ঢাকা, শুক্রবার   ২২ নভেম্বর ২০২৪

বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদ হয় বরগুনায়

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:০২, ১৩ আগস্ট ২০২০

১৯৭৫ সাল। দিনটি ছিল ১৫ আগস্ট। সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে সমগ্র বাঙ্গালী জাতির ললাটে লেপন করা হয়েছিল কালিমার ছাপ। সেই সময় ওই প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে এ জঘন্য হত্যকান্ডের প্রথম প্রতিবাদ হয় বরগুনায়। বরগুনা মহকুমার তৎকালীন এসডিও সিরাজউদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে এ প্রতিবাদ সংগঠিত হয়।

এরপর বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে ২০০২ সালে তৎকালীন সরকার যখন জাতির পিতার প্রতিকৃতি সংরক্ষণ ও প্রদর্শন আইন বাতিল করার জন্য জাতীয় সংসদে প্রস্তাব আনে তখন বরগুনার সাংসদ মো. দেলোয়ার হোসেন জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে কঠোর ভাষায় তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং অধিবেশন থেকে ওয়াক আউট করেন।

বছর ঘুরে আবার এসেছে সেই শোকাবহ আগস্ট মাস। বরগুনার প্রবীণ রাজনীতিক, সামাজিক ব্যক্তিত্বদের স্মৃতিচারণে জানা গেছে, তৎকালীন বরগুনার ছাত্রলীগ নেতা ও পরবর্তিতে ৪নং কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালেব মৃধার কাছে বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের হত্যাকান্ডের সংবাদ পান মহকুমা পর্যায়ের প্রধান, (এসডিও) সিরাজউদ্দীন আহমেদ। তিনি সিদ্ধান্ত নেন এ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করার।

তিনি ঘোষণা করেন ‘বরগুনায় যদি কেউ খুনী সরকারের পক্ষে মিছিল বের করে তবে তাদেরকে গুলি করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়া হবে।’

এ ঘোষণার পর খুনী সরকারের পক্ষে বরগুনার কেউ মিছিল বের করতে সাহস পায়নি।

এসডিও সিরাজউদ্দীনের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ ছিলেন বরগুনা মহকুমার তিনজন সংসদ সদস্য, আসমত আলী শিকদার এমপি, শাহজাদা মালেক খান এমপি, নিজাম উদ্দীন আহমেদ এমপিসহ বরগুনার তৎকালীন বহু সরকারী কর্মকর্তা। রাজনৈতিক, সামাজিক নেতাদের মধ্য ছিলেন বাকশাল যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম শিকদার, ইউনুস শরীফ, বরগুনা কলেজের অধ্যক্ষ শামসুল আলম, ন্যাপ সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, তৎকালীন ছাত্রলীগ সভাপতি বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির, ছাত্রলীগের সেক্রেটারি আব্দুর রশীদ, বুড়িরচর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আ. মান্নান মিঞা, সুলতান জোমাদ্দার, মোতালেব মৃধা, বরগুনা ১ আসনের বর্তমান সাংসদ ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, বরগুনা ১ আসনের সাবেক সাংসদ বর্তমানে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দেলোয়ার হোসেন। তাদের নেতৃত্বে অনেক উদ্দীপ্ত তরুণ-যুবক সশস্ত্র প্রতিরোধ করার জন্য সিরাজউদ্দীনের সঙ্গে যোগ দেন।

বরগুনার পুলিশের অস্ত্র তখন বিদ্রোহীদের দখলে। তৎকালীন ফুলঝুড়ি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও পরবর্তিতে বরগুনার সাংসদ মরহুম সিদ্দিকুর রহমান যুবকদের নিয়ে সশস্ত্র প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়ে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা রাখেন। তবে সত্য যথাযথ সহযোগিতার অভাবে এ প্রতিরোধ মাত্র তিনদিন পর্যন্ত অটুট ছিল। সিদ্দিকুর রহমানকে গ্রামের বাড়ী থেকে গ্রেফতার করা হয়, পরে প্রায় দুই বছর সিদ্দিকুর রহমান কারাবন্দী ছিলেন। বিদ্রোহী নেতাদের খুঁজে খুঁজে গ্রেফতার করা হয়। অমানুষিক নির্যাতন নেমে আসে তাদের উপর। এ বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য সিরাজউদ্দীন আহমেদকে তৎকালীন অবৈধ সরকার চাকরিচ্যুত করে। এর পরের ইতিহাস তো অনেকেরই জানা।

সিরাজউদ্দীন আহমেদ তার প্রকাশিত স্মৃতিচারণে লেখেন, ‘আমি গৌরবান্বিত যে একমাত্র আমাদের বরগুনায় ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধেপ্রথম সশস্ত্র প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলা হয়েছিল।’

২০০১ সালে বরগুনা থেকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মো. দেলোয়ার হোসেন। ২০০২ সালে ক্ষমতাসীন বিএনপি-জামাত সরকার জাতির পিতার প্রতিকৃতি সংরক্ষণ ও প্রদর্শন আইন বাতিল করার জন্য জাতীয় সংসদে প্রস্তাব আনলে প্রতিবাদে জ্বলে ওঠেন বরগুনার এ সাংসদ। যেন পঁচাত্তরেরই পূনরাবৃত্তি। সংসদে তিনি তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন এবং সংসদ থেকে ওয়াক আউট করেছিলেন। পরে তিনি সরকারের লোভনীয় নানা প্রস্তাবকে পায়ে ঠেলে আওয়ামী লীগে ফিরে আসেন এবং বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করেন।

বরগুনাবাসীর এ গৌরবোজ্জ্বল সাহসিকতার ইতিহাস বর্তমান প্রজন্মকে জানানো ও তাদের মর্মে ধারণ করানো গেলে নতুন প্রজন্ম যে কোন অন্যায়ের প্রতিবাদে অগ্রণী ভূমিকা রাখার প্রত্যয় পাবে।
এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি