ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪

ডেলিভারি রোবট তৈরি হবে বাংলাদেশে

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি  

প্রকাশিত : ১০:২৬, ৩১ মার্চ ২০২২ | আপডেট: ১০:৫৭, ৩১ মার্চ ২০২২

অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে অগ্রসর বাংলাদেশ আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারেও এগিয়ে যাচ্ছে। দেশে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে আইটি খাত। এ খাতে এবার অবাক করার মত বিষয় যুক্ত হতে যাচ্ছে। বিদেশের বিখ্যাত কোম্পানিতে চাকরি শেষে দেশে ফিরে ৫ বিশেষজ্ঞ সফটওয়্যার বিজ্ঞানী বিশ্বের সর্বশেষ প্রযুক্তির ডেলিভারী রোবট তৈরির এখন দ্বারপ্রান্তে। 

বুধবার বিকালে সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম পাড় সয়দাবাদে ‘সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চল’ পরিদর্শন করেছেন ওই টিমের অন্যতম বিজ্ঞানী মারুফ মোঃ মনিরুজ্জামান আব্বাসী। 

এ সময়ে অর্থনৈতিক অঞ্চলের পরিচালক ও জাবির সিনেটর শেখ মনোয়ার হোসেন এবং স্থানীয় সাংবাদিকদের সাথে তিনি মত বিনিময় করেন। 

তিনি জানান, বর্তমানে ২ ধরনের রোবট ব্যবহার হচ্ছে। একটি হচ্ছে কারখানায় উৎপাদনে অপরিবর্তনশীল পরিবেশে। সেটাতে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার অতোটা ব্যবহার হয়না। প্রোগ্রাম অনুযায়ী পরিচালিত হয়। আর দ্বিতীয়টি পরিবর্তনশীল পরিবেশে ব্যবহারের জন্য। ওই ধরনের রোবটে অনেক বেশি কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করতে হয়। যা ৩ থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে গিয়ে পণ্য সরবরাহ করে আসতে পারবে। 

বিজ্ঞানী মারুফ মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, “অত্যাধুনিক এই রোবটে দেয়া থাকে ক্যামেরা, ওগট, মাথায় লাইডার, রাডার, রিসিভার ও অন্যান্য সেন্সর। রোবটটি ক্যামেরায় দেখে জিপিএস ও অন্যান্য সেন্সরের মাধ্যমে পথ পরিকল্পনা গ্রহণ করে নিজে নিজেই সামনের দিকে অগ্রসর হয়। অন্য যেকোন প্রতিবন্ধক যেমন মানুষ, গাড়ি সামনে দিয়ে যাবার সময় দুর্ঘটনায় পতিত না হতে আগেই থেমে যায়। এরপর সুবিধা মত পৌঁছে যায় গন্তব্যে। যা অনেকটা ফুল থেকে মৌমাছির মধু সংগ্রহের মত।”

তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে এ ধরনের রোবট তৈরি করতে ব্যয় হয় ৫০ হাজার থেকে ৭০ হাজার ডলার। তা অনেকটা ব্যয়বহুল। এ কারণে ২০২০ সালের নভেম্বরে এ ধরনের রোবট তৈরির কাজ শুরু করে তা মার্চ মাসে এসে সফল হই। তৈরি করা রোবটটি আমেরিকার অসিংটনের রেডমন্ট শহরের ১.২ কিলোমিটার দূরে পণ্য সরবরাহ করে আসে।”

২০২১ সালের ডিসেম্বরে দেশে ফিরে সফট্ওয়্যার বিশেষজ্ঞ ৪ বন্ধু নওশাদ সজিব, সৌমেন দাস, নিহাল বাইগ, মেহেদী হাসান রুপককে সাথে নিয়ে তিনি একটি প্রতিষ্ঠান শুরু করেন। এখানে বিশ্বের আধুনিক অটোলোমাস ডেলিভারী রোবট তৈরির গবেষণা এখন শেষ পর্যায়ে। 

সফটওয়্যার বিজ্ঞানী মারুফ মোঃ মনিরুজ্জামান আব্বাসী

হার্ডওয়ারের ৩নং ভার্সনে এই রোবট ৩ কিলোমিটার দূরে পণ্য সরবরাহ নিয়মিতভাবে ডেলিভারি দিতে সক্ষম। রোবট তৈরিতে খরচ কমিয়ে আনার লক্ষে মূল্যবান লাইডারের ব্যবহার না করে অন্য সেন্সরের ব্যবহার করা হয়েছে। যাতে মাত্র ২ হাজার ডলারে এই রোবট তৈরি করা যাবে।

মনিরুজ্জামান আব্বাসী বলেন, “রোবটিং কারখানা স্থাপনের লক্ষে সম্ভবতা যাছাই করতে আমরা সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন পরিদর্শনে এসেছি। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সাথেও যোগাযোগ হচ্ছে। এখানে স্বল্পমূল্যে যে ম্যান পাওয়ার পাওয়া যাবে, অন্য দেশে তা সম্ভব না। প্রশিক্ষন দিয়ে দেশের শ্রমিকদের আন্তর্জাতিক মানের উপযোগী করে তুললেই হলো।”

পৃথিবীর সবচেয়ে প্রযুক্তি নির্ভর রোবট স্বল্পমূল্যে রোবট দেয়ার আশা করেন তিনি।

রোবট বিশেষজ্ঞ মারুফ মোঃ মনিরুজ্জামান আব্বাসীর জন্মস্থান সিরাজগঞ্জ শহরের থানা পাড়ায়। ২০০৪ সালে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কম্পিউটার সাইন্সে মাস্টার্স করে চলে যান কানাডা। এরপর সেখানে বিভিন্ন কোম্পানিতে চাকরি করে আমেরিকার বিশ্বখ্যাত সফট্ওয়্যার কোম্পানী অ্যামাজানে যোগদান করেন। সেখানে তিনি রোবটিক সফট্ওয়্যার ডেভলপিং ইঞ্জিনিয়ার পদে কর্মরত ছিলেন।

সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলের পরিচালক শেখ মনোয়ার হোসেন জানান, আমাদের অর্থনৈতিক অঞ্চল ১ হাজার ৪১ একর জায়গায় দেশের ১১টি শিল্প পরিবারের অংশীদারিত্বে গড়ে উঠছে। এর প্রায় ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এখানে সড়ক, রেল ও জলপথে মালামাল আমদানী-রপ্তানীর সুযোগ থাকায় ইতিমধ্যেই জমি বরাদ্দ নিয়েছে বিনিয়োগকারীরা।

তিনি জানান, রোবট কারখানার জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল খুবই উপযোগী বলে আশা ব্যক্ত করেছেন সফট্ওয়ার বিশেষজ্ঞ মারুফ মোঃ মনিরুজ্জামান। এটি হলে দেশ অনন্য উচ্চতায় প্রশংসিত হবে বিশ্বে। এখানে কারখানা স্থাপন শুরু হলে প্রায় ৫ লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হবে আশাবাদ ব্যক্ত করেন শেখ মনোয়ার হোসেন। 

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি