ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৬ নভেম্বর ২০২৪

বিজ্ঞানের নতুন বিপ্লব কোষ প্রতিস্থাপন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:১৫, ১৮ জুলাই ২০১৯

বিজ্ঞানের নতুন আবিষ্কার কোষ প্রতিস্থাপন। সহজে ও অল্প খরচে মানব দেহের ক্ষতিগ্রস্ত কোষ প্রতিস্থাপন করা সম্ভব। সেই সঙ্গে এই পদ্ধতির মাধ্যমে ব্যক্তি তার হারান শক্তি ফিরে পাবে। বিজ্ঞানের এই নতুন বিপ্লব স্টেম সেল গবেষণার ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা করেছে।

গবেষকরা দাবি করেছেন, তারা আদিম অর্থাৎ প্রাথমিক পর্যায়ের স্ট্রেম সেল তৈরি করে ফেলেছে। এর ফলে আহত ব্যক্তিদের শরীরে নতুন অঙ্গ সহজে প্রতিস্থাপন করা যাবে।

বিজ্ঞানীদের দাবি, যাদের দেহের টিস্যুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেগুলো আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব। এক গবেষণায় তারা এগুলো পেয়েছেন বলে দাবি করছেন। আর এ জন্য খুব সহজ এবং সস্তা একটি উপায় তারা খুঁজে পেয়েছেন।

বিশেষজ্ঞরা গবেষণায় দেখেছেন, এর ফলে ভবিষ্যতে ক্ষতিগ্রস্ত মানব দেহের কোষ প্রতিস্থাপন বা অসুস্থ এবং আহত ব্যক্তিদের শরীরে নতুন অঙ্গ প্রতিস্থাপন সহজ হবে।

জাপানের রিকেন সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট বাইলোজি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিগহাম অ্যান্ড ওমেনস হসপিটাল অ্যান্ড হাভার্ড মেডিকেল স্কুলে গবেষণা হয়েছে।

কৃত্রিম অঙ্গ-প্রতঙ্গ তৈরীর জন্য বিজ্ঞানীরা অনেকদিন ধরেই কাজ করে আসছে। তবে সবথেকে বেশি চ্যালেঞ্জ হল কৃত্রিম হবার কারনে অনেক সময়ই শরীর তা ঠিকমতন গ্রহণ করে না। ফলে কৃত্রিম অঙ্গ লাগানোর পরে অনেক ধরনের সমস্যা দেখা যায়। তাই বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করছেন কিভাবে নিজের শরীরের কোষ থেকেই – নিজের জন্যই অঙ্গ তৈরী করা যায়। আশার কথা হল এই ক্ষেত্রেও গবেষনাগারে অনেক সফলতা দেখা গেছে।

১৯৯০ সালে বিজ্ঞানীরা একটি ইদুরের শরীরে মানুষের কান তৈরী করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয়। এক নতুন দিগন্ত শুরুর আশা দেখে পৃথিবী। বিজ্ঞানের এই ক্ষেত্রটিকে বলে ‘regenerative medicine’। কিন্তু সেই প্রযুক্তি সরাসরি মানুষের ক্ষেত্রে কখনও প্রয়োগ করা হয়নি।

তবে কিছুদিন আগে চীনে সফলভাবে ৫ জন শিশুর কান এই পদ্ধতিতে প্রতিস্থাপন করে এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বিজ্ঞানিরা। নিজের শরীররে ডিএনএ ও কোষ থেকে তৈরী হবার কারনে শরীর এটি ভালোমতন গ্রহণ করেছে এবং কোন সমস্যা সৃষ্টি করেনি। চিনের সাংহাই এর Jiao Tong University in Shanghai বিশ্ববিদ্যালয়ের Guangdong Zhou এবং তার সহকর্মীরা এই কাজটি পরিচালনা করে এবং ebiomedicine বৈজ্ঞানিক জার্নালে এটি প্রকাশিত করে।

এটির মাধ্যমে চিকিৎসাক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত শুরু হল। শুধু মাত্র কান নয় অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ প্রতিস্থাপনার দিকে বিজ্ঞানীরা এখন কাজ করছে।

সম্প্রতি এই পদ্ধতিতে পোল্যান্ডে চিকিৎসা গ্রহণের পর এক বুলগেরীয় নাগরিক আবার হাঁটতে পারছেন। কোষ প্রতিস্থাপনের এই বিস্ময়কর সাফল্যকে এক ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ‘চাঁদের বুকে মানুষ হাঁটার চেয়েও চিত্তাকর্ষক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

সেল ট্রান্সপ্লানটেশন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১০ সালে এক ছুরিকাঘাতের ঘটনায় ডারেক ফিদিকা নামে ওই বুলগেরীয় নাগরিকের বুক থেকে নিচের অংশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে যায়। এক বৈপ্লবিক চিকিৎসায় সাফল্যের পর তিনি একটি স্ক্রেসে ভর করে এখন আবার হাঁটতে পারছেন। তার নাক থেকে নার্ভ সেল নিয়ে তার ছিঁড়ে যাওয়া মেরুদন্ডে প্রতিস্থাপন করা হয়।

রোক্লের অ্যাকরন নিউরো-বিহ্যাব্লিটেশন সেন্টারে চিকিৎসা গ্রহণকরা এই রোগী বলেন, ‘শরীরের প্রায় অর্ধেক অংশের অনুভূতি হারিয়ে আমি একেবারেই নিরাশ হয়ে পড়েছিলাম। যখন এই অনুভূতি ফিরে পেতে শুরু করলাম, তখন মনে হচ্ছে আমি আবার নতুন করে জীবন শুরু করছি।’

এছাড়া একই পদ্ধতিতে বিশ্বে প্রথম একইসঙ্গে লিঙ্গ ও অণ্ডকোষ পুরোপুরি প্রতিস্থাপন করে সফল হয়েছেন একদল মার্কিন চিকিৎসক। মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের বাল্টিমোরে জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের শল্য চিকিৎসকরা আহত এক সেনার ওপর যুগান্তকরী এ অস্ত্রোপচার চালান। আফগানিস্তানে বোমা হামলায় ওই সেনার লিঙ্গ ও অণ্ডকোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পরে মৃত এক ব্যক্তির দেহ থেকে লিঙ্গ, অণ্ডকোষ ও উদর প্রাচীরের একাংশ নিয়ে তা আহত সেনার দেহে প্রতিস্থাপন করা হয়।

১১ জন শৈল্য চিকিৎসক ১৪ ঘণ্টা অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে প্রতিস্থাপনের কাজ সম্পন্ন করেন। চিকিৎসকরা বলেছেন, নতুন লিঙ্গ দিয়ে সব কাজই হবে। এমনকি ওই সেনা যৌন ক্ষমতাও ফিরে পাবেন। সাধারণভাবে লিঙ্গ পুনর্গঠন করলে যা হওয়া সম্ভব ছিল না। দায়িত্ব পালনের সময় আহত কোনো সেনার ওপর এটিই প্রথম এ ধরনের অস্ত্রোপচার। তাছাড়া, অণ্ডকোষ ও পেটের সংশ্লিষ্ট অংশের টিস্যুসহ পূর্ণাঙ্গ লিঙ্গ প্রতিস্থাপনও এটিই প্রথম বলে জানাগেছে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নৈতিক বিবেচনায় তারা মৃত দাতার শুক্রাশয় প্রতিস্থাপন করেননি। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘প্লাস্টিক অ্যান্ড রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারির’ প্রধান ড. ডব্লিউ পি অ্যান্ড্রু লি জানান, ২০১৪ সালে হওয়া ‘ইন্টিমেসি আফটার ইনজুরি’ সিম্পোজিয়ামে তারা যুদ্ধাহত সেনাদের পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে এ ধরনের জখমের পরের দুর্বিষহ জীবনযাপনের কথা জানতে পারেন। এরপরই তারা জেনিটাল ট্রান্সপ্ল্যান্ট প্রোগ্রামের কথা চিন্তা করেন। এ প্রোগ্রামের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয় এ ধরনের ৬০টি অস্ত্রোপচার করার অনুমোদন দেয়।

এসএ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি