প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বঙ্গবন্ধু আমাদের রোল মডেল
প্রকাশিত : ০৮:৪৭, ১৫ আগস্ট ২০১৯
জাতিরাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে অভ্যুদয়ের পর বাংলাদেশের ৪০ বছরের পথচলা নেহাত কম সময় নয়। বিক্ষোভ, বিতৃষ্ণা, বিবমিষার স্যাঁতসেঁতে দগদগে ঘা’য়ে প্রতিনিয়ত সংক্রমিত হচ্ছে অবর্ণনীয় ত্যাগ, সাধনা-সংগ্রাম, কষ্ট-ক্লেশে অর্জিত আমাদের স্বাধীন ভূখণ্ড। আমাদের রয়েছে অগণন রক্তাক্ত অতীত, স্মৃতি, আছে ইতিহাসের অনেকগুলো কালিমালিপ্ত অধ্যায়।
পনের আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যা ও তৎপরবর্তী রাজনীতি জাতি হিসেবে আমাদের বিভক্তির দেয়ালকে অনতিক্রম্য উঁচু করে দিয়েছে। যারা সেদিন হত্যাকারী অপরাধী চক্রকে সঙ্কটের ত্রাতায় পরিণত করার চেষ্টা করেছিল, ক্ষমতার চোখ রাঙিয়ে ইতিহাসকে রিমান্ডে নিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে বাধ্য করেছিল, ইতিহাসের পুনর্বয়ান, পুনর্লিখন ও পুনর্মূল্যায়নে তাদের মুখোশ আজ প্রায় উন্মোচিত।
আমরা এখন জানি কাদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণে, কাদের পরোক্ষ মদদে এই জঘন্যতম, নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটেছিল। ইতিহাসের এই পর্বের কে মীরজাফর, কে মিরণ, কে সেনাপতি ইয়ার লতিফ- এ সত্য দিবালোকের মতো পরিষ্কার।
বেদনা বিধূর ও কলঙ্কের কালিমায় কলুষিত বিভীষিকাময় সেই পনের আগস্টে নরপিশাচ ঘাতক দল অদম্য রক্তপিপাসু। বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ সন্তান ১০ বছরের শিশু রাসেল, শিশু আরিফ সেরনিয়াবাত, সুকান্ত আবদুল্লাহ রিন্টু কেউই তাদের বীভৎস ছোঁবল থেকে রেহাই পায়নি। রেহাই পাননি বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, সুলতানা কামাল, রোজী জামাল, আরজু মণি, বেবি সেরনিয়াবাতের মতো ঋজু, দৃঢ়, সাহসী, ক্রীড়ামোদী, সংস্কৃতবান নারী।
এখনও এখানে একুশে আগস্ট ঘটে। এখনও আইভি রহমানসহ অনেকের প্রাণের প্রদীপ নিভে যায় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বর্বর হামলায়। এখনও অসংখ্য রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত ছিন্নভিন্ন লাশ পড়ে থাকে মিছিলের সারি বিস্তৃত করে। এখনও বারুদ ঠাসা গ্রেনেড পিছু তাড়া করে ফেরে আমাদের রক্তমূল্যে অর্জিত গণতন্ত্রকে। বীরের বীরত্ব গাঁথার পাশাপাশি বাংলার ইতিহাস বিশ্বাসঘাতকতারও। বারে বারে এখানে অবাঞ্ছিত সত্যের পুনরাবৃত্তি ঘটে। রক্তাক্ত অতীতের প্রতি এক ধরনের আচ্ছন্নতা সরকারে-বিরোধী দলে আমাদের সমঝোতার সেতু তৈরির প্রধান বাধা।
আমাদের এখানকার কোনো কোনো রাজনৈতিক দল সেনা অরাজনৈতিক ছাত্রছায়ায় বেড়ে ওঠে ভালো-মন্দের অবিমিশ্রিত কল্যাণকামী জাতীয় সংগঠন না হয়ে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার পাকিস্তানের সেনানায়কদের মতো নিষ্ঠুর-নৃশংস ভিলেন থেকে গেছে। তাই এখানকার প্রতিযোগিতা, প্রতিরোধ নায়কে-নায়কে না হয়ে নায়ক-ভিলেনে। পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট থেকে দু’হাজার চারের একুশে আগস্ট-ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় একই সুতোয় গাঁথা। অতীতকাতরতার এই রক্তাক্ত ট্রাজেডি কী ভোলা যায় অবলীলায়?
বঙ্গবন্ধুর শিশুতোষ সারল্য, বাংলার মানুষের প্রতি অগাধ-আস্থা-বিশ্বাস, তার সকল সুকৃতি, তার অসামান্য জনপ্রিয়তা, তার আদর্শের ধ্রুবতা, তার প্রশ্নাতীত সততা সত্ত্বেও বিংশ শতাব্দীর কৌটিল্য কূটবুদ্ধি তাকে বাসন্তীর জালে জড়িয়ে রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত করে সিঁড়িতে গড়িয়ে দেয়। আর তিনি নদী-মাঠ-ক্ষেত ভালোবেসে আবার ফিরে আসেন, রয়ে যান সকল ধানসিঁড়ি নদীর তীরে।
ষোলই ডিসেম্বর, ১৯৭১ মিত্রবাহিনীর কাছে পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের পরপরই পাকিস্তানপন্থি প্রতিক্রিয়াশীল প্রতি বিপ্লবী শক্তি দেশে ও বিদেশে তৎপর হয়ে ওঠে। রাষ্ট্র পরিচালনার মূল নীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা রাখায় আরব দেশগুলো বাংলাদেশের পক্ষে কোন প্রকার সহানুভূতি দেখায়নি। সোভিয়েত ইউনিয়ন বা সমাজতন্ত্রী দেশ সম্বন্ধে যেসব দেশ ভিন্নমত পোষণ করত তারা প্রায় সবাই পাকিস্তানকে সমর্থন করে।
ভারত-সোভিয়েত ইউনিয়ন বাংলাদেশকে সাহায্য করায় চীন তার মিত্র পাকিস্তানকে পুরো সমর্থন দেয়। জনসংখ্যায় বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র হলেও মুসলিম বিশ্বে তার অবস্থা ছিল চরমভাবে উপেক্ষিত। সেই মুসলিম বিশ্বের স্বীকৃতির সঙ্গে বিবাদমান পক্ষ পাকিস্তানের স্বীকৃতি নিয়ে তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার উদ্বেগ থাকা স্বাভাবিক।
স্বাধীনতার পরপরই সকল ভারতীয় সৈন্যের ফিরে যাওয়া এবং ’৭৪-এ বঙ্গবন্ধুর পাকিস্তান সফরের পর পাকিস্তানের স্বীকৃতি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও ঐক্যবুদ্ধির পরিচয় দেয়। দীর্ঘমেয়াদি কৌশল এবং বাংলাদেশের জনগণের শান্তি ও স্বস্তির কথা চিন্তা করে বঙ্গবন্ধুকে অনেক আপাত বিতর্কিত অথচ দূরদর্শী সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
১৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৪ জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভের পর ২৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৪ বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেন। সেখানে তিনি বলেন : ‘পাকিস্তানের সাথে স্বাভাবিকীকরণের জন্য আমরা কোনো উদ্যোগ বাদ দেই নাই এবং সবশেষে ১৯৫ জন যুদ্ধবন্দিকে ক্ষমা প্রদর্শন করিয়া আমরা চূড়ান্ত অবদান রাখিয়াছি। এ সকল যুদ্ধবন্দি মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধসহ মারাত্মক অপরাধ করিয়াছে। ইহা হইতেছে নতুন অধ্যায়ের সূচনা ও উপমহাদেশের ভবিষ্যৎ শান্তি ও স্থায়িত্ব গড়িয়া তোলার পথে আমাদের অবদান। এই কাজ করিতে গিয়া আমরা কোনো পূর্বশর্তারোপ অথবা কোনো দরকষাকষি করি নাই। আমরা কেবল আমাদের জনগণের ভবিষ্যৎ মঙ্গলের কল্পনায় প্রভাবিত হইয়াছি।’
পাকিস্তানের স্বীকৃতির পরই বাংলাদেশ সম্পর্কে সৌদি আরবসহ মুসলিম বিশ্ব এবং চীনের অবস্থান নমনীয় হয়। দুটি রাষ্ট্রেরই বাংলাদেশকে স্বীকৃতির প্রক্রিয়া চলতে থাকে। যদিও এ দুটো রাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।
বঙ্গবন্ধু রবীন্দ্রানুরাগী ছিলেন। নজরুল ছিলেন তার নিরবচ্ছিন্ন বিদ্রোহের মডেল। জেল জীবনে তিনি প্রায়শ রবীন্দ্রনাথের কবিতা পড়তেন। গাইতেন : ‘নাই নাই ভয়/হবে হবে জয়’, ‘আমার সোনার বাংলা .. ‘, ‘আজি বাংলাদেশের হৃদয় হতে কখন আপনি’, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে’ জাতীয় গান। নজরুলের ‘কারার ঐ লৌহ কপাট’, ‘দুর্গমগিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাবার হে’ তাকে ব্যাপক আলোড়িত করত। তার রাষ্ট্রচিন্তা ও রাষ্ট্রবিনির্মাণের সাধনা শুধু যে এসব কাব্য-সঙ্গীত প্রেরণানির্ভর ছিল তা নয়; বাঙালির সেক্যুলার সভ্যতা-সংস্কৃতি এবং রাষ্ট্রসাধনা সম্পর্কে তিনি ছাত্রজীবনেই আলোড়িত হন। আকৃষ্ট হন বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রতি।
বিংশ শতাব্দীর চল্লিশের দশকে নেতাজী সুভাষচন্দ্র যখন কুখ্যাত হলওয়েল মনুমেন্ট অপসারণের আন্দোলন করেন সেই আন্দোলনের অন্যতম সাহসী সৈনিক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। তিতুমীর, ক্ষুদিরাম, ফকির মজনু শাহ, প্রফুল্ল চাকী, বাঘা যতীন, নূরুল দিন, সূর্যসেন, চারণ কবি মুকুন্দ দাশ, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরেবাংলা একে ফজলুল হক, আবুল হাশিম, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুও তার প্রেরণা ছিল।
বংশ, বিদ্যা, বুদ্ধি ও বিত্তের ওপর রাজনৈতিক প্রতিপত্তি অনেকখানি নির্ভর করে। বঙ্গবন্ধুর ক্ষেত্রে এসবের বিশেষ ভূমিকা ছিল না। বংশ এবং বিত্তে তিনি টুঙ্গিপাড়ার উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান নয়। সে সময়ের হিসেবে মধ্যবিত্ত। বুদ্ধির চেয়েও তার প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব ছিল বিস্ময়কর।
একবার নাইজেরিয়ার জেনারেল ইয়াকুবু গাওয়ান বঙ্গবন্ধুকে বললেন, ‘অবিভক্ত পাকিস্তান একটি শক্তিশালী দেশ, কেন আপনি দেশটাকে ভেঙে দিলেন।’ উত্তরে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘শুনুন মহামান্য রাষ্ট্রপতি, আপনার কথাই হয়তো ঠিক। অবিভক্ত পাকিস্তান হয়তো শক্তিশালী ছিল। তারচেয়েও শক্তিশালী হয়তো হতো অবিভক্ত ভারত। কিন্তু সে সবের চেয়ে শক্তিশালী হতো সংঘবদ্ধ এশিয়া। আর মহাশক্তিশালী হতো একজোট এই বিশ্বটি। কিন্তু মহামান্য রাষ্ট্রপতি, সব কিছু চাইলেই কি পাওয়া যায়?’
বিদ্যার্জনে বঙ্গবন্ধু বারংবার বাধা পান। অসুস্থতায় পাঠ বিরতির ফলে তিনি মেট্রিক পাস করেন বিলম্বে। কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে রাজনীতিতে জড়িয়ে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর শিষ্য ও আবুল হাশেমের ভাবশিষ্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৪৭-এ ইংরেজ উপনিবেশ বিমুক্তি তথা দেশভাগের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। কিন্তু ভাষার অধিকারের সংগ্রামের সভা-সমিতি এবং শোভাযাত্রা-হরতাল সংগঠনের অভিযোগের ১৯৪৮-এর মার্চ ও সেপ্টেম্বরে দু’বার তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধস্তন কর্মচারীদের স্বার্থরক্ষার সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়ার অপরাধে ১৯৪৯ সালে মার্চ মাসে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়। সে সময় কয়েকজন আন্দোলনকারী ভবিষ্যৎ সৎ আচরণের মুচলেকা দিয়ে তাদের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করলেও বঙ্গবন্ধু কোনো মুচলেকা না দেওয়ায় তার বহিষ্কারাদেশ বহাল থাকে।
১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সালের ছাব্বিশ মার্চ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের রাজনৈতিক তৎপরতার কোন বিরতি ছিল না। ১৯৪৮ সালের ভাষা আন্দোলন ও ছাত্রলীগ গঠন, ১৯৪৯ সালে মুসলিম আওয়ামী লীগ গঠন ও খাদ্যের দাবিতে ঢাকায় ভুখা মিছিলের আয়োজন, ১৯৫১ সালে পাকিস্তান গঠনতন্ত্রের মূলনীতির বিরোধিতা, ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে কারাগারে অনশন, ১৯৫৩ সালে যুক্তফ্রন্ট গঠন, ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা বিষয়, ১৯৫৫ সালে আওয়ামী লীগের অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ, পূর্ববাংলার পরিবর্তে পূর্ব পাকিস্তানের নামকরণে বিরোধিতা।
১৯৫৬ সালে স্বায়ত্তশাসনের দাবি ও সংখ্যা সাম্যের বিরোধিতা, ১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনে মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগের ঘোষণা, ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের সামরিক শাসনে কারাবাস; ১৯৬২ সালে শিক্ষানীতি বিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের প্রতি সমর্থন, ১৯৬৩ সালে আইয়ুবী সংবিধানের বিরোধিতা, ১৯৬৪ সালে আওয়ামী লীগের পুনরুজ্জীবন, ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের নিরাপত্তাহীনতা পর্যবেক্ষণ; ১৯৬৬ সালে ৬-দফা প্রস্তাব, ১৯৬৮ সালে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ প্রত্যাহার, ১৯৭০ সালে ঘূর্ণিঝড় পরবর্তী ত্রাণকার্যে পাকিস্তান সরকারের অবহেলা ও সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় এবং ১৯৭১ সালের স্বাধিকার ও স্বাধীনতার আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুকে নিরলস রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যেতে হয়েছে।
বাঙালির স্বাধিকার ও স্বাধীনতা সংগ্রামের কেন্দ্রাতিগ শক্তি শেখ মুজিবের অভিধানে আপস শব্দটি ছিল অনুপস্থিত। পাকিস্তান সরকারের ২৪ বছর শাসনকালে বঙ্গবন্ধুকে ১৮ বার কারাগারে বন্দি রাখা হয়। তার এই বন্দিত্বের সময়সীমা ১২ বছরেরও অধিক। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে তার প্রাণদণ্ড হওয়ার কথা ছিল। ১৯৬৯ সালে অবিস্মরণীয় ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের গুণে যে ট্রাইব্যুনালে বিচার হচ্ছিল তা বাতিল হয়। এই ট্রাইব্যুনালে তিন সদস্যের মধ্যে দু’জন ছিলেন বাঙালি বিচারপতি। তারা হলেন বিচারপতি মকসুদুল হাকিম ও বিচারপতি মুজিবুর রহমান।
বিচারপতি মকসুদুল হাকিম দীর্ঘদিন জাতীয়তাবাদী শিবিরে উপদেষ্টা ছিলেন, যিনি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ফাঁসি দিতে চেয়েছিলেন। আইয়ুব-ইয়াহিয়া যা পারেনি স্বাধীন বাংলাদেশে ঘাতক বাঙালিরাই তা সাধন করেছে, সপরিবারে নৃশংসভাবে বঙ্গবন্ধু হত্যার মধ্য দিয়ে।
প্রাণীজগতে উচ্চতার জন্য উটের অহঙ্কার আকাশচুম্বী। তথাপি হিমালয়ের সঙ্গে উটের তুলনা যেমন হাস্যকর তেমনি মহানায়কের সাথে তুলনাও হাস্যকর। তবু যে বুলেট তাকে রক্তাক্ত বিদায় দিয়েছে সেই বুলেটের চেয়ে তিনি আজ অনেক বেশি শক্তিশালী। বঙ্গোপসাগর থেকে উত্থিত হাজার বছরের সংগ্রামী গ্রাম-সভ্যতার ঐতিহ্যে লালিত নদীবিধৌত এই ব-দ্বীপের বিভেদ মেটানো সহজ নয়।
ভিক্টর হুগো বলেছেন, ‘নতুন সময় নতুন চিন্তাকে অনিবার্য করে তোলে।’ তাই সব কিছুর পরও সকল অবিশ্বাস-সংশয়ের দেয়াল সরিয়ে আমাদের সমঝোতার পথে, ঐক্যবুদ্ধির পথে চলতে হবে। কেননা অপার ক্ষমাশীল বঙ্গবন্ধু সব কিছুর পরও এ পথেই চলতে চেয়েছেন। আলিঙ্গন করেছেন মৃত্যুকে।
তার অস্বাভাবিক মহাপ্রয়ান দিবসে আমরা আর শোক না করে সৌজন্য তোরণের অসৌজন্যতা বাদ দিয়ে আসুন স্মরণ করি তার আজন্ম সাধনার মহামূল্যবান কীর্তিকে। এখনও তিনি বাংলার দুর্জয় তারুণ্যের হিমালয়, দুর্যোগের অমানিশায় উজ্জ্বল বাতিঘর। যতদিন এ বাংলার চন্দ্রসূর্য উদয় হবে ততদিন ভোরের শুকতারার মতোই বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকবেন কোটি কোটি বাঙালির হৃদয়ে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বঙ্গবন্ধু আমাদের রোল মডেল।
(লেখাটি ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু গ্রন্থ থেকে নেয়া)
এএইচ/
আরও পড়ুন