সাবধান! ফেসবুকে ভুয়া অ্যাকাউন্ট
প্রকাশিত : ১৪:১৬, ২২ নভেম্বর ২০১৯
ফেসবুক। এমন একটি সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যা ছাড়া এখন আমরা এক প্রকার অচল। এই ফেসবুক অনেকের কাছে যোগাযোগের মাধ্যম, আয়ের পথ, ক্যারিয়ার গড়ার কারখানা আবার কারও কাছে শুধুই সময় অপচয়। প্রযুক্তির এই মাধ্যমটিকে যদি সঠিকভাবে পরিচালনা করা যায় এবং তা থেকে নিজের উন্নয়ন ঘটানো যায় তবে তা করা ভালো। কিন্তু এর অপব্যবহার করে নিজের, সমাজের তথা দেশের ক্ষতি করলে তা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
দিনে দিনে বেড়েই চলছে সোশ্যাল মিডিয়ার অপব্যবহার। বিশেষ করে আমাদের দেশে। আর এসব অনেক ক্ষেত্রে ভুয়া অ্যাকাউন্ট দিয়ে করা হচ্ছে। শুধু ফেসবুক নয়, ইউটিউবে সহজে অর্থ আয়ের পথ হিসেবে মিথ্যা, গুজব ও গসিপ নিউজ দিয়ে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে অন্যদের।
সাম্প্রতিক ফেসবুকের ট্রান্সপারেন্সি প্রতিবেদনে তথ্য এসেছে যে প্রচুর পরিমানে ভুয়া অ্যাকাউন্ট রয়েছে যা দিয়ে অপপ্রচার চালানো হয়। এর প্রমাণও মিলেছে। ফেসবুক এ বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৩২০ কোটি ভুয়া অ্যাকাউন্ট সরিয়ে নিয়েছে। গত বছরের একই সময়ে মুছে ফেলা অ্যাকাউন্টের পরিমাণ ছিল ১৫০ কোটি।
এ সময়ের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি ১ কোটি ১৪ লাখের মতো ঘৃণাত্মক মন্তব্য ছড়িয়েছে। ২০১৮ সালের ঐ সময়ে সংখ্যাটি ছিল প্রায় ৫৪ লাখের মতো।
ফেসবুকের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা (সিএফও) ডেভিড এম. ওহেনার বলেছিলেন, ফেসবুকে প্রতি মাসে যে পরিমাণ অ্যাকাউন্ট সক্রিয় হয় তার ১০ শতাংশ নকল। এ অ্যাকাউন্টগুলো সম্পর্কে তার ভাষ্য, একই ব্যক্তির একাধিক অ্যাকাউন্ট এগুলো। এসব অ্যাকাউন্টে অন্যান্য অ্যাকাউন্টের মতো সত্যিকারের কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তবে ফেসবুকে ২-৩ শতাংশ অ্যাকাউন্ট আছে, যা পুরোপুরি ভুয়া। এগুলো স্প্যাম ছড়ানোসহ নীতিমালা ভঙ্গের কাজ করে।
ব্যবসা ও প্রযুক্তিবিষয়ক ওয়েবসাইট বিজনেস ইনসাইডের তথ্য অনুযায়ী, ভুয়া অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে নতুন তথ্য প্রকাশের আগে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলেছিল, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমটিতে নকল অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ৬ শতাংশ আর ভুয়া অ্যাকাউন্ট আছে ১ শতাংশ। অর্থাৎ সম্প্রতি ফেসবুকে ভুয়া ও নকল অ্যাকাউন্ট বেড়ে গেছে।
ফেসবুক কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি জানিয়েছে, তাদের প্রায় ২৫০ কোটি অ্যাকাউন্টের মধ্যে ৫ শতাংশ ভুয়া অ্যাকাউন্ট। আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের ফলেও এসব ভুয়া অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করা যায়নি। তবে আগের তুলনায় ভুয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার হার বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন ঘিরে ভুয়া খবর ছড়ানো ঠেকাতে ফেসবুকের চ্যালেঞ্জের বিষয়টি এ তথ্যে বোঝা যায়। ফেসবুক এ ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও ইঙ্গিত দেন ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ।
ভুয়া এসব অ্যাকাউন্ট থেকে বিভিন্ন অপপ্রচার চালানো হয়। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা রাজনৈতিক প্রভাব বাড়াতেই মূলত ভুয়া অ্যাকাউন্টের ব্যবহার বেশি। যেমন ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়ার এজেন্টের পক্ষ থেকে প্রচুর ভুয়া অ্যাকাউন্ট তৈরি করে নির্বাচনে প্রভাব ফেলার অভিযোগ রয়েছে। এসব অ্যাকাউন্ট থেকে ভুয়া শিরোনামে নানা খবর ছড়িয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার ঘটনা দেখা যায়। তবে ভুয়া অ্যাকাউন্টের এ চ্যালেঞ্জ শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই সীমাবদ্ধ নেই, জার্মানিতেও এ ধরনের ভুয়া অ্যাকাউন্ট তৈরির ঘটনা ঘটেছে। ২০১৭ সালে ফ্রান্সের নির্বাচনের আগেও ৩০ হাজার ভুয়া অ্যাকাউন্ট শনাক্ত করা হয়। এর আগে গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ভুয়া পেজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিল ফেসবুক। ফেসবুকের নিউজরুমে দেওয়া এক পোস্টে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে খোলা ৯টি পেজ ও ছয়টি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছিল ফেসবুক। সমন্বিতভাবে ভুয়া পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
এদিকে এরকম কিছু ভুয়া অ্যাকাউন্ট দিয়ে বাংলাদেশে এক শ্রেণীর অসাধু চক্র অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি চালাচ্ছে। এমন অনেক অ্যাকাউন্ট রয়েছে, বিশেষ করে তারকাদের নামে যা আসলে তাদের নয়, সেসব দিয়েও বিভ্রান্তি চালান হয়।
বিশেষজ্ঞরা এ ক্ষেত্রে নিজের সুরক্ষা নিজেকেই দিতে বলেছেন। সাধারণ সাইবার নিরাপত্তার অভ্যাসগুলো গড়ে তুলতে বলেছেন তারা। কোনটি ভুয়া খবর, কোনটি আসল, তা বোঝার জন্য মাথা খাটাতে হবে। অনলাইনে যেকোনো খবর দেখে অন্ধবিশ্বাস করা যাবে না। ভুয়া খবরের খপ্পরে পড়ে গুজব ছড়ালে দিন শেষে নিজেকেই ভুক্তভোগী হতে হবে।
সেই সঙ্গে এমন অপরাধ কর্মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের যদি কেউ চেনেন বা বুঝতে পারেন তবে তাকে এড়িয়ে চলুন এবং তার বিপক্ষে পদক্ষেপ নিন। প্রয়োজনে আইন শৃংখলা বাহিনীর সহযোগীতা নিন।
এসএ/
আরও পড়ুন