ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৩ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

ডিসেম্বরের রণাঙ্গন

নিয়াজির কান্নায় কী বললেন গভর্নর?

শেখ সাদী

প্রকাশিত : ১১:৩৫, ৭ ডিসেম্বর ২০২১ | আপডেট: ১১:৩৫, ৭ ডিসেম্বর ২০২১

Ekushey Television Ltd.

সংকেত বার্তা এলো রাওয়ালপিন্ডি থেকে। বার্তা নম্বর জি ০৯০৭।

বার্তায় নিয়াজিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ‘লড়াই অব্যাহত রাখুন’।

এদিকে যুদ্ধ পরিস্থিতির বিবরণ দিয়ে জেনারেল নিয়াজি একটি গোপন বার্তা পাঠালেন রাওয়ালপিন্ডি হেড কোয়ার্টারে। বার্তায় বললেন, ‘আমার সৈন্যরা দিনাজপুর, রংপুর, সিলেট, মৌলভীবাজার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, লাকসাম, চাঁদপুর ও যশোরে প্রবল চাপের মুখে রয়েছে। ১৭ দিনে যেসব খণ্ডযুদ্ধ হয়েছে, তাতে জনবল ও সম্পদের বিচারে আমাদের ক্ষয়ক্ষতি বেড়ে গেছে। রাজাকারদের অস্ত্রসহ পালিয়ে যাওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের নিজেদের ট্যাংক, ভারী কামান ও বিমান সমর্থন না থাকায় পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটেছে।’  

এই বার্তা পেয়ে হেড কোয়ার্টার থেকে সম্মুখ সমরের সৈন্যদের পিছিয়ে এনে প্রতিরোধ ঘাঁটিতে সমবেত করার পরিকল্পনার চুড়ান্ত দেয়া হয়।

নিয়াজির পরিকল্পনা চুড়ান্ত হয়ে সেনা কর্তাদের কাছে পৌঁছার আগেই প্রাণভয়ে পালাতে থাকে পাকিস্তানি সেনারা।

নিয়াজির শক্তিশালী দুর্গ যশোরে পৌঁছে যায় মিত্রবাহিনীর নবম ডিভিশন। বিপুল অস্ত্র পড়ে আছে পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে। নেই কেবল পাকিস্তানি সৈন্য। যশোর থেকে পাকিস্তানি সেনারা পালিয়ে যাচ্ছে দুই দলে ভাগ হয়ে।

একদল চলে যায় খুলনায়। আরেকটি দল যায় ফরিদপুর-গোয়ালন্দে।

মিত্রবাহিনীর সাথে যুক্ত হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা সিলেট শহর মুক্ত করে। মুক্ত হলো মৌলভীবাজার।

যুদ্ধ চলছে কুমিল্লার লাকশামে।

লড়াই চলছে বগুড়া-রংপুর মহাসড়কে।

মুক্ত হলো নোয়াখালী। ছয় ডিসেম্বর গভীর রাতে মাইজদী পিটিআই ও বেগমগঞ্জ টেকনিক্যাল হাইস্কুল ক্যাম্প ছেড়ে কুমিল্লা সেনানিবাসের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় পাকিস্তানি সেনা।

এসময় বেগমগঞ্জ-লাকসাম সড়কের বগাদিয়া ব্রিজ অতিক্রম করতেই সুবেদার লুৎফুর রহমান ও শামসুল হকের নেতৃত্বে মুক্তি বাহিনীর হাতে  খতম হয় অসংখ্য পাকিস্তানি।

আর, সাত ডিসেম্বর সূর্য উদয়ের আগে থেকেই বিভিন্ন স্থান থেকে বিজয় মিছিল নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করে মাইজদীতে পিটিআই ক্যাম্পে। সন্ধ্যার আগেই মুক্ত হয় জেলা শহর মাইজদী।

মুক্ত হয় নোয়াখালী।

সন্ধ্যার পর। জেনারেল আমির আবদুল্লাহ নিয়াজি উদ্ভ্রান্তের মতো গভর্নর মালিকের বাড়িতে ঢুকলেন। মালিকের ড্রইংরুমের সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছেন মুখ্য সচিব মুজাফ্ফর হোসেন । ঘরে এসে নিয়াজি গাছ থেকে পড়া পাকা কাঁঠালের মতো বসলেন। কয়েক মিনিট কথা নেই। হঠাৎ, ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলেন নিয়াজি।

মুখ্য সচিব এই সুযোগে নিয়াজির সঙ্গে কান্না জুড়ে নিলেন। গভর্নর এম এ মালিক কাঁদলেন না। নিয়াজির কাছে এসে ঘাড়ে হাত রেখে কান্না জড়ানো গলায় বললেন, আপনার কোনো দোষ নেই। আমাদের সেনা ও অস্ত্র কম। আপনি অনেক চেষ্টা করেছেন। সবই আমাদের কপাল।

রাত ১০টা। আকাশবাণী থেকে হিন্দি, উর্দু ও পশতু ভাষায় জেনারেল মানেকশ বাংলাদেশে দখলদার বাহিনীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান।

শেখ সাদীঃ লেখক ও গবেষক

এসবি 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি