জাতীয় শোক দিবসে টুঙ্গিপাড়ায় শোকের আবহ
প্রকাশিত : ১২:২৪, ১৪ আগস্ট ২০২৩
১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির বেদনা মিশ্রিত শোকের দিন। ১৯৭৫ সালের এ দিনে স্বাধীন বংলাদেশের স্থপতি ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হারিয়েছিল দেশ। তাই দিনটি জাতীয় শোক দিবস। আগামীকাল মঙ্গলবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী। জাতীয় শোক দিবসকে সামনে রেখে তাঁর জন্মভূমি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শোকের আবহ সৃষ্টি হয়েছে।
শোকার্ত মানুষ বুকে শোকের চিহ্ন কালোব্যাজ ধারণ করেছেন। টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ, সড়ক, অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাড়ি সর্বত্র উড়ছে কালো পতাকা। কালো কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়েছে তোরণ। এছাড়া ব্যানার ফেস্টুনের মাধ্যমে ফুটে উঠেছে শোকের আবহ।
জাতীয় শোক দিবসকে ঘিরে টুঙ্গিপাড়ার সর্বত্র বিরাজ করছে শোকাবহ পরিবেশ।
মঙ্গলবার সকালে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে আসবেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জাতীয় শোক দিবসের টুঙ্গিপাড়ার কর্মসূচির সূচনা করবেন। এসময় তিন বাহিনীর একটি চৌকস দল গার্ড অব অনার প্রদান করবে। বিউগলে বেজে উঠবে বেদনার মূর্ছণা।
বেদীর পাশে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মাতা শেখ ফলিতুন্নেছা মুজিবসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া মোনাজাত করবেন।
রাষ্ট্রিয় কর্মসূচি শেষে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ, সহযোগি সংগঠন, জেলা আওয়ামী লীগ, টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগ, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শ্রমজীবি, পেশাজীবি সংগঠন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধের বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে।
এরপর টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সের পাবলিক প্লাজায় জেলা প্রশাসন আয়োজিত বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। এতে বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের শহীদ, মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী শহীদদের রুহের মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হবে। এ সময় দেশ ও জাতির কল্যাণ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ূ ও সাফল্য কামনায় প্রার্থনা করা হবে।
জাতীয় শোক দিবসের রাষ্ট্রীয় এ কর্মসূচিত মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, এমপি, তিন বাহিনীর প্রধানগণ, আইন শৃংখলা বাহিনীর প্রধানরাসহ রাষ্ট্রের পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা অংশ নেবেন। এছাড়া কেন্দ্রীয়, স্থানীয় ও দেশের বিভিন্ন জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়ির সহসভাপতি মোঃ ইলিয়াস হোসেন বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে টুঙ্গিপাড়ার সব মসজিদ, মন্দির ও গীর্জায় বিশেষ প্রর্থনার আয়োজন করা হয়েছে। মাদ্রাসা, এতিমখানায় খাবার বিতরণ করা হবে। এছাড়া ১টি পৌরসভা ও ৫টি ইউনিয়নের ৫৪টি ওয়ার্ডে আলোচনা সভা, মিলাদ, দেয়া মাহফিল এবং গণভোজের আয়োজন করা হয়েছে।
জাতীয় শোক দিবসের রাষ্ট্রীয় কর্মসূচিকে সমানে রেখে টুঙ্গিপাড়ার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সেখানে আইন শৃংখলা রক্ষাবাহিনীর পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সার্বক্ষণিক কাজ করছেন।
গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক কাজী মাহবুবুল আলম শোক দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার টুঙ্গিপাড়া সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, জাতীয় শোক দিবসের সকল কর্মসূচি সফল করতে গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন, টুঙ্গিপাড়া উপজেলা প্রশাসন, গণপূর্ত, এলজিইডি, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ অন্যান্য দপ্তর প্রয়োজনী সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। রাষ্ট্রিয় এ কর্মসূচি সফল করতে তিনি সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ বাবুল শেখ বলেন, জাতীয় শোক দিবস আমাদের কাছে শ্রাবণের অশ্রুধারার দিন। দিনটি বড়ই বেদনার। এদিন আমরা আমাদের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সন্তান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হারিয়ে ছিলাম। শোকের দিনে তাঁর স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাব। বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্টের শহীদদের আত্মার শান্তি কামনায় আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ জানাব। অশ্রুপাত করে তাদের জন্য দোয়া মোনাজাত করব।
উল্লেখ্য, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত শেখ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান, মাতা শেখ সায়েরা খাতুন। পিতামাতা তাকে আদর করে খোকা বলে ডাকতেন। ছোটবেলা থেকেই তার মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ ও নেতৃত্বের গুণাবলী প্রকাশ পায়। দৃঢ়চেতা ও অসীম সহসী খোকা ধীরে ধীরে হয়ে ওঠেন সবার প্রিয় মুজিব ভাই।
১৯৬৯ এর গণআন্দোলনের চূড়ান্ত বিজয়ের পর ছাত্র জনতা তাঁকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেন। তিনি দীর্ঘ লড়াই, সংগ্রাম করে বাংলাদেশ স্বাধীন করেন। হয়ে ওঠেন বাঙালি জাতির পিতা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের চক্রান্তে বিপথগামী সেনা সদস্যরা বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে। ৭৫-এর ১৬ আগস্ট মৃত্যুহীন নিথর দেহ নিয়ে বঙ্গবন্ধু টুঙ্গিপাড়ার প্রিয় মাটিতে ফিরে আসেন। পিতা-মাতার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর কবরকে ঘিরে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু সমাধিসৌধ কমপ্লেক্স গড়ে উঠেছে। বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধ টুঙ্গিপাড়া গ্রামকে নবআলোকে উদ্ভাসিত করেছে।
এটি এখন বাঙালি জাতির তীর্থভূমিতে পরিণত হয়েছে। ছুটির দিনে এখানে অন্তত ১০ হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। এছাড়া প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ এখানে এসে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তার জন্য কাঁদেন ও আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ প্রার্থনা করেন।
ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধের বেদী।
সূত্র: বাসস
এএইচ
আরও পড়ুন