ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

নারীত্ব বনাম মাতৃত্ব: নারীর টানাপোড়েনের গল্প

শিরীন ফাতিমা

প্রকাশিত : ১৭:৪৭, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ | আপডেট: ১৭:৫০, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০

স্বপুত্রক লেখক

স্বপুত্রক লেখক

নারী- কি রহস্যময় একটা শব্দ। নারী কি চায়? কেন তার বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না, আর কেনোইবা নারীর পদে পদে দোষ? নারী না হলে এই মানব সম্প্রদায়ের বিকাশই ঘটতো না। অথচ এই নারীকেই যতভাবে সম্ভব শারীরিক এবং মানসিকভাবে দমিয়ে রাখার প্রবণতা সমাজের প্রতিটি স্তরে বিদ্যমান। 

কিন্তু কেন? এটা কি নারীর প্রতি বিদ্বেষ, না কী ভয়? ভালোবাসা নয়- এটা তো স্পষ্ট। যদি বলি ভয়ের কথা- তাহলে কেন এই ভয়? আস্ত একটা পুরুষকে নিজের গর্ভে যিনি ধারণ করেন, তাকেই কি পুরুষদের এতো ভয়! মাতৃত্ব অবশ্যই নারীকে পুরুষদের চেয়ে আলাদা করেছে, করেছে বিশেষ। যদিও পুরুষ ছাড়া মা হওয়া সম্ভব না নারীদের। সেটা অস্বীকার করিও না। কিন্তু সন্তান ধারন ও প্রসবের যে যন্ত্রনা, সেই যন্ত্রনা নারীদের ভিতরে যে মায়ার জন্ম দেয় সেটাই নারীকে করেছে স্বতন্ত্র।

আর বিদ্বেষ? সেটাই বা কেন? কারণ পুরুষদের চেয়ে নারী অনেক শক্তিশালী! শারীরিকভাবে শক্তিশালী- এটা বলার মতো বোকা আমি নই। আমি মানসিক শক্তির কথা বলছি। নারীর দশভূজা রুপের কথা সবাই জানে, জানে তার চন্ডী পাঠ থেকে জুতা সেলাইয়ের কথাও। তাই নারীর প্রয়োজন হয়না কোন পুরুষের, যদি সে আর্থিকভাবে থাকে স্বনির্ভর। কিন্তু কটা মেয়েরই বা তা থাকে!

আমি পুরুষ বিদ্বেষী নই। আমার জীবনে চমৎকার কিছু পুরুষের অবদান- এই আমাকে আমি হিসাবে গড়ে তুলেছে। আমার বাবা, ভাই, স্বামী, ছেলে- এমনকি আমার বন্ধুরা, যারা প্রতিনিয়ত আমাকে নিজেকে চিনতে সাহায্য করেছে, আমাকে ভেঙেছে, গড়েছে। তাদের স্নেহ, ভালোবাসায় আমি বুঝেছি- একটা মেয়ে তার বাবার কাছে কতখানি মূল্যবান, একটা বোন তার ভাইয়ের কত আদরের, একজন স্ত্রী তার স্বামীর কাছে কত মোহময় আর কাম্য, একজন মা তার সন্তানের কত বড় আশ্রয়, একজন বন্ধু কিভাবে আনন্দে ভরিয়ে দিতে পারে আরেক বন্ধুর জীবন। সঙ্গে ছিল কিছু কুৎসিত অভিজ্ঞতা- যা আমাকে গুটিয়ে দিয়েছে, থামিয়ে দিতে চেয়েছে বারবার। যা আমি গায়ে মাখিনি, কষ্টকে বুকে চেপে নিজেকে আবার দাঁড় করিয়েছি।

তারপরও আমি অনেক সৌভাগ্যবান। কিন্তু আমার মতো সৌভাগ্যবান কি সব নারী? সবার জীবনের পথচলাই কি এত সুগম, এত ভালবাসাময়। হওয়া তো উচিত, হলে তো কিছু ক্ষতি হতো না। কিন্তু হয় না। কেন যেন কোথাও না কোথাও ছন্দ কেটেই যায়। যে নারী ভালোবাসা আর মায়ায় টইটুম্বুর বুক নিয়ে পুরুষের পাশে, শুধু পাশে থাকতে চায়, পথ চলতে চায় একসঙ্গে। কিন্তু তাকেই কিনা ধাক্কা দিয়ে পেছনে ঠেলে দেয়া হয়। নারী হয়ে যায় পুরুষের মনোরঞ্জনের উপাদান! 

পুরুষের কাছে নারী হয়ে যায় বুদ্ধিহীন, সুন্দর শরীর সর্বস্ব একটা খেলনা পুতুল। যে কিনা তাদের কোনও কথার প্রতিবাদ করবে না, তাদের কোন অন্যায় কাজে বাঁধা দিবেনা। শুধু খেলার পুতুল হয়েই থাকবে। আসলে নারীর শক্তিকে ভয় পায় যে পুরুষ, তারই কাছে শারীরিকভাবে দমিত হয় নারী। নিপীড়িত হয় সেই পুরুষের কাছেই, যে পুরুষের জন্ম দিয়েছে ওই নারী। যদিও সব পুরুষই যে এরকম- ঢালাওভাবে এটা বলা যাবেনা অবশ্যই।

আসলে, দমিত হয় নারী নিজেই... নিজের সেই দুর্বলতার কাছে- সেই মায়ার কাছে, সেই মাতৃত্বের কাছে। যার কাছে নারীর আর সব চাওয়া, ইচ্ছা, আকাংখা সব চাপা পড়ে যায়। নারীত্বের সব চাওয়া পাওয়া হারিয়ে শুধু ওই মাতৃত্বের কাছেই।

লেখক- শিক্ষক, স্কলাস্টিকা স্কুল, ঢাকা।

এনএস/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি