ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বিটকয়েনে হুণ্ডি, টার্গেট ফ্রিল্যান্সারদের ডলার

আল আমীন আজাদ

প্রকাশিত : ১৮:৩২, ১৬ মে ২০২৪ | আপডেট: ২০:৫৩, ১৯ মে ২০২৪

ডিজিটাল মিডিয়া এক্সপার্ট। বাংলা সাংবাদিকতায় কিভাবে কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার করা যায়, তা নিয়ে কাজ করছেন তিনি।

ডলার সংকট নিরসনে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা রফতানি বৃদ্ধি ও বৈধ পথে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স আনতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এই সংকট নিরসনে ফ্রিল্যান্সারদের ভূমিকাও কম নয়। কিন্তু ফুসলিয়ে, ভুল বুঝিয়ে তাদের কষ্টার্জিত অর্থ বিটকয়েনসহ অন্যান্য ডিজিটাল মুদ্রায় বিনিয়োগ করে হুণ্ডির মাধ্যমে দেশে অর্থ আনতে প্ররোচিত করছে একটি চক্র। ফলে দেশ বঞ্চিত হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা থেকে আর তারাও এসব চক্রের মাধ্যমে প্রতারিত হচ্ছেন হরহামেশাই। এই চক্রকে দ্রুত সময়ের মধ্যেই আইনের আওতায় আনার দাবি সংশ্লিষ্টদের।

অনলাইনে কর্মরত অনেক ফ্রিল্যান্সার পেশাজীবিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনলাইনে সক্রিয় একটি চক্রের সদস্যরা দুবাই থেকে অবৈধ অনলাইন জুয়ার ব্যবসা পরিচালনা করছে দেশে। আর তারা এজেন্ট ছড়িয়ে দিয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। যার ফলে এখন স্কুলের বাচ্চা থেকে শুরু বিভিন্ন বয়সী মানুষ এই জুয়ার খেলায় আসক্ত হয়ে সব হারাচ্ছেন। জুয়া যেন এখন দেশের সব জায়গায় একটা নতুন আসক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, এই অনলাইন জুয়ার মূলহোতা সাইফুল ইসলাম। ঢাকার গুলশানে অফিস খুলে এবং নিজে ইমর্পোটার পরিচয়ের আড়ালে শত শত ফেইসবুক একাউন্ট খুলে ফ্রিল্যান্সারদের ফেইসবুক ম্যাসেজে অধিক লাভের প্রলোভন দেখিয়ে অবৈধ ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েন কেনাতো সাইফুল। এরপর নিজেকে ব্যবসায়ী দেখিয়ে কিছু নগদ টাকা দিয়ে ডলার কিনে বাকি অর্থ বিভিন্ন অবৈধ ভার্চুয়াল মুদ্রাতে বিনিয়োগ করাতো। আর অধিক লাভের আশায় তার ফাঁদে পরে অনেকে পুঁজি হারিয়ে এখন অসহায়।

অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম

অভিজ্ঞতা থেকে ভুক্তভোগিরা জানাচ্ছেন, অধিক লাভের আশায় লোভে পড়ে তারা বৈধ পথে দেশে ডলার না এনে বিদেশে ভার্চুয়াল কারেন্সিতে বিনিয়োগ করে প্রতারণার শিকার হয়েছেন, এই কথা তারা কাউকে লজ্জায় বলতেও পারছেন না। কোনো উচ্চবাচ্য করলে তাদেরকে মামলাসহ বিভিন্নভা‌বে ভয়ভীতি ও হামলার হুমকি দেয় সাইফুল। তাছাড়া বাংলাদেশে বিটকয়েনসহ বিভিন্ন ডিজিটাল মুদ্রা কেনা বেচা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী আইনত দণ্ডনীয়। ফলে বেশিরভাগ ভুক্তভোগি আইনের আশ্রয় নিতে উৎসাহি হচ্ছেন না। 

রফিক মোহাম্মদ ভূইয়া নামের এক ফ্রিল্যান্সার ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্টের কাজ করেন। তার দাবি সাইফুল তাকে নগদ ৩ লাখ টাকার লাভ দেখিয়ে কষ্টার্জিত ডলার বিদেশি একটি একাউন্টে নেয়।  সে ২ মাস পর বিটকয়েন থেকে টাকা ফেরত দেবে জানায়। এরপর টাকা চাইতে গেলে হুমকি দিয়ে ভয় দেখায় অভিযুক্ত সাইফুল।

অভিযোগের বিষয়ে জান‌তে সাইফুলের সা‌থে মু‌ঠো‌ফো‌নে যোগা‌যোগ ক‌রা হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে সব অভিযোগ মিথ্যা, এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না তিনি। এমনকি বিটকয়েন কি সে সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞতা প্রকাশ করেন সাইফুল।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি ও ক্রাইম ইউনিটের এসপি নাজমুল ইসলাম ব‌লেন, অনলাইন প্রতারণা, জুয়ার বিরু‌দ্ধে আমা‌দের অভিযান অব‌্যাহত আ‌ছে এবং  ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে অনেক অপকর্ম ও প্রতারণা করা হচ্ছে। তি‌নি ব‌লেন, অনলাইন জুয়া একদম নিষিদ্ধ, দেশের আইন মোতাবেক আমরা এর আগেও বেশ কয়েকবার অভিযান করেছি। আমাদের এ ধরনের অভিযান আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।

সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে এ ধরনের অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে যে কাউকেই আইনের আওতায় আনা যাবে। মানি লন্ডারিং এবং আর্থিক জালিয়াতি কারণে দেশের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে, এতে বাংলাদেশের রেমিটেন্সের উপর প্রভাব পড়ছে। তাই এদের ছাড় দেয়ার কোন সুযোগ নেই। তিনি জানান, ভুক্তভোগীরা নিকটস্থ থানায় অভিযোগ করার পাশাপাশি সিটিটিসি অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের আইনের আওতায় নেয়া হবে।

নাজমুল ইসলাম আরো বলেন, বিটিআরসির সহযোগিতায় এখন পর্যন্ত তিন হাজারের বেশি অনলাইন জুয়ার সাইট বন্ধ করা হয়েছে। আর শুধুমাত্র ডিএমপি থে‌কেই এই অর্থবছ‌রে এখন পর্যন্ত অর্ধশত জুয়ারী ও মানি লন্ডারিং এর সাথে জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, এ ধরণের কিপ্টোকারেন্সির লেনদেন সম্পূর্ণ অবৈধ। আর এ ধরণের অবৈধ লেনদেন করে কেও ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার বৈধ সমাধান পাওয়ার সুযোগ নেই। এ ব্যাপারে এর আগেও সতর্কবার্তা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

সংশ্লিষ্টরা জানায়, বাংলাদেশ বর্তমানে ১.৯ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা) আয় করছে। প্রধানমন্ত্রী আগামী ৫ বছরে এ খাতের আয় ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীতকরণের নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনা বাস্তবায়নে ফ্রিল্যান্সারদের হুণ্ডি বন্ধে কোনো বিকল্প নেই।

/আআ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি