খুনিরা প্রস্তুত; কয়েক ঘণ্টা পরেই সব অন্ধকার!
প্রকাশিত : ০৮:৫৩, ১৪ আগস্ট ২০২২
১৪ আগস্ট। বৃহস্পতিবার। সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক চুং হির বিশেষ দূত সাক্ষাৎ করেন। সকাল ১০টায় নৌবাহিনী প্রধান দেখা করেন। যিনি ১৫ আগস্ট সকালে বেতারে গিয়ে মোশতাকের প্রতি আনুগত্যের ঘোষণা দেন অন্য বাহিনী-প্রধানদের সঙ্গে।
সকাল সাড়ে ১০টায় দেখা করলেন খুনিদের অন্যতম সহযোগী বেতার ও তথ্য প্রতিমন্ত্রী তাহেরউদ্দিন ঠাকুর। বেলা ১১টায় প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী চট্টগ্রামের পটিয়ার নুরুল ইসলাম চৌধুরী ও বিমানবাহিনী প্রধান একে খন্দকার দেখা করেন। এই সাক্ষাতের ১৮ ঘণ্টা পর বঙ্গবন্ধু খুন হন। বিমানবাহিনী প্রধান একে খন্দকার। যিনি মোশতাকের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করেন। পরে মোশতাকের মন্ত্রী হন। এরপর দেখা করেন জাতীয় লীগ সভাপতি আতাউর রহমান খানের দুই কন্যা।
বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিট। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বোস অধ্যাপক ড. আবদুল মতিন চৌধুরী দেখা করে পরদিন সমাবর্তন আয়োজন সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুকে অবহিত করেন।
সন্ধ্যা ৬টায় শিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ চৌধুরী ও শিক্ষা সচিব সাক্ষাৎ করেন। ড. মোজাফফর পরে জিয়াউর রহমানের শিক্ষা উপদেষ্টা হয়েছিলেন।
সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সাক্ষাৎ করেন সংসদ সদস্য অধ্যাপক আজরা আলী এবং শ্রীমতী সুপ্রভা মাঝি। আজরা আলী মোশতাকের ডেমোক্রেটিক লীগের নেত্রী হয়েছিলেন। সুপ্রভা সম্পর্কে কিছু জানা যায় না।
সরগরম ক্যাম্পাস, কাল, ১৫ আগস্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু আসবেন। গমগম করছে পুরো ক্যাম্পাস। সবখানে এখন উৎসবের রং। নানা সাজে সেজে উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের এলাকা।
কর্তৃপক্ষ আমন্ত্রণপত্রে লিখল, ‘জাতির জনক, মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় চ্যান্সেলর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুভাগমন উপলক্ষে আগামী ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ বেলা ১১টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভিসি ও সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ আপনাকে সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন।’
৪২ সদস্যের অভ্যর্থনা কমিটির ছোটাছুটি চোখে পড়ার মতো। স্বেচ্ছাসেবী ব্রিগেড সদস্যরা বুক চিতিয়ে এদিক-ওদিক ঘোরাফেরা করছে। সুন্দরী মেয়েদের সামনে এরা বেশি ঘুরঘুর করছে। ডাকসু অফিসে ছাত্রদের জটলা। ক্যাম্পাসের সার্বিক দায়িত্বে শেখ কামাল।
বঙ্গবন্ধুর পোর্ট্রেট
ক্যাম্পাসে তৈরি হয়ে গেছে বঙ্গবন্ধুর হাস্যোজ্জ্বল মুখের বারো ফুট উঁচু প্রতিকৃতি। চারুকলার কয়েকজন ছাত্র দেয়ালে লিখেছেন, এক নেতা এক দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ। টিএসসি চত্বরে তৈরি হয়েছে ষোলো ফুট উঁচু স্বাগত তোরণ। কলা ভবনের মূল সিঁড়ির দুই পাশে করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর দুটি ম্যুরাল। দেয়াল লিখন, ব্যানার ফেস্টুন আর বড় আকারের তোরণে ভরে উঠল বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা।
বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা
প্রথম যাবেন জগন্নাথ হলে। সেখান থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার হয়ে আসবেন টিএসসি চত্বরে। এই চত্বরে করা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি। ভেতরের মিলনায়তনের মঞ্চ সাজানো হয়েছে রিলিফওয়ার্ক দিয়ে। বেশিরভাগ অংশে ব্যবহার করা হয়েছে সাদা রং। সব কিছু সাজানো-গোছানো প্রায় শেষ।
ক্যাম্পাসে বোমা
হঠাৎ ক্যাম্পাসে শক্তিশালী বোমা ফাটানো হলো। প্রথম বোমা ফাটল লাইব্রেরি চত্বরে। এরপর দুপুর দুইটা ছাব্বিশ মিনিটে আরেকটা শক্তিশালী বোমা ফাটানো হলো বিজ্ঞান ভবনের সামনে।
পুলিশ জানল না, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘নিখিল বোমা’ ফাটিয়েছে গণবাহিনীর সদস্যরা। চুয়াত্তরের নভেম্বরে বোমা বানাতে গিয়ে নিহত নিখিলের স্মরণে এখন যেসব বোমা বানানো হয়, তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘নিখিল বোমা’।
এই বোমা এখন আরও অনেকগুণ শক্তিশালী। গণবাহিনীর ঢাকা কমাণ্ডার আনোয়ার হোসেন অক্লান্ত পরিশ্রম করে বোমার শক্তি বাড়িয়েছেন। ‘নিখিল বোমা’ তারই দেওয়া নাম এবং তার নির্দেশে গণবাহিনীর ক্যাডাররা বিশ্ববিদ্যালয়ে বোমা ফাটায়।
চারদিকে ফিসফাস। শোনা যাচ্ছে ক্যাম্পাসে মাইন পুঁতে রাখা আছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রেসনোটে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ফাটানো বোমা ছিল অনেক শক্তিশালী, যা কোনো বিশেষজ্ঞ ছাড়া তৈরি করা সম্ভব নয়। এই ধরনের বোমা কেবল সেনাবাহিনীর কাছে মজুদ আছে। পুলিশ মনে করে, এটি জাসদ গণবাহিনীর কাজ। আবার চীনাপন্থি বামেরাও করতে পারে।
হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা
নোয়াখালীতে একটি সামরিক হেলিকপ্টার দুর্ঘটনার শিকার হয়। ভারত সরকারের ধার দেওয়া এই হেলিকপ্টার সেনাবাহিনীর চট্টগ্রাম কমাণ্ডের অধীনে ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বোমা ফাটানোর ঘটনা তদন্তে ব্যস্ত পুলিশ। বোমা রহস্য টেনে বের করার সব রকম চেষ্টা চলছে। কাল রাষ্ট্রপতি আসবেন, নিরাপত্তা বাহিনী সজাগ।
পালানোর প্রস্তুতি
মতিঝিলে মেজর ডালিমের অফিস। সেনাবাহিনী থেকে চাকরি চলে যাওয়ার পর মতিঝিলে অফিস খুলেছে ডালিম। আগে থেকে এখানে আড্ডা দিচ্ছে আজিজ পাশা, হুদা ও ডালিম। সবার সঙ্গে টাকা। এই টাকায় ডলার কেনা হবে। ডলারগুলো থাকবে ডালিমের অফিসের ড্রয়ারে। যদি কোনো কারণে খুনপর্ব ঠিকঠাক না হয়, তা হলে দেশ থেকে পালানোর আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হচ্ছে। নূর এসে ডালিমের টেবিলের ওপর টাকা ভরা খামটা রেখে বললেন, এখনই ডলার কিনে রাখো। ডালিম বললেন, ডোন্ট ওরি।
রাসেল উত্তেজিত
কাল ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের ছয়জন ছাত্র রাষ্ট্রপতিকে স্বাগত জানাবে, রাসেল তাদের একজন। গণভবনের লেকে দুপুরে সাঁতার কেটে ক্লান্ত রাসেল। সন্ধ্যার আগেই চলে আসে ধানমন্ডির বাসায়।
বৈঠক
ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সাথে বাণিজ্যমন্ত্রী খন্দকার মোশতাকের একান্ত বৈঠক।
ফিরলেন বঙ্গবন্ধু
গণভবন থেকে রাত সাড়ে ৮টায় ধানমন্ডির বাড়িতে ফিরলেন বঙ্গবন্ধু। গেটের কাছে এসে হঠাৎ মার্সিডিজ গাড়ির স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়। আবার, স্টার্ট দিয়ে গাড়ি চলে আসে বাড়ির ভেতরে। সিঁড়িতে ওঠার সময় বঙ্গবন্ধু বললেন, বেগম সাহেবের মন-মেজাজ কেমন? গৃহভৃত্য ফরিদ জানায়, সব ঠিক আছে।
গণনার ফল
‘দোতলায় এসে এক অদ্ভুত পরিস্থিতির মুখে পড়লেন। বঙ্গবন্ধুর কাছের দুজন উদ্বিগ্ন হয়ে আছেন ভাগ্য গণনার ফল নিয়ে। মহাজাতক শহিদ আলবোখারি মন্তব্য করেছেন, যে কোনো সময় বঙ্গবন্ধুর প্রাণনাশের ঘটনা ঘটবে। তিনি গণনার ফল বলেছেন ফটোসাংবাদিক জহিরুল হককে। জহিরুল এই খবর নিয়ে দ্রুত চলে আসেন বাংলার বাণী অফিসে, ফজলুল হক মনির কাছে।
মহাজাতকের ওপর এদের সবার অগাধ বিশ্বাস। মনি এবং জহিরুল এই খবর নিয়ে সন্ধ্যার পর ধানমন্ডি চলে আসেন। মনি বললেন, ‘মহাজাতকের কথা ফেলে দেবেন না। কয়েক দিন দেশের বাইরে থেকে ঘুরে আসুন।’
বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘এখন সম্ভব নয়, কাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোগ্রাম। অনেক কাজ। তোরা বাড়ি যা।’
ফিরলেন কামাল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ খবর নিয়ে রাত সোয়া ৩টায় বাড়ি ফিরলেন শেখ কামাল। মধ্যরাত পর্যন্ত পাশের বাড়িতে ক্যারম খেলে বাড়ি ফিরেছেন জামাল। ঘরে তাদের সদ্য বিবাহিত স্ত্রী, সুলতানা ও রোজী। কাজের সুবাদে আজ ঢাকায় এসেছেন বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই শেখ নাসের। জার্নির ধকলে তিনি ক্লান্ত। রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছেন। বাড়ির বড় মেয়ে হাসিনা জার্মানিতে। তার সঙ্গে আছেন ছোট মেয়ে রেহানা। প্রতিদিনের মতো রান্নাঘর সামলে সবার শেষে ঘুমাতে যান বেগম ফজিলাতুন্নেছা। বেডরুমের দরজার সামনে শুয়ে পড়েছে গৃহভৃত্য রমা ও সেলিম।
প্রস্তুত খুনির দল
আড়মোড়া ভেঙে চলতে শুরু করল টু-ফিল্ড রেজিমেন্টের কামানবাহী শকটের যানগুলো। ক্যান্টনমেন্টের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে ১০৫-এমএম কামানগুলো টেনে নিয়ে যায় ট্রাকের বহর। গন্তব্য নতুন বিমানবন্দরের রানওয়ে। বর্তমানের হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরটি তখনো চালু হয়নি।
রাত দশটার কিছুক্ষণ পর রানওয়ের ওপর হাজির হয় মেজর ফারুক। সঙ্গে এনেছে ট্রাক বোঝাই সৈন্য আর ট্যাংক। ট্যাংকগুলো মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের উপহার। বেঙ্গল ল্যান্সারের টি-৫৪ ট্যাংকগুলো গড়িয়ে চলল রাস্তায়।
কাঁপতে থাকে রাতের অন্ধকার। রাস্তায় কোনো লোকজন নেই। বিমানবন্দরে হাজির হলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দুটি যান্ত্রিক ইউনিট। সঙ্গে আঠারোটি কামান, আটাশটি ট্যাংক এবং অসংখ্য হালকা ও ভারী অস্ত্র।
কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে আসে মেজর ডালিম। দলে আছে আজিজ পাশা, বজলুল হুদা, নূর চৌধুরী এবং শাহরিয়ার।
ফারুকের ভাষণ
ট্যাংকের ওপর দাঁড়ানো। হাতে সিগারেট। লম্বা টান দিয়ে সিগারেট ফেলে জোয়ানদের অন্তরে বিষ ছড়াতে শুরু করেন মেজর ফারুক। শুরু করলেন ইংরেজিতে। বললেন, No delay, Here and now we shall have to strick, Let us kill him and make history, এ সময় পাশে থেকে মেজর নূর চেঁচিয়ে বললেন, Let us do or die, ফারুকের কথা এখনো শেষ হয়নি।
জোয়ানরা ইংরেজি বোঝেন না, তাই ফারুক বাংলায় বলতে শুরু করে, ‘শেখ মুজিব বিশ্বাসঘাতকতা করে বাকশাল কায়েম করেছে। সেনাবাহিনীর পাল্টা রক্ষীবাহিনী গঠন করেছে। রাজতন্ত্র কায়েম করেছে। আমরা রাজতন্ত্র সমর্থন করতে পারি না। এসব করতে গিয়ে সেনাবাহিনীর বাজেট কমিয়েছে। আর্মি বোধহয় আর থাকবে না, ডিসব্যান্ড হয়ে যাবে। সেনা ও ল্যান্সার ভেঙে দিতে চেষ্টা করছে। বিদেশি শক্তির কাছে মুজিব দেশ বিক্রি করে দিয়েছে।
এই অবস্থায় দেশের সরকার বদল ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই। মুজিবকে দিয়ে প্রক্লামেশন করিয়ে সব চেঞ্জ করতে হবে। যদি সে রাজি না হয়, যদি রেজিস্ট্যান্স হয়, দেশ বাঁচবে না, আমরা কেউই সার্ভাইভ করব না। কাজেই তাকে এক্সিকিউট করা লাগবে।’
দায়িত্ব ভাগ
ফারুক বলে, মুজিবের বাড়ি আক্রমণ করবে ডালিম।
এখানে না, আমি অন্য জায়গায় যাব, বলে ডালিম।
ওকে। তা হলে মহিউদ্দিন যাও। তোমার সঙ্গে থাকবে হুদা আর নূর।
রশিদ দায়িত্ব নেয় অপারেশনের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি মোকাবিলা করার। প্রধান কাজ বাহিনীপ্রধানদের সঙ্গে যোগাযোগ এবং গুরুভাই খন্দকার মোশতাককে ক্ষমতায় বসানো। রশিদের ওপর বাড়তি দায়িত্ব পড়ল সকল পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার। এই কাজে রশিদের পাশে থাকবেন মাহবুবুল আলম চাষী।
ট্যাংক থেকে নেমে সামনে দাঁড়ানো জোয়ানদের ফারুক বললেন, ধানমন্ডির বাসা দুইটি বৃত্তাকার অবস্থায় ঘিরে রাখা হবে। একটা ভেতর বৃত্ত আর একটা বাহির বৃত্ত। এই ভেতর বৃত্তে যারা থাকবে তারা গুলি চালাবে। যারা বাইরে থাকবে তারা কেউ আক্রমণ করলে তাদের ঠেকাবে। ধানমন্ডি ২৭ নম্বর রোড, সোবহানবাগ মসজিদ, লেক ব্রিজ এলাকা ব্যারিকেড দিয়ে রাখা হবে। একই সময়ে আক্রমণ করা হবে মনি ও সেরনিয়াবাতের বাসায়।
মিন্টো রোডে সেরনিয়াবাতের বাসা আক্রমণের দায়িত্ব পায় ডালিম। তার সঙ্গে থাকবে একটি হেভি মেশিনগান, জিপ, পর্যাপ্ত অ্যামুনিশন, গুলি, এক প্লাটুন ল্যান্সার এবং একটি বড় ট্রাক।
শেখ মনির বাসা আক্রমণের দায়িত্ব রিসালদার মোসলেমউদ্দিনের। রেডিও স্টেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এবং নিউ মার্কেট এলাকার দায়িত্বে মেজর শাহরিয়ার, পিলখানা থেকে বিডিআর আক্রমণ করলে তাদের ঠেকাবে। সেনাবাহিনী আক্রমণ করলে যুদ্ধবিমান নিয়ে তৈরি থাকবেন লিয়াকত।
‘শেরেবাংলানগর এবং সাভার এলাকা থেকে রক্ষীবাহিনী আক্রমণ করতে পারে। তাদের ঠেকানোর দায়িত্ব ফারুকের। সঙ্গে থাকবে আটাশটি ট্যাংক।’
গুলি নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে আসে সুবেদার মেজর ওয়াহাব জোয়ার্দার। প্রতিদিন না, মাঝে মধ্যে রাতে এসে ডিউটি চেক করে যায়। আজ আসার কারণটা ভিন্ন। কয়েক দিন আগে কুমিল্লা সেনানিবাস থেকে ঢাকায় বদলি হয়ে এসেছে ১০৫ জনের একটি কোম্পানি। এদের মধ্যে হাবিলদার আবদুল গনি, হাবিলদার কুদ্দুস সিকদার, নায়েক সুবেদার আবদুল মোতালেব, নায়েক জলিল, সিপাহি সোহরাব এবং নায়েক হাবিবসহ পঁচিশ জন সেনার দল রাষ্ট্রপতির ধানমন্ডির বাড়ির ডিউটি পায়। ডিউটি চেক করতে এসে হাবিলদার গনিকে ওয়াহাব বলেন, ‘এখন পুরনো গুলি দিয়ে দাও। নতুন গুলি দেয়া হবে সকালে।’
বাড়িতে পাহারারত পুলিশ ও সেনা সদস্যদের ছোট আকারের একটি অস্ত্রাগার ছিল। গুলি ছিল এক হাজার রাউন্ড। সব গুলি নিয়ে যায় ওয়াহাব। গুলিহীন রাইফেল নিস্তেজ হয়ে পড়ে। গনির ডিউটি শেষ হয় রাত চারটার পর। সাতজনকে সঙ্গে নিয়ে আসে হাবিলদার কুদ্দুস সিকদার।
এনএস//
আরও পড়ুন