জীবনের মূল্য কত?
প্রকাশিত : ১৯:০৯, ২৯ নভেম্বর ২০২৩ | আপডেট: ১৯:৫৭, ২৯ নভেম্বর ২০২৩
খলিফা হারুনর রশীদ। আব্বাসী খিলাফতের ৫ম খলিফা। খলিফা হারুনুর রশীদ বিখ্যাত আরব্য রজনীর প্রধান চরিত্র। যাতে বেশিরভাগই মুখরোচক ঘটনাবলির সমাবেশ। তিনি ৭৬৬ খ্রীস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। এবং উনার শাসনকাল ছিলো ৭৮৬-৮০৯ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত। তিনি একাধারে সমরনায়ক, একজন ইতিহাসবেত্তা, অর্থনীতিবিদ, রাজনীতিবিদ এবং বিভিন্ন গুণে গুণান্বিত ছিলেন। হারুনুর রশীদের জীবনি থেকে বেশ ভালো ভালো শিক্ষনীয় ঘটনা পাওয়া যায়।
খলিফা হারুন অর রশিদ একদিন পানি পান করতে যাবেন, গ্লাস ঠিক ঠোঁটের কাছে নিয়েছেন, এমন সময় হযরত বহলুল (রহঃ) বললেন, 'আমিরুল মুমিনীন'! একটু থামুন। পানি পান করার আগে আমার একটি প্রশ্নের উত্তর দিন।'
খলিফা বললেন, বলো কি জানতে চাও?
বহলুল (রহঃ) বললেন, 'মনে করুন আপনি প্রচন্ড তৃষ্ণার্ত হয়ে এমন মাঠে আছেন যেখানে পানি নাই। পিপাসায় আপনার প্রাণ ওষ্ঠাগত। এমন অবস্থায় আপনি এক গ্লাস পানির জন্য কতটা মূল্য ব্যয় করবেন?'
খলিফা বললেন, 'যেহেতু পানি না পেলে আমার মৃত্যু হবে তাই আমার পুরো সম্পত্তিও ব্যয় করে দিতে পারবো।'
হযরত বহলুল (রহঃ) বললেন, 'ঠিক আছে এবার বিসমিল্লাহ বলে পানি পান করেন।'
খলিফা পানি পান করলেন। এবার হযরত বহলুল (রহঃ) বললেন, 'আমার আর একটি প্রশ্ন আছে।'
খলিফা বললেন, বলো।
বহলুল (রহঃ) বললেন, 'এই পানি যদি আপনার শরীর থেকে না বের হয়, পেটেই জমা থাকে। প্রসাব বন্ধ হয়ে যায়, সেই পানি বের করবার জন্য কত টাকা ব্যয় করবেন?'
-প্রসাব বন্ধ হলে তো আমি সহ্য করতে পারবো না। মারা যাবো। জীবন বাঁচাতে একজন ডাক্তার যতটা চায় ততটাই দিবো। আমার পুরো রাজত্ব চাইলেও দিয়ে দিবো।
হযরত বহলুল (রহঃ) বললেন, 'তাহলে বোঝা গেল আপনার পুরো রাজত্ব এক গ্লাস পানির দামের সমানও নয়। মাত্র এক গ্লাস পানি পান করতে বা বের করতে আপনি পুরো রাজত্বও দিয়ে দিতে চান। তাহলে কত গ্লাস পানি নিয়মিত পান করেন আর বের করেন, এটা একটু ভাবেন আর এই নেয়ামত যিনি দিয়েছেন তার শুকরিয়া আদায় করেন।'
শরীর থেকে পানি বের করার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় যে অঙ্গ তাহলো কিডনি। করাচির এক ডাক্তারকে (কিডনি বিশেষজ্ঞ) একবার একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন, "বিজ্ঞান এখন এতো উন্নত, আপনারা একজনের কিডনি অন্যের শরীরে প্রতিস্থাপন করেন তাহলে কৃত্রিম কিডনি তৈরি করতে পারছেন না কেন?"
ডাক্তারের উত্তরটি ছিলো খুবই আশ্চর্যজনক।
তিনি বলেছিলেন, "সায়েন্সের এই উন্নতি সত্ত্বেও কৃত্রিম কিডনি তৈরি করা খুব কঠিন। কারণ আল্লাহ তায়ালা কিডনির ভেতরে যে চালনি যুক্ত করেছেন তা খুব সুক্ষ্ম এবং পাতলা। এখনো পর্যন্ত এমন যন্ত্র আবিষ্কার হয়নি যা এমন সুক্ষ্ম ও পাতলা চালনি তৈরি করতে পারে। আর যদি কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে চালনি তৈরি করাও হয় তবুও কিডনির ভেতর এমন একটি জিনিস আছে যা তৈরি করা আমাদের ক্ষমতার বাইরে। জিনিসটি হলো একটি মস্তিষ্ক (sensor)। এই
মস্তিষ্ক ফায়সালা করে যে, এই মানুষের শরীরে কতটুকু পানি রাখা চাই আর কতটুকু ফেলে দেওয়া চাই। তার ফায়সালা শতভাগ সঠিক হয়।
ফলে আমরা যদি কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে কৃত্রিম কিডনি তৈরি করেও ফেলি, তবুও আমরা এতে মস্তিষ্ক তৈরি
করতে পারবো না, যা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন প্রতিটি মানুষের কিডনিতে সৃষ্টি করেছেন।'
পানি পান এবং নিষ্কাশনের প্রক্রিয়াটি খুব করে মনে পড়ে যখন সূরা যারিয়াতের ২১ নং আয়াত পড়ি। সেখানে মহান রব
বলেছেন-
আমরা কী নিজেদের সত্ত্বা নিয়ে কখনো চিন্তা করে দেখেছি?
সূত্র-সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে নেয়া।
কেআই//