‘সে যে পাগল হয়ে যাবে আমাকে ছাড়া’
প্রকাশিত : ১৭:১৪, ২৬ নভেম্বর ২০২০
আমার বয়স ছিলো ১২ বছর, যখন আমি তাকে বিয়ে করি। আমার এখনো মনে আছে, সে ঘোড়ার গাড়িতে করে আমাকে বিয়ে করতে এসেছিলো। পুরো গ্রামে কারো বিয়ে হয়নি ঘোড়ার গাড়িতে আসা বরের সাথে। আমার এত খুশী আর গর্ব লাগছিলো!! আমার স্বামী সেই আমলে ১০ টাকা দিয়ে ঘোড়ার গাড়ি এনেছিলো। সে ইচ্ছে করলে ওই টাকায় বিশাল ধানী জমি কিনতে পারতো।
আমার বিয়ের পর সে আমাকে 'রাঙ্গা বউ' বলে ডাকতো, যার মানে ছিলো সুন্দর বউ। সে বলতো, আমি ছিলাম তার জীবনে দেখা সবচেয়ে সুন্দর নারী। কিন্তু আমার সওয়ামির গায়ের রঙ ছিলো কালো, গ্রামের লোক তার এই গায়ের রঙ নিয়ে সব সময় হাসি ঠাট্টা করতো। তারা সবাই বলতো, সে হলো কালো পাথর যে কিনা মুক্তোর মালা পরে বসে আছে। কিন্তু আমার স্বামী কখনই মন খারাপ করতো না। তাকে খুশী মনে হতো বরঞ্চ আর সে হাসতো, যখন মানুষ এই ঠাট্টাটা করতো। সে সব সময় বলতো আমাকে, 'দেখেছো? কত সুন্দর তুমি?'
দীর্ঘ ৭৫ বছর ধরে আমরা একসাথে আছি। দুই বছর আগে আমি আমার বড় ছেলের বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম। আমি আমার স্বামীকে আমার ছোট ছেলে আর তার পরিবারের সাথে রেখে গিয়েছিলাম। আমার ছোট বউ বলেছিলো, 'সে ১০ মিনিট পর পর বলতো, আমার রাঙ্গা বউ কই? সে ফোন করছে? কখন আসবে সে?'
সে আমাকে ছাড়া পাগল হয়ে যায়। আমরা আমাদের বিবাহিত জীবনে কখনো আলাদা থাকিনি। আমরা একসাথে সকালে উঠি, একসাথে ফজরের নামাজ পড়ি। সে আমার হাতের রান্না ছাড়া খেতে পারে না কিছু। কিন্তু আমরা যখন খেতে বসি, সে তার পাতের বড় মাছের টুকরাটা আমার পাতে তুলে দেবেই।
যদি আমি কখনো তার উপর রাগ হয়ে থাকি, কথা বলা বন্ধ করে দেই, সে তখন আমার পাশে বসে থাকে এবং নড়ে না যতক্ষণ পর্যন্ত
আমি তার দিকে তাকিয়ে হাসি। আমি যদি তার চোখের সামনে থেকে কয়েক মুহূর্তের জন্য অদৃশ্য হয়ে যাই, সে উতলা হয়ে খুঁজতে থাকে আমাকে, 'আমার রাঙ্গা বউ কোথায়?', আমি তার জন্য কোথাও যেতে পারিনা।
বোধহয় আমরা একে অপরকে আর বেশিদিন দেখতে পারবো না। আমরা আমাদের জীবনের শেষাংশে চলে এসেছি। আমি তার আগে দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে চাই না। সে যে পাগল হয়ে যাবে আমাকে ছাড়া!! সে তার রাঙ্গা বউকে সব জায়গায় খুঁজে বেড়াবে।
আমার ইচ্ছা, আল্লাহ যেন আমার মৃত্যু তার মৃত্যুর পর দেন।
-মসির উদ্দিন সরদার (১০৫) এবং তার রাঙ্গা বউ (৮৭)
(লেখাটি Sayed Meskawat Hossain Jony এর ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)
আরকে//