বেসিসের লক্ষ্য ও প্রত্যাশা পূরণ করতে চায় ‘উইন্ড অব চেঞ্জ’
প্রকাশিত : ০০:০৬, ২৬ মার্চ ২০১৮
আগামী ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের বাণিজ্য সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এর কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচন। এতে দোহাটেক নিউ মিডিয়ার চেয়ারম্যান লুনা শামসুদ্দোহার নেতৃত্বে অংশ নিয়েছে ‘উইন্ড অব চেঞ্জ’ প্যানেল। বেসিসের মূল্য লক্ষ্য ও সদস্যদের প্রত্যাশা পূরণ করতে চায় প্যানেলটি।
‘নতুন উদ্যমে, নবরূপে’স্লোগানকে সামনে রেখে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে উইন্ড অব চেঞ্জ। এই প্যানেলে প্রযুক্তি খাতে অভিজ্ঞ সফল ব্যবসায়ী কিন্তু বেসিস নির্বাহী কমিটি নির্বাচনে নতুন এমন এক ঝাঁক উদ্যমী প্রার্থী রয়েছেন। প্যানেলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন- ড্যাফোডিল ফ্যামিলির গ্রুপ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, ডিভাইন আইটি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকবাল আহমদ ফখরুল হাসান (রাসেল), এনরুট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু দাউদ খান, স্টার কম্পিউটার সিস্টেমস লিমিটেডের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) রেজওয়ানা খান, ইনোভেশন ইনফরমেশন সিস্টেম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সানোয়ারুল ইসলাম, রাইট ব্রেইন সল্যুউশন লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নূর মাহমুদ খান এবং এ আর কমিউনিকেশনসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এম আসিফ রহমান।
বেসিসের যে পরিবর্তনে কাজ করবে উইন্ড অব চেঞ্জ
বেসিসের সদস্যরা যেসব প্রত্যাশা করেন সেসব বিষয় নিয়েই কাজ করার অঙ্গীকার করেছে প্যানেলটি। এর মধ্যে রয়েছে- শুধুই ইভেন্ট আয়োজন নয়, এর মাধ্যমে ব্যবসার প্রসার ঘটানো; শুধুই ‘হাইপ’ তৈরি করা নয় এর ফলাফল তৈরি করা; শুধুই প্রতিশ্রুতি নয়, তার বাস্তবায়ন ঘটানো; আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রিতার পরিবর্তে সদস্য সেবা দ্রুত ও সহজীকরণ এবং শুধু নীতিমালা প্রণয়ন নয়, এর বাস্তবায়ন ঘটানো।
বেসিস সদস্যরা যেসব প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন তা দূর করা
বেসিস সদস্যরা যেসব বিষয়গুলোতে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন সেগুলো দূর করতে কাজ করবে উইন্ড অব চেঞ্জ প্যানেল। এসব প্রতিবন্ধকতার মধ্যে রয়েছে- “সদস্যরা নতুন ব্যবসা ও সম্প্রসারণের সুযোগ এবং বাজারে প্রবেশাধিকার পান না। অভ্যান্তরীণ বাজারে প্রবেশাধিকার সীমিত; বাজারে বিদেশি প্রতিষ্ঠান এবং বিদেশি পণ্যের আধিপত্য অনেক বেশি (সরকারি এবং বেসরকারি উভয় ধরণের প্রকল্পেই); যোগ্যতাহীন প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্বাভাবিক ‘প্রাইস কোটেশন’; সরকারি সহায়তা ও প্রকল্পগুলোতে স্বচ্ছতা ও ন্যায্য প্রবেশাধিকারের অভাব; দক্ষ লোকবলের অভাব (মূলত সিনিয়র/মধ্যম লেভেলে, প্রকল্প/পণ্য ব্যবস্থাপনা, বিক্রয় ইত্যাদি ক্ষেত্রে); আউটসোর্সিং বাজার সীমিত হয়ে পড়েছে এবং মুনাফা কমে যাচ্ছে; অনুমতি ছাড়াই এক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য প্রতিষ্ঠান কর্মী নিয়ে যাচ্ছে (বিশেষ করে ভালো কর্মীগুলো); সীমিত ব্যাংক লোন এবং ভেঞ্চার ফান্ডিং সুবিধা, ইইএফ এবং সরকারি অন্যান্য তহবিল সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা; ট্যাক্স/এআইটি এবং ভ্যাট ইস্যুতে ভোগান্তি (প্রতিষ্ঠানের ক্লায়েন্ট এবং ট্যাক্স অফিসার উভয়ের মাধ্যমে) এবং অবাণিজ্যিক এলাকায় অফিস পরিচালনা করতে প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হওয়া”। এসব প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে অগ্রাধিকারভিত্তিতে কাজ করার কথা জানিয়েছে প্যানেলটি।
সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে ‘উইন্ড অব চেঞ্জ’ এর প্রতিশ্রুত উদ্যোগ
বেসিসের সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য নতুন ব্যবসা ক্ষেত্র তৈরিতে এবং সফটওয়্যার ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে কাজ করতে ১২টি প্রস্তাবনা দিয়েছে প্যানেলটি। উইন্ড অব চেঞ্জ বলছে- (১) সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ‘ইনসোর্সিং’ জনপ্রিয় করতে বেসিস রিসোর্স শেয়ারিং হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে, যেন সদস্যদের প্রকল্পগুলোতে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে পারে। এ প্রক্রিয়ায় ক্ষুদ্র ও মাঝারি সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ব্যবসার নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে। (২) বেসিস দেশের পেশাদারি ডিজিটাল মার্কেটিং প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় সদস্যদের অনলাইন মার্কেটিং সুবিধা দেবে। এজন্য ‘ডিজিটাল প্রমোশন অ্যাডভাইজরি এবং সাপোর্ট সার্ভিস’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। এর মাধ্যমে সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো ডিজিটাল মিডিয়ায় তাদের পণ্য/সেবার প্রচার পেশাদারিভাবে এবং স্বল্পমূল্যে করার সুবিধা পাবে। (৩) সদস্যদের পণ্য ও সেবার বাজার বৃদ্ধিতে বাণিজ্য সংগঠনসমূহ এবং বিভিন্ন ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করা হবে (যেমন সিটিও ফোরাম, আইসিএবি, ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট, এইচআর প্রফেশনাল গ্রুপ ইত্যাদি)। (৪) সফটওয়্যার বিষয়ে বাজার সচেতনতা সৃষ্টির জন্য প্রতিমাসে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রির নেতৃবৃন্দ এবং সম্ভাব্য গ্রাহকদের (যেমন- ব্যাংক, ইউনিভার্সিটি, গার্মেন্টস, ফার্মাসিটিক্যাল ইত্যাদি) নিয়ে যৌথ সভার আয়োজন করা হবে। (৫) নতুন নতুন প্রযুক্তি নিয়ে সম্মেলনের আয়োজন করা হবে (যেমন ব্যাংকিং ইন্ডাস্ট্রি সিকিউরিটি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবটিক্স, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ইন্টারনেট অব থিংস, ব্লক চেইন, ডাটা সায়েন্স প্রভৃতি)। (৬) প্রতি মাসে ‘মেম্বার টক’ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফল সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ অনুষ্ঠানে তাদের ব্যবসায়িক মডেল, আইডিয়া ও অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে। মেম্বার টেক অনুষ্ঠানটি সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভ সম্প্রচার এবং অন্যান্য ডিজিটাল মিডিয়ায় প্রচার করা হবে। (৭) বেসিস সফটএক্সপোর ধরণ এবং ফরম্যাট পরিবর্তন করা হবে যেন এটি পুরোপুরি বিটুবি মার্কেট প্লেসের রূপ নিতে পারে। বেসিসের ওয়েবসাইট নতুন করে সাজানো হবে যাতে সদস্যরা তাদের পণ্য ও সেবা সঠিকভাবে ‘প্রমোট’ করতে পারে। (৮) সদস্যদের উপযুক্ত পরামর্শ ও দিকনিদের্শনা দিতে ‘প্রোডাক্ট ফোরাম’ গঠন করা হবে, যাতে সার্ভিস কোম্পানিগুলো তাদের সার্ভিসগুলোকে প্রোডাক্ট হিসেবে রুপান্তর করতে পারে। (৯) বাজার স¤প্রসারণে ঢাকার বাইরে আঞ্চলিক কার্যক্রম বাড়ানো হবে (যেমন: চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, রাজশাহী) এসএমই এবং সোহো সেগমেন্ট টার্গেট করে। (১০) দেশের বাইরেও বেসিসের ‘লিয়াজো অফিস’ খোলা হবে (যেমন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ইত্যাদি)। এ কার্যক্রমে প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও যুক্ত করা হবে। (১১) নতুন আন্তর্জাতিক বাজারের সন্ধান করা হবে (যেমন দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য) এবং সেসব দেশের সংশ্লিষ্ট আইটি অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে বেসিসের অংশীদারিত্ব এবং নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা হবে। (১২) বিদেশি সফটওয়্যারের আগ্রাসন থেকে স্থানীয় বাজারকে রক্ষা করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বিদেশি সফটওয়্যারের অবৈধ আমদানি সঠিকভাবে শনাক্ত করতে ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আইসিটি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও এনবিআর-এর সঙ্গে যৌথভাবে বেসিস কাজ করবে।
বেসিসকে আরো কার্যকরী এবং সদস্যবান্ধব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে যেসব কাজ করবে উইন্ড অব চেঞ্জ প্যানেল
বেসিসকে আরও বেশি কার্যকর এবং সদস্যবান্ধব করতে ১০টি প্রস্তাবনা দিয়েছে প্যানেলটি। এগুলো হল-(১) বেসিসে একজন ‘প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা’ নিয়োগ দেওয়া হবে এবং বেসিস সচিবালয় পেশাদারিভাবে পরিচালনা করা হবে। (২) বেসিস সদস্যদের নিয়মিত ‘ত্রৈমাসিক বৈঠক’এর আয়োজন করা হবে। (৩) বেসিসের মাসিক কার্যক্রমের প্রতিবেদন সদস্যদেরকে পাঠানো হবে। (৪) স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাগুলোতে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ‘অনলাইন মিটিং’ সুবিধা চালু করা হবে। (৫) সদস্যদের জন্য বিভিন্ন ধরণের পুরস্কার ও স্বীকৃতি প্রদান করা হবে (বেস্ট প্রোডাক্ট অ্যাওয়ার্ড, বেস্ট ওয়ার্কপ্লেস অ্যাওয়ার্ড, বেস্ট আইটি ইউজ অ্যাওয়ার্ড)। (৬) সদস্যদের বিনোদনের জন্য ‘বেসিস রিক্রিয়েশন ক্লাব’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। (৭) বেসিস পরিচালকদের জন্য অফিস টাইম চালু করা হবে। প্রত্যেক পরিচালক সপ্তাহে একটি নির্দিষ্ট সময়ে বেসিস কার্যালয়ে উপস্থিত থাকবেন। (৮) সদস্যদের জন্য একটি ‘অভিযোগ সেল’ চালু করা হবে (দরপত্র সম্পর্কিত অভিযোগ, পাইরেসি, অনুমতি ছাড়াই কর্মীর চলে যাওয়া ইত্যাদি অভিযোগ জানাতে পারবেন)। (৯) বেসিস রিসার্চ সেল প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং ইন্ডাস্ট্রির প্রকৃত অবস্থা ও ট্রেন্ড উপস্থাপনে বার্ষিক ‘সফটওয়্যার এবং আইটিইএস শিল্প পর্যালোচনা’ রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে এবং (১০) সদস্য ফি এবং অন্যান্য সেবা ফি অনলাইনে পরিশোধের ব্যবস্থা করা হবে।
ফান্ড এবং ব্যবসায়িক সেবা সহায়তায় যেসব উদ্যোগ নেবে এই প্যানেল
(১) সদস্যদেরকে অফিস স্পেস কেনার জন্য সর্বনিম্ন মাসিক কিস্তি সুবিধায় দীর্ঘ মেয়াদী ঋণ সুবিধা (১০-১৫ বছর) প্রদান করার উদ্যোগ নেয়া হবে। (২) বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করে ইইএফ নীতিমালা এবং প্রক্রিয়া আরো সহজতর করা হবে। এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করে সফটওয়্যার/আইটিইএস প্রতিষ্ঠানের এসএমই লোনের সুবিধার জন্য সুদের হার ৫% এর কম করার উদ্যোগ নেয়া হবে। (৩) ‘ক্রেডিট গ্যারান্টি ফান্ড’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হবে, যাতে বেসিসের ছোট সদস্য প্রতিষ্ঠানগুলো ‘কলাটেরাল ফ্রি’স্বল্প-মেয়াদী ব্যাংক লোন/ ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল লোন পেতে পারে। (৪) সফটওয়্যার এবং হাইটেক পার্কে বেসিস সদস্যদের অফিস স্পেস বরাদ্দ (স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায়) দেওয়া; এই চারটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে উইন্ড অব চেঞ্জ।
টিকে
আরও পড়ুন