গা ঢাকা দিলেন চাষী, ধানমন্ডিতে ছদ্মবেশে ফারুক
প্রকাশিত : ০৯:০৫, ৩ আগস্ট ২০২২ | আপডেট: ১২:২৬, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ডের অন্যতম মাস্টারমাইন্ড
তিন আগস্ট। রবিবার। ছুটির দিন।
আশুগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও জামালপুরে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ১৩২ কিলোওয়াট ভোল্ট লাইনের
উদ্বোধন হলো আজ। দিনভর ভ্যাপসা গরম।
সন্ধ্যায় এক পসলা বৃষ্টি হয়েছে।
রাত সাড়ে এগারোটা। পরনে লুঙ্গি। গায়ে পুরু কাপড়ের ছেঁড়া-ফাটা পোশাক। শ্রমিকের ছদ্মবেশ।
শার্টের তলায় বেল্টে বাঁধা গুলি ভরা দুটো পিস্তল। কয়েক দিন শেভ করেননি। মুখে খোঁচা খোঁচা
দাড়ি নিয়ে ধানমন্ডি এলাকায় একা ঘুরে বেড়াচ্ছে ফারুক। দুই বার চক্কর দিলেন
বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনের রাস্তায়। বাড়ির পাহারায় থাকা হাবিলদার কুদ্দুস দেখতে পেলেন এক
ছায়ামূর্তির মতো কে যেনো ঘুরে বেড়াচ্ছে।
ঝিরঝিরে বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে যাচ্ছে লেকপাড়ের গাছগুলো। ছাতা মাথায় দিয়ে ছায়া-মানুষকে
দেখতে এগিয়ে যান কুদ্দুস। গেটের কাছে আসতেই বিকট শব্দে বাজ পড়ে। গেট পার না হয়ে ফিরে
এলেন কুদ্দুস।
‘গা’ ঢাকা দিলেন চাষী রাঙামাটির খামারে দেখা যাচ্ছে না মাহবুবুল আলম
চাষীকে।
কোথায় তিনি?
একই অবস্থা করিমের। তাকেও দেখা যাচ্ছে না।
২
কে এই চাষী
মাহাবুব আলম চাষী। জন্ম ১৯২৭। মৃত্যু বছর ১৯৮৩।
জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডে অন্যতম ষড়যন্ত্রকারী।
মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর পদ পেলেন খন্দকার মোশতাক আহমদ। আবার, মাহবুবুল আলম চাষী পররাষ্ট্র সচিবের দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেন। দুজনের দায়িত্ব পাওয়া বিস্ময়কর ঘটনা ।
সিএসপি কর্মকর্তা। পঞ্চাশ দশকে ওয়াশিংটনে পাকিস্তান দূতাবাসে কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৭ সালে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তরের চাকরি হতে ইস্তফা দেন।
আমেরিকায় পাকিস্তানি দূতাবাসে কাজ করার সময় মার্কিন কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাদের ভেতরে কুখ্যাত মার্কিন গোয়েন্দা চক্র সিআইয়ের কয়েকজন অফিসারও ছিলেন। পরবর্তীকালে তাদের সঙ্গে মাহবুবুল আলমের সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর হয়েছে।
একসময় মাহবুবুল আলম পাকিস্তানের আইয়ুব মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য জুলফিকার আলী ভুট্টোর ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। ১৯৬৯ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবিতে যখন সারাদেশ উত্তাল সে সময়ে নামের সাথে ‘চাষী’ শব্দটা যুক্ত করেন মাহবুবুল আলম।
চট্টগ্রাম শহর থেকে কিছু দূরে একটা চাষের খামার প্রতিষ্ঠা করে সেখানে সবুজ বিপ্লব করার লোকদেখানো কার্যক্রম শুরু করেন। কুমিল্লা শহরে ছিল তার একটা ডেরা। নিজেকে লোকচক্ষুর আড়ালে রেখে কুমিল্লা-চট্টগ্রামে নিয়মিত যাতায়াত করতে থাকেন চাষী।
একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মাহবুবুল আলম চাষী অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র দফতরে বসলেন। রহস্যজনক !
এই মাহবুবুল আলম চাষীকে দিয়েই খন্দকার মোশতাক সিইআইয়ের যোগায়োগ রক্ষা করেন। ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে এগুতে থাকেন।
কলকাতার মার্কিন কনসাল জেনারেল গর্ডনের সঙ্গে খন্দকার মোশতাকের যোগাযোগ করিয়ে দেয়ার কাজটি করেন চাষী।।
সাংবাদিক জ্যোতি সেনগুপ্ত তার ‘বাংলাদেশ ইন ব্লাড অ্যান্ড টিয়ার্স’ এ লিখেছেন ’১৯৭১ সালের আগস্ট মাসে আমি কজন সাংবাদিক, বন্ধু ও সহকর্মীকে নিয়ে কলকাতার গ্রান্ড হোটেলে পান-ভোজন সারছিলাম।... কয়েক ‘পেগ’ গলায় ঢালার পর আমি লক্ষ করলাম মাথায় গোল টুপিপরা আমার বিশেষ পরিচিত এক ব্যক্তি সিঁড়ির দিকে যাচ্ছেন।
তিনি আর কেউ নন, মুজিবনগরের অস্থায়ী স্বাধীন বাংলাদেশ সরকারের বিদেশমন্ত্রী খন্দকার মোশতাক আহমেদ। গ্লাসটি এক পাশে সরিয়ে রেখে আমি দ্রুত ছুটলাম তার সঙ্গে দেখা করতে। আমায় দেখে তিনি একটু হাসলেন, আমায় আলিঙ্গন করলেন। বললেন, কজন বন্ধুর সঙ্গে এই হোটেলে তার একটা ‘অ্যাপয়েন্টমেন্ট’ আছে। হঠাৎ তার পেছন থেকে বেরিয়ে এলেন খুব লম্বা একটা মানুষ। তাকে আমি জানি, কলকাতার মার্কিন কনসাল জেনারেল মি. গর্ডন। তার সঙ্গে ছিলেন আরও একজন আমেরিকান, তার পরিচয় আমি জানিনে। হাত তুলে আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে মি. গর্ডন ওই ব্যক্তিকে নিয়ে বাঁ দিকে ঘুরলেন। লিফটের দিকেই গেলেন। খন্দকার মোশতাক সাহেবও ছুটলেন তাদের পিছু পিছু।
এমন সময় জনৈক বাঙালি ভদ্রলোক আমাকে অনুরোধ করলেন, মি. গর্ডনের সঙ্গে আমেরিকান লোকটি কে, তা আমি তাকে জেনে দিতে পারি কি না। আমি ওপরে গিয়ে আমেরিকানদের নাম জানলাম এবং তা ওই বাঙালি ভদ্রলোককে বলে দিলাম। ওই বাঙালি ভদ্রলোকটি সম্ভবত ভারতীয় কোনো গোয়েন্দা সংস্থার লোক। তিনি আমাকে বললেন, ওই হোটেলে অনেক ঘটনাই ঘটছে। এক বর্ষীয়ান মার্কিন মহিলা সেখানে কয়েক কামরার একটা ‘স্যুইট’ ভাড়া করেছেন এবং সেখানে বাংলাদেশ থেকে আসা অনেক লোকের যাতায়াত হচ্ছে।’
এই গ্রান্ড হোটেলে সে সময় যাতায়াত করতেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তাহের উদ্দিন ঠাকুর, ফরিদপুরের ওবায়দুর রহমান, মুন্সিগঞ্জের শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন, চট্টগ্রামের দৈনিক আজাদীর সম্পাদক মহম্মদ খালেদ। সেখানে সবকিছুর ব্যবস্থাপনায় ছিলেন ওই মাহবুবুল আলম চাষী। সেখানে মার্কিন অফিসারদের যাতায়াত ছিলো।
৩
টিবার্গ থেকে আদরের ছোট ভাই রাসেলকে রেহানা চিঠি লিখলেন আজ।
রাসুমণি,
আজকে Triberg গিয়েছিলাম। এটা জার্মানির সবচেয়ে বড় ঝরনা। অনেক উপরে উঠেছিলাম।
এদের ভাষায় বলে wasserfalle । আজকে ব্ল্যাক ফরেস্টে গিয়েছিলাম।...পড়াশোনা করো। খাওয়া-
দাওয়া ঠিকমতো করবে। মার কথা শুনবে। তোমার জন্য খেলনা কিনব। লন্ডনের চেয়ে এখানে
অনেক দাম। ছোট্ট ছোট্ট গাড়িগুলো প্রায় দুই পাউন্ড দাম। তুমি ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া ও
পড়াশোনা করো।
ইতি
রেহানা আপা
এসবি/
আরও পড়ুন