হায় মেসি! হায় আর্জেন্টিনা!!
প্রকাশিত : ০৯:১৬, ১২ জুলাই ২০২১ | আপডেট: ০৯:১৮, ১২ জুলাই ২০২১
কখনও ঘোষণা দিয়ে বলা হয়নি। না ফেসবুকের স্ট্যাটাসে, না পারিবারিক পরিমণ্ডল বা বন্ধু মহলের আড্ডায়। ভেবে রেখেছিলাম, এমনকি- চ্যাম্পিয়ন হলেও, এই গোপন প্রণয়ের কথা গোপনই থাকবে। হৃদয়ে উৎসারিত একান্ত অনুভূতির হৃদয়েই হোক ঘরবসতি। কিন্তু পরাজিত মহানায়কের অশ্রুসজল বিদায় প্রত্যক্ষ করবার পর আর না বলে পারছি না। হ্যা, আমি আর্জেন্টিনা ফুটবল দলের সমর্থক। ভামোস আর্জেন্টিনা।
চাপের মুখে বারবার ভেঙে পড়া, ঐতিহ্যগত আর্জেন্টাইন ঘরানার ছোট পাসের ফুটবলের সবচেয়ে দুর্বল সংস্করণের প্রদর্শনী, সবশেষে বাছাই পর্বের হতাশা জাগানিয়া পারফর্মেন্স.. বেশ ক'বছর ধরে শঙ্কার একটি চোরাস্রোত ভিতরে ভিতরে বয়ে চলেছিল। জানতাম, অবধারিত এই দিনটির মুখোমুখি হতে হবে। হবেই।
গ্রুপ পর্বে, না হয় পরের কোনও এক রাউন্ডে। এই দলে ডিফেন্ডার আর মিডফিল্ডার কোথায়! গোলবারের নিচে আদৌ কি কেউ ছিল! এমন অকার্যকর-ভঙ্গুর রক্ষণ, সৃষ্টিশীলতাহীন মাঝমাঠ, পরিকল্পনাহীন কোচ নিয়ে, শুধু বিশ্বসেরা আক্রমণভাগের জোরে আর যাই হোক কোনও শিরোপা জেতা একেবারেই অসম্ভব।
এমন ভারসাম্যহীন দল লড়াইয়ে সুবিধা করতে পারবে না নিশ্চিত জেনেও আকাশী নীলের প্রতি এই অন্ধ অনুরাগ যতটা না এশিয়া, ইউরোপ পেরিয়ে আটলান্টিকের ওপারের প্রায় অজানা দূরদেশটির প্রতি ভালবাসায় নিহিত, তার চেয়েও বেশি একজন জাদুকরের হাতে কাপটি দেখার আকাঙ্ক্ষায়।
জাদুকরের মেলে ধরা জাদুর পসরা প্রাণভরে উপভোগ করব বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হলের টিভি রুম, খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের টিচার্স ডরমিটরি আর চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অফিসার্স মেসে কতো নির্ঘুম রাত! যার খেলা দেখতে দেখতেই ক্রিকেট পাগল এই দেশে আমার-আমাদের ফুটবলকে ভালোবাসা, পরীক্ষার পড়া বাদ দিয়ে লা লিগা, ইউসিএলের পয়েন্ট টেবিল, বিশ্বকাপের সম্ভাব্যতা- অসম্ভাব্যতার হিসেবনিকেশ।
আর্জেন্টিনা হেরে গেলেও আশা করেছিলাম ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল লড়াইয়ে টিকে থাকবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে উরুগুয়ের সাথে ১-২ গোলে হেরে পর্তুগালও বিদায় নিয়েছে বিশ্বকাপের আলো ঝলমলে মূল মঞ্চ থেকে। দশ বারের ব্যালন ডি অর বিজয়ী বিশ্বসেরা দুই খেলোয়াড়ের বিদায়ে বিশ্বকাপ যে অনেকটাই রং হারাবে তা নিশ্চিত করে বলা যায়। মেসি-রনের অনুপস্থিতিতে খুব করে চাইব কাপটি বিশ্ব ফুটবলের হবু সুপারস্টার নেইমারের হাতে উঠুক। বিষন্ন বদনে জাদুকরকে বিদায় নিতে দেখার যন্ত্রণায় যদিও সেটি সামান্যই প্রলেপ দিতে পারবে।
চার বছর পর কাতারে বসতে যাচ্ছে বিশ্বকাপের পরের আসর। ততোদিনে বুয়েন্স আয়ার্সের 'রিও দে লা প্লাতা' নদী দিয়ে গড়িয়ে যাবে বহু জল। জানি না সেই দিনে মেসি আর মেসিতে থাকবেন কিনা। হয়ত হ্যা, হয়তবা না। তবে আন্দিজ পর্বতমালা আর আকোনকাগুয়া পর্বতশৃঙ্গের উপর দিয়ে বয়ে চলা ঝড়ো হাওয়ায় মিশে থাকা হাহাকার ধ্বনি চিরকাল মনে করিয়ে দিবে ভুল সময়ে জন্ম নেওয়া, ভুল দলের নেতৃত্ব দেওয়া এক দুঃখী রাজকুমারের নিকট সোনালী ট্রফিটির অপরিশোধিত ঋণের কথা।
২০১৮ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে ফ্রান্সের সঙ্গে হেরে আর্জেন্টিনার বিদায় নিশ্চিত হয়ে যাওয়ার পর এক বুক কষ্ট নিয়ে এই শোকগাঁথাটি লিখেছিলাম। যাক, অবশেষে ক্ষতস্থানে মধুর প্রলেপ! অবশেষে লিওনেল মেসির হাতে উঠলো অন্তত একটি শিরোপা!
লেখক- বিসিএস (পুলিশ), এএসপি (রাঙ্গুনিয়া সার্কেল), চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ।
এনএস/