স্যার ছিলেন স্বল্পভাষী ও নিরহঙ্কারী
প্রকাশিত : ১৭:৩০, ২২ নভেম্বর ২০২০
২০১১ সালের ১৩ আগস্টের সকাল। মুষলধারে বৃষ্টির হচ্ছিলো। জাহাঙ্গীরনগরের বৃষ্টি যেনো শেষ না হওয়া সুখের ছিটেফোটা আবহ। এই আবহ বেশিক্ষণ থাকেনি সেদিন। দশটা বাজার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ঢাকার এক সিনিয়র সাংবাদিকের ফোন। ওদিকে এক সড়ক দুর্ঘটনায় ... মারা গেছেন; খোঁজ নাও তো।
গড়গড় করে বলেই লাইন কেটে দিলেন। আমার ঘুমের আরাম তখন হারাম। কি করি, কার কথা বললেন। মনে হলো, ঢাকা থেকে আসার বাসের কথা বলেছেন। আর শুনেছি হিমেল বরকত স্যারের কথা।
আমি তখন ভাবছি, হিমেল স্যারের কথা। শাহবাগের এক আড্ডায় পরিচয় তার সাথে। তখন কেবল ঢাকায় এসেছি ইউনিভার্সিটি কোচিং করার জন্য। পরিশ্রমী ফিচার সাংবাদিক গাজী মুনছুর আজিজের Gazi Munsur Aziz সঙ্গে প্রায়ই আড্ডায় যাই; কত সাংবাদিক-সাহিত্যিকদের সঙ্গে পরিচয় হয়। যত্ম করে সবার নম্বর লিখে রাখি (তখনো মনে হয় নিজের স্থায়ী মোবাইল হয়নি)।
বয়সে এত বাচ্চা জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষক!! কোনো ভাব ছিল না। কথা কম বলতেন, কিন্তু যা বলতেন আন্তরিকতা নিয়ে বলতেন। আমাকে অনেক পরামর্শ দিতেন। বলতেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর অনেক আড্ডা হবে। পরে যখনই দেখা হয়েছে, জিজ্ঞেস করেছেন, আজিজ কেমন আছেন (আমাকে আজিজের কাজিন হিসেবে জানতেন)।
ভাবনা-টাবনায় ছেদ পড়ে হিমেল বরকত স্যারের মৃত্যুর কথা মনে হওয়ায়। কাকে ফোন দেবো, কে কি বলবেন। আচ্ছা সরাসরি হিমেল স্যারকেই ফোন দেই? নাহ, মরা মানুষকে ফোন দেব? ঠিক হবে নাহ। উনার ফোন যিনি রিসিভ করবেন, তিনিও তো স্বাভাবিক অবস্থায় থাকবেন না।
ভয়ে ভয়ে ফোন দেই, দর্শনের রায়হান রাইন Rayhan Rhyne স্যারকে। স্যার বললেন, কই দাঁড়াও, খোঁজ নিচ্ছি। মিনিট পাঁচেক পরে স্যারের ফোন। বললেন, আমি এই মাত্র কথা বললাম হিমেলের সঙ্গে। তিনি সুস্থ আছেন।
ততক্ষণে অবশ্য চারিদিকে বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা তারেক মাসুদ, বিশিষ্ঠ সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পুরো টিমের দুর্ঘটনায় কবলিত হওয়ার খবর চাউর হয়ে গেছে।
২. বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলোতে স্যারের সাথে কথা হয়েছে অজস্রবার। কবি হওয়ার কারণে তাঁর কাছে বেশি যেতাম। পূর্ব পরিচয়ের জেরে আমাকে গুরুত্বও দিতেন বেশি। সুখের অনেক স্মৃতিই আছে।
২. হিমেল বরকত স্যারের মৃত্যুর প্রথম সংবাদটি যখন মনে এঁকেছিলাম, মাঝখানে পার হয়ে গেছে প্রায় ১০ বছর। মনে হলেও ফোন দিতে পারিনি, পারি না অনেক প্রিয়জন, পরিচিতজনকে। হিমেল স্যার হয়তো সেই তালিকাতেই ছিলেন। শেষ কথার কথা আর মনে নাই, তবে মনে আছে প্রথম পরিচয় আর প্রথম আড্ডার কথা।
সকালে অফিসে এসে ফেসবুক নোটিফিকেশনে কবি খালেদ হোসাইন স্যার লিখলেন, ‘হিমেল চলে গেছে। প্রিয় হিমেল বরকত।’ ছোট্ট জীবন আমাদের। হাজার স্বপ্ন পূরণের হাজারো সীমাবদ্ধতা। অথচ আমরা ক্ষণস্থায়ী দিনগুলোকেই অমর করে রাখতে কত ব্যস্ত!!!
(লেখাটি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এপিএস ইমদাদ হক এর ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
আরকে//