ঢাকা, বুধবার   ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪

ময়লা থেকে চার্জ করা যাবে মোবাইল ফোন!

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:০১, ৪ এপ্রিল ২০১৮

মল-মূত্র, পয়ঃ-প্রণালী, এ সবের কথা উঠলে আর যা-ই মনে পড়ুক, নিজের মোবাইল ফোনের ব্যাটারি চার্জ করার কথা মনে করেন কি কেউ? কিন্তু লাইপসিগের বিজ্ঞানীরা ঠিক তাই নিয়েই গবেষণা চালাচ্ছেন৷

লাইপসিগের হেল্মহলটস পরিবেশ গবেষণা কেন্দ্রের একটি শৌচাগার৷ এই খাটা পায়খানায় যা জমা হয়, তা লাগে গবেষণার কাজে৷ গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির নাম ইনস্টিটিউট ফর এনভায়রনমেন্টাল মাইক্রোবায়োলজি৷ বিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখছেন, ইলেক্ট্রোঅ্যাকটিভ ব্যাকটেরিয়া দিয়ে মল থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব কি-না৷

এক্সপেরিমেন্টের আগে স্যাম্পল নিতে হয়৷ লাইপজিগের জার্মান বায়োমাস গবেষণা কেন্দ্রের গবেষক ইয়র্গ ক্রেটসমার বলেন, গোড়ায় একটু ঘেন্না হতো। কিন্তু দু-তিনবার করার পর অভ্যেস হয়ে গেছে৷ আমরা এটাকে বলি সাবস্ট্রেট, এক্সপেরিমেন্টে যা কাজে লাগে৷ আমাদের সহকর্মীরা নিয়মিতভাবে এই পায়খানা ব্যবহার করেন। ফলে আমরা পর্যাপ্ত সাবস্ট্রেট পাই৷

মানুষের মলে প্রধানত পানি, খাবার-দাবারের যে অংশ হজম হয়নি, সে` অংশ, ‘রাফেজ` বা ডায়েটারি ফাইবার, স্নেহজাতীয় পদার্থ ও স্বভাবতই জীবাণু থাকে৷ এই সব জীবাণুরা ভাসা সব পদার্থ থেকে পুষ্টি সংগ্রহ করে৷ সেক্ষেত্রে কিছু কিছু জীবাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন করে৷

বিশেষ বিশেষ জীবাণু যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে, সেটা একশ বছরের বেশি সময় ধরে জানা৷ গত শতাব্দীর ষাটের দশকে নাসা মহাশূন্যে জীবাণুর মাধ্যমে প্রস্রাব থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার চেষ্টা করেছিল৷ এ জন্য জীবাণুদের ইলেকট্রন নিঃসরণ করার ক্ষমতা থাকা চাই৷ হেল্মহলটস পরিবেশ গবেষণা কেন্দ্রের ড. ফাল্ক হার্নিশ বললেন, জীবাণুরা সর্বত্রই আছে, যেমন পাকস্থলী কিংবা মলে, যে কারণে খাটা পায়খানাতেও জীবাণুরা থাকে৷ কিন্তু এই জীবাণুগুলোর বিশেষত্ব হলো এই যে, তারা নিজের অভ্যন্তর থেকে ইলেকট্রন বের করে তা কোষের ঝিল্লির মাধ্যমে বাইরে পাঠাতে পারে৷

জীবাণুগুলো যে সব ইলেকট্রন ছাড়ে, সেগুলোকে একটি ইলেক্ট্রোডে ধরা হয়৷ জীবাণুরা ভাসা পদার্থ খেয়ে ফেলে, অর্থাৎ বর্জ্য অপসারণ করে পানি পরিশোধন করে। অপরদিকে তারা ইলেকট্রন ছাড়ে, অর্থাৎ বিদ্যুৎ উৎপাদন করে৷ এভাবে যে বিদ্যুৎ তৈরি হয়, তা পরিমাণে খুব কম হলেও, ল্যাবরেটরিতে তার পরিমাপ করা যায়৷

বায়ো-ইলেকট্রো-কেমিস্ট ড. ফাল্ক হার্নিশ বলেন, বর্তমানে আমরা মাত্র কয়েক মিলিঅ্যাম্পিয়ার বিদ্যুৎ তৈরি করতে পারি৷ কিন্তু বাইরে যে শৌচাগার দেখেছেন, তার কথা ভাবলে বলতে হয়, আমরা একটা মোবাইল টেলিফোনের ব্যাটারি ১২ ঘণ্টার মধ্যে রি-চার্জ করে দিতে পারি৷

নেগেটিভ চার্জ যুক্ত ইলেকট্রনগুলো পজিটিভ চার্জ যুক্ত ইলেক্ট্রোডের দ্বারা আকৃষ্ট হয়৷ এর থেকে যে কারেন্ট বা বিদ্যুৎপ্রবাহ সৃষ্টি হয়, তা মোবাইল ফোন চার্জ করে। মাইনাস পোলে তৈরি হয় পানি৷ জীবাণুরা আরও ভাসা পদার্থ খাওয়ার ফলে পানি ক্রমেই আরও পরিষ্কার হয়ে ওঠে৷ জীবাণুরা এইভাবে বিদ্যুৎ সৃষ্টি করলে একে বলা হয় একটি মাইক্রোবিয়াল ফুয়েল সেল। অর্থাৎ জীবাণু-পরিচালিত-জ্বালানি-কোষ৷ এটা যাতে অপেক্ষাকৃত অনুন্নত দেশেও সম্ভব হয়, সেজন্য লাইপসিগের বিজ্ঞানীরা এই সংক্রান্ত প্রযুক্তিকে যতদূর সম্ভব সহজ রেখেছেন৷

ড. ফাল্ক হার্নিশ আরও বলেন, আমাদের প্রযুক্তির বিশেষত্ব হলো এই যে, আমরা করোগেটেড কার্ডবোর্ড থেকে ইলেক্ট্রোড তৈরি করি, এখানে যেমন দেখছেন৷ অর্থাৎ বাজারে যেরকম পিচবোর্ড পাওয়া যায়, তা নিলেই চলে৷ পরে তা কাঠকয়লার মতো বাতাসশূন্য অবস্থায় পোড়ালেই ইলেক্ট্রোডের পদার্থ পাওয়া যায়৷ একটা কম খরচের লো-টেক পণ্য৷``

জীবাণু-পরিচালিত-জ্বালানি-কোষের কথা ভাবলে পয়ঃপদার্থ সম্পর্কে ধারণাই পাল্টে যায়৷ কেননা এই কোষ পয়ঃপদার্থ থেকে জ্বালানি সৃষ্টি করে এবং পানিকে পরিশুদ্ধ করে। শুধু শৌচাগারেই নয়, বড় বড় সিউয়েজ ওয়ার্কস-এও বটে৷

সূত্র: ডয়চে ভেলে।

একে// এআর


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি