ঢাকা, বুধবার   ২৬ মার্চ ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

বিয়ে কেন্দ্রিক মজার ঘটনা...

শিরীন ফাতিমা

প্রকাশিত : ২১:৪১, ৩০ আগস্ট ২০২০ | আপডেট: ২১:৪৪, ৩০ আগস্ট ২০২০

লেখকের পারিবারিক সংগ্রহ থেকে নেয়া।

লেখকের পারিবারিক সংগ্রহ থেকে নেয়া।

Ekushey Television Ltd.

বিয়ের আগে লোকটাকে চিনতামও না। বিয়ের অনুষ্ঠানের একমাস আগে এনগেজমেন্ট হলো। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একজন গর্বিত সদস্য (মেজর) হিসেবে ওর পোস্টিং সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টে। আংটি পরাতেও আসেন নি উনি, মুরুব্বীরা এসে পরিয়ে দিয়ে গেছেন। তার পরের দিন থেকেই ফোন আসা শুরু হলো! এখন যেমন আমি অনেক কথা বলি (শিক্ষকতার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া), তখন একেবারেই গাধা টাইপ ছিলাম। আম্মাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম- কি কথা বলবো? আম্মা কিছুক্ষণ বোকার মতো তাকিয়ে থেকে বললো- ও যা বলবে তার উত্তর দিবে। 

তো, তা-ই সই! ও যা বলে আমি শুধু হু আর হ্যাঁ করি। মাঝে মাঝে দু-একটা না-ও বলেছি, আম্মা বলেননি তাও। বেচারার মনে হয় বুক ভেঙে গেছিল। তখন তো আর মোবাইল ছিলনা, অনেক কষ্ট করে ফোনের লাইন পাওয়া যেত। 

যাইহোক, এক মাস পরেই বিয়ে। ও ছুটি নিয়ে ঢাকা এলো। একদিন থেকে টাংগাইল ওর শহরে যাবে। আমাকে বললো বাইরে দেখা করতে, আর আমাকে পায় কে! কান্নাকাটি করে একেবারে শেষ। তখন বিয়েবাড়ীতে আত্বীয়-স্বজন সব চলে এসেছে, এর মধ্যে আমি বাইরে যাব? তো আমি এমনই গাধা, গেলাম-ই না। 

এর এক সপ্তাহ পর বিয়ে। আমার ছিচকাঁদুনীর কথা ভেবে আব্বা আমাকে আগেই ওয়ার্নিং দিলেন- একদম কাঁদবেনা। এখানেও তাদের-ই ইচ্ছা। তো আমিও ডিসিশন নিলাম, যাই হোক না কেন কাঁদবোই না আজ। জীবনে এই প্রথম পার্লার থেকে ভূতের মতো (আসলে হবে- পেত্নী) সেজে কমিউনিটি সেন্টারে গেলাম। বর এলেন টাংগাইল থেকে, আমার বন্ধুরা সব দৌড়ে গেল বর দেখতে। দেখে দৌড়ে এসে আমাকে বলে, ইতি দুলাভাই তো তোর চেয়েও ফর্সা! 

আচ্ছা, বলেন তো! এটা একটা কথা! কেমন লাগে শুনলে, বলছিলি কিনা বল মহুয়া, নাহিদ, মোনা! এদিকে বরের আনা লাল কাঁচের চুড়ি পড়তে গিয়ে আমার হাতের আল্পনা সব উঠে গেল। ডাক পড়লো আমার বিপদের বন্ধু রুপককে, মানে এনামুল হক আর কি। সে-ই আবার হাতে নকশা টকশা করে দিলো। অতঃপর বিয়ে পড়ানো হলো। কাঁদিনি কিন্তু একটুও। সবাই আশায় ছিল- আমাকে ধরে টরে একটু বুঝাবে। তো সে আশায় গুড়ে বালি! 

যাই হোক শুভ দৃষ্টির সময় এলো। ওমা! লোকটা আসলেই তো ফর্সা। আর্মির সব ট্রেনিং এর ওপর থেকে ভক্তি চলে গেলো। বিএমএ'র এতো রগড়ানীও কোন কাজে আসেনি মনে হলো। আর্মির বিভিন্ন ট্রেনিং, পিটি-প্যারেড কোনও কিছুই ওর গায়ের রং নষ্ট করতে পারেনি! (অর্থাৎ- আর্মির বিভিন্ন ট্রেনিং-এ তো অনেক কষ্ট করতে হয়, রোদে পুড়তে হয়, বৃষ্টিতে ভিজতে হয়। আরও অনেক কষ্টকর ট্রেনিং থাকে বলেই জানতাম। যে সব করার পরেও যে এতো সুন্দর ফর্সা ত্বক বিদ্যমান থাকতে পারে, সেই ধরনা ভুল প্রমাণিত হলো আর কি)। 

যাইহোক, সেদিনই টাংগাইল যাওয়া হবে। গাড়ীতে বসেছি, ও এসে বসলো পাশে। বললো- “Are you comfortable?” সেই যে শুরু। তারপর যে ২৯টা বছর ওর সাথে ছিলাম। ওর একটাই চেষ্টা ছিল, আমাকে comfort-এ রাখা। তা সে রেখেও ছিল। এতো ভালো একজন স্বামী আমি পেয়েছিলাম, এতো ভালো! যা বলে বোঝাতে পারবো না! 

২০১৯ সালের ২ এপ্রিল হঠাৎ হার্ট এ্যাটাকে মারা গেল ও। রেখে গেল বহু সুখ স্মৃতি, আর দুইটা সন্তান। আল্লাহ ওকে বেহেস্ত নসীব করুন। আমি জানি, ও যেখানে আছে খুব ভালো আছে, মিস করেনা বোধ হয় আমাকে। হুর কি পেয়েই গেল না কি! শুধু আমিই মিস করি ওকে... অনেক মিস করি!!

লেখক- শিক্ষিকা, স্কলাস্টিকা স্কুল, মিরপুর ব্রাঞ্চ। 

এনএস/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি