ্নও রেখে গেছেন। গবেষণা পত্রটি শেষ বারের মতো সংশোধন করেছিলেন গত ৪ মার্চ। অর্থাৎ, তাঁর মৃত্যুর ঠিক দশ দিন আগে।

হকিং লিখেছেন, আমাদের এই ব্রহ্মাণ্ডে যত তারা বা নক্ষত্র রয়েছে, তাদের জ্বালানির সবটুকু শেষ হয়ে গেলে, একদিন এই ব্রহ্মাণ্ড ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু তার পরও সব শেষ হয়ে যাবে না। কারণ, এই ব্রহ্মাণ্ড শুধুই একটা নয়। এমন ব্রহ্মাণ্ড বা ইউনিভার্স আরও আছে। বিজ্ঞানের পরিভাষায় যার নাম মাল্টি-ইউনিভার্স বা ‘মাল্টিভার্স’।

হকিং নিজেও তাঁর এই গবেষণাপত্রটিকে বলেছেন ‘কনজেকচার’। যার অর্থ— অনুমান। তাই সম্ভবত তাঁর গবেষণাপত্রের শিরোনামেও একটি ‘?’ চিহ্ন রেখে গিয়েছেন স্টিফেন হকিং।

আজ থেকে ৩৫ বছর আগে ১৯৮৩ সালে প্রথম ‘নো বাউন্ডারি’ নামে তত্ত্ব দাঁড় করেছিলেন হকিং। তাঁর সহযোগী ছিলেন বিজ্ঞানী জেমস হার্টল। সেই গাণিতিক তত্ত্বে বলা হয়েছিল, ১৩শ সত্তর কোটি বছর আগে বিগ ব্যাং বা মহা বিস্ফোরণের পর সব কিছু সুনসান অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। তার পরের তিন লক্ষ সত্তর হাজার বছর ধরে ওই রকম একটা অদ্ভুত অবস্থা ছিল। আলোর কণা ফোটনও সেই সময় বেরিয়ে আসতে পারেনি। ফলে বিগ ব্যাংয়ের পর তিন লক্ষ সত্তর হাজার বছরের মধ্যে কী কী ঘটেছিল, সে সম্পর্কে এখনও কিছুই জানা যায়নি। কিন্তু তার পরে হঠাৎই একটা বিন্দু থেকে বেলুনের মতো হু হু করে ফুলে ফেঁপে উঠে চার পাশে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করেছিল আমাদের এই ব্রহ্মাণ্ড। যা এখনও ফুলে ফেঁপে উঠে চার পাশে প্রসারিত হয়ে চলেছে। আর সেই প্রসারিত হওয়ার গতি আগের চেয়ে অনেকটাই বেশি। বিজ্ঞানের পরিভাষায় এটাকে বলা হয় ‘ইনফ্লেশন’।

ফুলতে ফুলতে বেলুন যখন এক সময় ফেটে যায়, এই ব্রহ্মাণ্ডেরও দশা এক দিন হবে সে রকমই। কিন্তু সেই তত্ত্ব নিয়ে খুব সমস্যায় প়ড়েছিলেন হকিং। কারণ ওই গাণিতিক তত্ত্ব এ কথাও বলে, বিগ ব্যাং-ও শুধু একটা হয়নি। অনেকগুলো বিগ ব্যাং হয়েছিল, সংখ্যায় যা অসীম। একটা বিগ ব্যাং থেকে যেমন আমাদের একটা ব্রহ্মাণ্ডের জন্ম হয়েছিল, তেমনই সংখ্যায় বিগ ব্যাংও যদিও অসীম হয়ে থাকে, তা হলে আমাদের মতোই অসংখ্য ব্রহ্মাণ্ডের অস্তিত্বের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

কিন্তু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এই গাণিতিক তত্ত্বকে প্রমাণ করে যেতে পারেননি হকিং। বরং তাঁর তত্ত্বের সমালোচকদের বক্তব্য ছিল, অনেক ব্রহ্মাণ্ডের যদি নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ না থাকে, তা হলে আমাদের ব্রহ্মাণ্ডে বসে কোনও পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে আরও বহু ব্রহ্মাণ্ডের অস্তিত্ব প্রমাণ করা সম্ভব নয়। তা যাতে সম্ভব হয় মৃত্যু শয্যায় তার-ই দিশা দেখিয়ে গেলেন হকিং। যেন বলে গেলেন শেষ বলে কিছু হয় না এই অনন্ত ব্রহ্মাণ্ডে বা ‘ব্রহ্মাণ্ডকুল’-এ।

সূত্র: আনন্দবাজার

একে// এআর


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি