ঢাকা, শনিবার   ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

ইন্টারনেটে কে আপনাকে অনুসরণ করছে?

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:৩৯, ১০ এপ্রিল ২০১৮

ফেসবুক তথ্য কেলেঙ্কারির ঘটনা যে বিষয়টিকে সামনে নিয়ে এসেছে তা হলো অনলাইনে আমাদের সব পদক্ষেপ নজরদারি করছে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই সামাজিক নেটওয়ার্ক। কিন্তু শুধু এই সোশ্যাল মিডিয়া জায়ান্টই যে গোপনে সর্বদা আপনার কার্যক্রম অনুসরণ করছে তা নয়। আরও ডজন-খানেক কোম্পানি আমাদের ডিজিটাল ভুবনে ঘোরাফেরার নানা তথ্য সংগ্রহ করছে এবং সারাক্ষণ মনিটর করে চলেছে কয়েক ডজন কোম্পানি বা ট্র্যাকার।

সাধারণত যেসব ওয়েবসাইটে বেশি যাওয়া হয় এবং যেসব অ্যাপস সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে সেগুলো ব্যবহারকারীর সম্পর্কে তথ্য নিয়ে নিচ্ছে। অনেক মানুষই এ বিষয়ে সচেতন নয় যে কিভাবে তাদের ওপর "নজরদারি" করা হচ্ছে এবং কাদের এসব তথ্য দেখার ক্ষমতা আছে।

যদি আপনি জানতে চান যে ইন্টারনেটে কে আপনাকে অনুসরণ করছে, তাহলে বেশিরভাগ ব্যবহারকারীর জন্যই উত্তরটি হচ্ছে, সেটা যে কেউ হতে পারে।

ওয়েব ব্রাউজিং ইতিহাস নিবিড়ভাবে মনিটর করতে পারে এমন টুলসকে বলা হয় "স্নুপিং আর্সেনাল। গণহারে তথ্য সংগ্রহের এই অস্ত্রটি মানুষের কর্মকাণ্ডের ব্যাপক তথ্য মজুদ করে। যেমন কোন ধরনের ওয়েবসাইটে আমরা বেশি যাচ্ছি কিংবা কি ধরনের ডিভাইস ব্যবহার করছি ইত্যাদি।

কোনও ওয়েবসাইটের ডজন ডজন ট্র্যাকার থাকে বিভিন্ন উদ্দেশ্যে। একটি টুল হয়তো সাইটের মালিককে ট্রাফিক ভলিউম বা ব্যবহারকারীদের সংখ্যা সম্পর্কে ধারণা দেবে। কিন্তু কোম্পানিগুলো অধিকাংশই তাদের ব্যবহারকারী কারা, বয়স কেমন, কোথায় থাকে, কি পড়ছে, কোন বিষয়গুলোতে আগ্রহ ইত্যাদি জানার জন্য এসব টুলস ব্যবহার করে।

২০১০ সালে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক গবেষণায় দেখা যায় যে, আমেরিকার জনপ্রিয় ৫০টি ওয়েবসাইটের গড়ে ৬৪ ট্র্যাকার রয়েছে।

কেন এত দীর্ঘ সংখ্যা? কারণ এসব তথ্য তারা পণ্যদ্রব্য হিসেবে বিক্রি করতে পারে, বিজ্ঞাপনদাতাদের কাছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে, এমনকি সরকারের কাছেও।

ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের তথ্য সংগ্রহের আরেকটি পন্থা হচ্ছে ফ্রি ইমেইল সার্ভিস থেকে তাদের ইনবক্স স্ক্যান করার মাধ্যমে, যেমন গুগলের জিমেইল। ইমেইল আদান-প্রদানের জন্য জনপ্রিয় জিমেইল। গত জুনে গুগল কোম্পানি ঘোষণা দিয়েছিল যে তারা এই ধরনের চর্চা বন্ধ করবে।।

বেশিরভাগ সময়ই এসব কাজ আমাদের কাছে দৃশ্যমান নয় কিন্তু ট্র্যাকারদের খুঁজে বের করা সহজ যদিও একেবারে প্রথম দিকে তাদের সন্দেহজনক মনে নাও হতে পারে।

গতবছর টুইটার কর্তৃপক্ষ ঘোষণা দেয়, তারা `ডু নট ট্র্যাক ইনিশিয়েটিভ` এ তাদের সমর্থন তুলে নিয়েছে। ওই ইনিশিয়েটিভ ছিল ইন্টারনেটে ব্যবহারকারীদের অনলাইন গতিবিধি অনুসরণ করা থেকে বিরত রাখার একধরনের পলিসি। কোনও কোনও ট্র্যাকার আঠার মতো লেগে থাকে এবং সর্বদা ইন্টারনেটে কার্যকলাপ নজরদারি করে।

বর্তমান সময়ে আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন বেশি ব্যবহার করে থাকেন।

গতবছর যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক শিক্ষাবিদ নার্সেও ভ্যালিনা রদরিগেজ এবং শ্রীকান্ত সুন্দারসানের একটি গবেষণা প্রকাশনায় দাবি করা হয়, ১০টির মধ্যে ৭টির বেশি স্মার্টফোন অ্যাপস ব্যক্তিগত তথ্য দিয়ে দিচ্ছে তৃতীয় কোনও পক্ষের কাছ।

তারা লেখেন, যখন মানুষ কোনও নতুন অ্যান্ড্রয়েড কিংবা আইও-এস অ্যাপস ইন্সটল করে তখন সেটি গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহারের অনুমতি চায়। যথাযথভাবে কাজ করার স্বার্থে কিছু কিছু তথ্য অ্যাপসগুলোর প্রয়োজনও হয়। জিপিএস ডাটা ব্যবহার করে লোকেশন খুঁজে বের করতে না পারলে লোকেশন ম্যাপ ঠিকমতো কাজ করতে পারবে না। কিন্তু একবার একটি অ্যাপ সেই তথ্য নেওয়ার অনুমতি পেয়ে গেলে সেটি আপনার তথ্য অ্যাপ ডেভেলপার চাইলে যে কারও সঙ্গে শেয়ার করতে পারবে। যেমন তৃতীয় কোনও পক্ষ ট্র্যাক করতে পারবে আপনি কোথায় আছেন, কত দ্রুত সরে যাচ্ছেন, এবং আপনি কি করছেন।

অনলাইনে বিভিন্ন কম্পানির প্রাইভেসি পলিসি সংক্রান্ত বিবরণ থাকে হাজার হাজার শব্দে লেখা এবং ভিন্ন ভিন্ন পণ্যের জন্য ভিন্ন ভিন্ন।

২০১১ সালে ব্রিটিশ এক জরিপে দেখা গেছে, যখন কেউ ইন্টারনেটে কোনও পণ্য বা সেবা কেনেন তার কেবল সাত শতাংশ গ্রাহক অনলাইন টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনস (বিভিন্ন শর্তাবলী) পড়েন। মোবাইল ফোন এবং ট্যাবলেট ক্রমাগতভাবে আমাদের অবস্থান অনুসরণ করতে পারে এবং কার্যকরভাবে তা শেয়ারও করতে পারে।

গ্রাহক তাদের জিপিএস ডাটায় উদাহরণ স্বরূপ ম্যাপ সিলেক্ট করলো, নিয়মিতভাবে ভিজিট করা জায়গাগুলো মনিটর করার অপশনটি বন্ধ করে দিল সেইসঙ্গে লোকেশন অপশনও বন্ধ করে দেওয়া হলো। প্রকৃতপক্ষে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা প্রায়ই এগুলো বন্ধ রাখার বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকেন।

যদিও এতকিছুর পরও আপনার মোবাইল ফোনটি কিন্তু জানান দিয়ে দেবে আপনি আসলে কোথায় আছেন। গবেষণা সেটাই বলছে।

প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির একটি দল পরীক্ষা করে দেখেছে এবং লোকেশন, জিপিএস এবং ওয়াইফাই বন্ধ রাখার পর একটি মোবাইল ফোনকে তারা ট্র্যাক করে তার অবস্থান বের করতে সক্ষম হয়েছে।

তথ্য সংগ্রহ করার পদ্ধতিগুলো জটিল। অনেক ওয়েবসাইট ও মোবাইল অ্যাপস তৈরি হয়, অন্য কোম্পানিগুলোর তৈরি করা বিভিন্ন প্রোগ্রামের সমন্বয়ের মাধ্যমে করে যা শূন্য থেকে নতুন কিছু তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় সময় এবং অর্থ খরচ বাচায়। সেগুলো সংরক্ষণ করা হয় ডিজিটাল লাইব্রেরিতে। এইসব প্রোগ্রাম স্পর্শকাতর অনেক তথ্য সংগ্রহ করতে সক্ষম। সেই সঙ্গে ব্যবহারকারীদের বিস্তারিত তথ্য-সমেত ডিজিটাল প্রোফাইল তৈরি করতে পারে তাদের কোনোরকম অনুমতি ছাড়াই।

কিভাবে? ডিজিটাল লাইব্রেরি কোম্পানিগুলো অনেক ক্লায়েন্টের কাছে এসব তথ্য দিতে পারে। এর মানে এমন হতে পারে যে, আমাদের লোকেশন চাইছে যে অ্যাপটি, তার নির্মাতা এবং আমাদের ফোনের কন্টাক্ট নাম্বার চাইছে যে অ্যাপ নির্মাতা- তারা উভয়ই একই ডিজিটাল লাইব্রেরির ওপর নির্ভর করছে।

ইউজাররা কখনওই জানতে পারবে না। কারণ অ্যাপস গুলোর কোনও প্রয়োজন পড়ছে না তারা কোন সফটওয়্যার লাইব্রেরি ব্যবহার করছে তা মোবাইল ইউজারকে জানানোর, বলেন গবেষক দুজন।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এসব নজরদারি বা অনুসরণের ঘটনার পেছনে বিজ্ঞাপনের বিষয়টি রয়েছে কিন্তু যারা এই বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তিতে আছেন তাদের জন্য এটি কমানোর ব্যবস্থাও আছে।

সবার আগে দরকার "ডু নট ট্র্যাক" ফিচার সচল করা এবং সংশ্লিষ্ট ওয়েবসাইটকে বলে দেওয়া যে, আপনাকে অনুসরণ করা হোক সেটি আপনি চাইছেন না। ব্রাউজারের ক্ষেত্রে ট্র্যাকারদের ওপর নজর রাখবে এমন সার্ভিস ব্যবহার করা যায়।

তবে অ্যাপসের ক্ষেত্রে বিষয়টি আরও জটিল। স্পর্শকাতর তথ্য ব্লক করার ফলে অ্যাপস ব্যবহারের পারফর্ম্যান্স বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

কিন্তু মার্কিন সাংবাদিক ও লেখক আসলি ওমুর এর এ বিষয়ে যে ১২টি নির্দেশনা দিয়েছেন, সেখান থেকেই বলা যায়- সত্যিই যারা প্যারানয়েড, তারা সব ধরনের প্রযুক্তি ত্যাগ করুন। কেবল ব্যবহার করুন কাগজ, কলম, টাইপ রাইটার এবং সেই প্রাচীন ফ্যাশনের মতো নিজেদের মধ্যে ব্যক্তিগত আলাপ ও ছবি আদান প্রদান চালাতে থাকুন।
তথ্যসূত্র: বিবিসি।

একে/ এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি