ঢাকা, শনিবার   ২৩ নভেম্বর ২০২৪

১৫ আগস্ট প্রথম শহীদ হন শেখ কামাল

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:৪২, ১ আগস্ট ২০২২

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নারকীয় হত্যাযজ্ঞের প্রধান লক্ষ্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলেও এ দিনের ঘটনায় প্রথম শহীদ হন পুত্র শেখ কামাল। বজলুল হুদা স্টেনগান দিয়ে বঙ্গবন্ধুর বড় ছেলে শেখ কামালকে হত্যা করে।

আদালতে দেওয়া বঙ্গবন্ধু বাড়ির অন্যতম পাহারাদার হাবিলদার কুদ্দুস সিকদারের সাক্ষ্য থেকে জানা যায়, বাড়িতে প্রথম ঢুকে মেজর বজলুল হুদা এবং ক্যাপ্টেন নূর চৌধুরী। সঙ্গে আরও কয়েকজন। বাড়িতে ঢুকেই তারা শেখ কামালকে দেখতে পায়। সঙ্গে সঙ্গেই বজলুল হুদা স্টেনগান দিয়ে তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। 

শেখ কামাল বারান্দা থেকে ছিটকে গিয়ে অভ্যর্থনা কক্ষের মধ্যে পড়ে যান। সেখানে তাকে আবার গুলি করে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধু ভবনের আবাসিক ব্যক্তিগত সহকারি এবং হত্যা মামলার বাদী মহিতুল ইসলামের প্রত্যক্ষ সাক্ষ্যের মধ্যেও একই বর্ণনা রয়েছে।

তৎকালীন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল শফিউল্লাহকে বাড়ি আক্রমণের পর বঙ্গবন্ধু টেলিফোনে যা বলেছিলেন তাতেও এর সত্যতা পাওয়া যায়। ১৯৮৭ এবং ১৯৯৩ সালে একটি জাতীয় দৈনিকে দুটি সাক্ষাৎকারে শফিউল্লাহ বলেছেন, বাড়ি আক্রমণের পর বঙ্গবন্ধু জলদি ফোর্স পাঠানোর জন্য তাগিদ দিয়ে তাকে ফোন করেছিলেন। বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘শফিউল্লাহ তোমার ফোর্স আমার বাড়ি অ্যাটাক করেছে। কামালকে বোধ হয় মাইরা ফেলছে। তুমি জলদি ফোর্স পাঠাও।’

প্রবাসী লেখক ও গবেষক গোলাম মুরশিদ ‘মুক্তিযুদ্ধ ও তারপর’ গ্রন্থে এ বিষয়ে বিষদ বিবরণ দিয়েছেন। শেখ কামাল নিহত হওয়ার পর মহিউদ্দিন ও তার সঙ্গীরা বাড়ির ভেতরে ঢুকে বঙ্গবন্ধুকে খুঁজতে থাকে। শেষে তাঁর দেখা পায় সামনের বারান্দায়। সাহসের প্রতিমূর্তি মুজিব দাঁড়িয়ে আছেন প্রশান্তভাবে-হাতে পাইপ।

তাঁকে দেখে খুনী মহিউদ্দিন ভড়কে যায়, বঙ্গবন্ধুকে গুলি করতে পারেনি। বলে, ‘স্যার, আপনে আসেন’। শেষে সিঁড়ি দিয়ে যথন নামানো হয় তখন বঙ্গবন্ধু চিৎকার করে বলেন, ‘তোরা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?’ এ সময় মহিউদ্দিনকে এক পাশে সরতে বলে হুদা আর নূর স্টেনগান থেকে গুলি বর্ষণ করে বঙ্গবন্ধুর ওপর।

ভোর ৫টা ৪০ মিনিটে মুখ থুবড়ে বঙ্গবন্ধু লুটিয়ে পড়েন সিঁড়িতে। তখনো তাঁর ডান হাতে পাইপ ধরা। কয়েকটা গুলি তাঁর বুকের ডান দিকে এবং পেটে লেগেছিলো। ফলে, যখন সূর্য ওঠার কথা, সেই সূর্য ওঠার সময় বঙ্গের গৌরব-রবি গেলো অস্তাচলে।

বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ঘাতকদের মিশন তখনো শেষ হয়নি। মহিউদ্দিন, হুদা ও নূর বাড়ির বাইরে চলে যাওয়ার পর ল্যান্সার আর আর্টিলারির সেনাদের নিয়ে আসে আজিজ পাশা আর মুসলেমউদ্দীন। পাশা তার সঙ্গীদের নিয়ে দোতলায় যায়। আগে থেকেই সেখানে ছিল সুবেদার ওয়াহাব জোয়ারদার। 

তারা গিয়ে রাসেল, শেখ নাসের এবং বাড়ির এক ভৃত্যকে নিচে নিয়ে যায়। শোবার ঘরে গিয়ে বেগম মুজিব, শেখ জামাল এবং কামাল ও জামালের সদ্য বিবাহিত স্ত্রীদের স্টেনগানের গুলি দিয়ে হত্যা করে পাশা আর মুসলেম উদ্দীন।

নিচে গিয়ে ঘাতকরা রাসেলকে প্রথমে বসিয়ে রেখেছিল গেইটের পাশে পাহারাদারের চৌকিতে। রাসেল তখন মায়ের কাছে যাবে বলে কাঁদছিলো। পাশা একজন হাবিলদারকে তখন হুকুম দেয় রাসেলকে তার মায়ের কাছে নিয়ে যেতে। 

সেই হাবিলদার দোতলায় নিয়ে গিয়ে একেবারে কাছ থেকে রাসেলকে গুলি করে। (বাসস)

এএইচ


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি