গলফ ক্লাবে খুনিচক্র ও একজন এ আর মল্লিক
প্রকাশিত : ১০:৪১, ১২ আগস্ট ২০২২ | আপডেট: ১০:৪৯, ১২ আগস্ট ২০২২
১২ আগস্ট। মঙ্গলবার। সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন অর্থমন্ত্রী আজিজুর রহমান মল্লিক। সংক্ষেপে এ আর মল্লিক। যিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারী কর্নেল ফারুক রহমানের আপন খালু এবং মোশতাকের অর্থমন্ত্রী হিসেবে তিন দিন পর ১৫ আগস্ট সন্ধ্যায় শপথ নেন যখন বঙ্গবন্ধুর লাশ সিঁড়িতে।
বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভা থেকে তাজউদ্দীন আহমদ সরে দাঁড়ালে অর্থমন্ত্রী হন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. আজিজুর রহমান মল্লিক। তিনি বাকশাল সরকারেও অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। অধ্যাপক মল্লিক মোশতাকের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়ে একই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। পরে মোশতাকের পতনের পর শিক্ষকতা পেশায় ফিরে যান, যোগ দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।
সন্ধ্যা ছয়টায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করেন সফররত কমনওয়েলথ সেক্রেটারি অধ্যাপক এএফ হোসেন, যিনি পাকিস্তানি।
২
এদিকে ঢাকা গলফ ক্লাবে জমকালো অনুষ্ঠান চলছে। আজ খুনিচক্রের অন্যতম সদস্য ফারুকের বিয়েবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অনেক অতিথি।
ফারুক-ফরিদা দম্পত্তি সবার সঙ্গে খুশল বিনিময় করছে। তিন বছর আগে ১৫ আগস্টে তাদের বিয়ে হয়। অনেক অতিথির সঙ্গে আছেন স্টাফ প্রধান ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ এবং প্রেসিডেন্টের মিলিটারি সেক্রেটারি ব্রিগেডিয়ার মাসহুরুল হক। আছেন খুনিচক্রের আরেক সদস্য রশিদ।
এদিক-ওদিক তাকিয়ে ফাঁকা জায়গায় রশিদকে ডাকলেন ফারুক।
রশিদ কাছে এলে ফারুক বললেন, ‘১৫ আগস্টেই সরিয়ে দিচ্ছি। এটাই আমার সিদ্ধান্ত।’
রশিদ বললেন, এত তড়িঘড়ি করার কী দরকার একটু সময় নিয়ে করা হোক।
এটাই আমার শেষ সিদ্ধান্ত। ইচ্ছা করলে তুমি সরে যেতে পারো। মনে রেখো, আমি ব্যর্থ হলে তোমাকেও ফাঁসিতে ঝোলানো হবে। বললেন ফারুক।
উত্তর দিলেন রশিদ, এদিন যদি করতেই হয়, হোক। তবে, আমার একটা কথা।
বলো।
আরো কিছু অফিসারকে আমাদের সঙ্গে রাখতে হবে।
ফারুক বললেন, সে ব্যবস্থা করেই রেখেছি।
৩
জিয়াউর রহমান হত্যাকাণ্ডের পাঁচ মাস আগেই জেনেছিলেন ।
এন্থনী ম্যাস্কারেনহাসের জানাচ্ছেন, ‘আমিই ফারুক রশিদ সাক্ষাৎকার নিই । এ সময়ে ফারুক আমাকে বলে সে জেনারেল জিয়াকে ১৯৭৫ সালের ২০শে মার্চ জানিয়েছিলেন আমরা সরকার পরিবর্তন করতে চাই । জিয়া তাদের বলেন, দুঃখিত আমি জংলী কিছু করতে পারব না । তোমরা ইয়ং অফিসার যা খুশি কর গিয়ে ।’
এন্থনী ম্যাস্কারেনহাসকে ফারুক বলেন, ‘আমাদের প্রথম পছন্দ ছিল জেনারেল জিয়া । কারণ সে কলঙ্কিত ছিল না । বহু চেষ্টা করে ১৯৭৫ সালে ২০ মার্চ । সন্ধ্যায় জিয়াউর রহমানের সঙ্গে আম্মি সাক্ষাত করি । জেনারেল জিয়া বললেন আমি একজন সিনিয়ার অফিসার আমি এভাবে জাড়াতে পারি না, যদি তোমরা জুনিয়র অফিসাররা এটা করতে চাও এগিয়ে যাও ।
এন্থনী প্রশ্ন করলেন, ‘জেনারেল জিয়াকে কি আপনি বিশেষভাবে বলেছিলেন যে, বঙ্গবন্ধু সরকারকে উৎখাত করা আপনাদের একান্ত ইচ্ছা?
‘দেখুন, আমি সেনাবাহিনীর ডেপুটি চিফের সাথে কথা বলেছিলাম । আমি সরাসরি প্রেসিডেন্টকে উৎখাতের কথা বললে হয়ত তিনি আমাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠাতেন । সেজন্য আমি কথাটি ঘুরপথে শুরু করেছিলাম । দুর্নীতি, সবকিছুই বিশৃঙ্খলা ইত্যাদি কথা তুলে বলেছিলাম দেশে পরিবর্তন চাই । একথা শুনে তিনি বললেন, চলুন লনে কথা বলা যাক ।’
জিয়া এরকম বললেন?
‘হ্যাঁ, আমরা লনে আসলাম । তাকে বললাম, আমরা পেশাগত সৈনিক । আমরা দেশকে সেবা করব, কোন ব্যক্তিকে নয় । সেনাবাহিনী, সিভিল সার্ভিস, সরকার সবকিছুই ধবংস হয়ে যাচ্ছে । আমাদের এগুলো পরিবর্তন করতে হবে । আমরা জুনিয়র অফিসাররা অগ্রসর হয়েছি । এখন প্রয়োজন আপনার সমর্থন এবং নেতৃত্ব। জিয়া বললেন, আমি দুঃখিত । আমি এসব ব্যাপারে জড়াতে চাই না । যদি তোমরা কিছু করতে চাও তাহলে এটা জুনিয়রদেরই করা উচিত।’
এসএ/
আরও পড়ুন