ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ০৩ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

ডিসেম্বরের রণাঙ্গন

নিক্সন বললেন ভুট্টো বেজন্মা; জন্ম হলো ‘বঙ্গবন্ধু নৌবহর’

শেখ সাদী

প্রকাশিত : ০৮:৩৬, ৯ ডিসেম্বর ২০২১

Ekushey Television Ltd.

উত্তেজিত নিক্সন। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিক্সনের মাথার চুল ছেঁড়ার দশা। ইন্দিরাকে চিঠি পাঠালেন, ‘সেনাদের সরিয়ে নিন।’ ইন্দিরা জানিয়ে দিলেন, সম্ভব নয়। বিকেল পাঁচটা ৫৫ মিনিট। হোয়াইট হাউসে বৈঠকে বসলেন প্রেসিডেন্ট নিক্সন আর হেনরি কিসিঞ্জার। 

নিক্সনের গায়ে অফ হোয়াইট শার্ট। ওপরে নেভি ব্লু কোট। আজ টাই ঝোলাননি। মন ভালো নেই। দক্ষিণ এশিয়া নিয়ে চিন্তিত। কপালের ভাঁজগুলো আরও লম্বা হয়েছে। পাকিস্তানের হেরে যাওয়া মানে সোভিয়েতের জয়। তাই রাতে ভালো ঘুম হয়নি। চোখে ঘুম লেপ্টে আছে। ঘন ঘন কফি পান করে ঘুম তাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। 

কিসিঞ্জারকে নিক্সন বললেন,‘ভুট্টো একটা ভয়ংকর বেজন্মা’। 

কিসিঞ্জার জানালেন, ভুট্টো ওয়াশিংটন আসছেন। 

ভুট্টো? বেজন্মার বাচ্চাটা আসছে কেন? বাংলাদেশ স্বাধীন করার পর কাশ্মীর দখল করবে ইন্দিরা? 
আমাদের কাছে সে রকম কোনো তথ্য নেই। বললেন কিসিঞ্জার।

নিক্সন ও কিসিঞ্জার ইন্দিরা গান্ধীকে সহ্য করতে পারতেন না। কথায় কথায় ইন্দিরা গান্ধীকে ‘দ্যাট বিচ’ বলে গালি দিতেন নিক্সন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এখনো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন দুই টুকরো পাকিস্তানকে একসঙ্গে রাখতে। 

এদিকে পাকিস্তানি নৌসেনাদের থেকে কেড়ে নেওয়া ছয়টি ছোট আকারের নৌযান নিয়ে গঠিত হলো বঙ্গবন্ধু নৌবহর। এটিই বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রথম নৌবহর। আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করলেন মুজিবনগর সরকারের স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও পুনর্বাসনমন্ত্রী। ‘বঙ্গবন্ধু নৌবহর’ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে নিয়মিত বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশ নৌবাহিনী।

এমন দিনে সপ্তম নৌবহর রওনা দিতে নির্দেশ দিলেন নিক্সন। শক্তিশলি এই নৌবহরের উদ্দেশ ছিল, বঙ্গোপসাগরে ভারতের নৌ অবরোধ ধ্বংস করা। সপ্তম নৌবহর আসতে সময় লাগবে অন্তত পাঁচদিন। এদিকে মুক্তি-মিত্র বাহিনীর প্রবল আক্রমনে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে পাকিস্তানি সেনা। 


মুক্তি-মিত্র বাহিনীর একটি দল যাচ্ছে আশুগঞ্জ, দাউদকান্দি আর চাঁদপুরের পথে।

পশ্চিমে আরেকটি দল দুপুরের মধ্যেই পৌঁছে গেছে মধুমতি নদী তীরে। 

মুক্ত হলো দাউদকান্দি। দাউদকান্দি-মেঘনা-তিতাস এলাকা থেকে মার খেয়ে পালিয়ে যায় পাকিস্তানি সেনা। লঞ্চে উঠে চম্পট।

মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড আক্রমণের মুখে পাক হানাদার বাহিনী পিছু হটতে শুরু করলে দাউদকান্দির মুক্তিযোদ্ধারা মানসিকভাবে দ্বিগুণ শক্তিশালী হয়ে উঠে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ইলিয়টগঞ্জ, শহিদনগর ওয়ারল্যাস কেন্দ্রে এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগের দাউদকান্দির ডাক বাংলোতে অবস্থানরত পাক সেনাদের টার্গেট করে উত্তর ও দক্ষিণ পার্শ্ব হতে এক যোগে আক্রমণ শুরু করে। 

বৃহত্তর দাউদকান্দির মোহাম্মদপুর, ডাকখোলা, গোয়ালমারী, বাতাকান্দি এলাকার ক্যাম্প থেকে মুক্তিযোদ্ধারা অগ্রসর হতে থাকে। পূর্ব দিক হতে মিত্র বাহিনীর সহায়তায় মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ করলে পাক সেনারা পশ্চিম দিকে সরে যায়।

আট ডিসেম্বর রাত থেকে পরদিন সকাল ১১ টা পর্যন্ত যুদ্ধের পর পাকিস্তানি সেনারা দাউদকান্দিতে তাদের শেষ আশ্রয়স্থল সড়ক ও জনপথের বাংলোতে উঠে। সেখান থেকে লঞ্চযোগে মেঘনা নদী দিয়ে গজারিয়া হয়ে ঢাকায় পালিয়ে যায়। দুপুরের পর মুক্তিযোদ্ধারা দাউদকান্দি পৌঁছে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগানে স্বাধীন বাংলার লাল সবুজের পতাকা উড়ায়। 

ওদিকে শত্রুমুক্ত হলো কুষ্টিয়ার কুমারখালি। মুক্ত হলো নেত্রোকোনা। ত্রিশাল। পাবনার সাঁথিয়া, খুলনার কপিলমুনি, পাইকগাছা। মুক্ত গাইবান্ধা। যশোরের অভয়নগর। 


কলকাতার বিকেল। মিত্রবাহিনীর প্রধান জেনারেল অরোরা সাংবাতিকদের বললেন, ‘আমরা এখন ঢাকা লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। ভারতীয় সেনা প্রধান জেনারেল মানেকশ পাকিস্তানি সেনাদের উদ্দেশে বললেন, ‘ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, তোমরা যদি বাঁচতে চাও, ভারতীয় বাহিনীর কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পন করো। নতুবা তোমাকের নির্মমভাবে হত্যা করা হবে।’

করাচিতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দেখা করলেন জাতিসংঘে প্রতিনিধিত্বকারী পাকিস্তান দলের নেতা মাহমুদ আলী। ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দেখা শেষ করে সাংবাদিকদের সামনে সোভিয়েত ইউনিয়নের নামে খিস্তি করলেন মাহমুদ। বললেন, সোভিয়েতের উচিত বিশ্বশান্তির প্রতি শুরুত্ব দিয়ে ভারতের ভারতের পক্ষ থেকে সরে দাঁড়ানো। পাকিস্তান তাদের নির্ভিক ও ঐতিহাসিক সমর্থনের জন্য আমেরিকার প্রতি কৃতজ্ঞ। 

নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী নুরুল রেডিও পাকিস্তানের ভাষণে ভারতীয় হামলা মোকাবিলার আহবান জানান। বললেন, ‘মিত্রবাহিনীর নগ্ন হামলায় অসংখ্য বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে। 

ভুটান ও ভারতের স্বীকৃতি দেয়ার পর এই প্রথম বৈঠকে বসলেন বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা কমিটি। অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানানো হলো দুই দেশকে।

শেখ সাদীঃ লেখক ও গবেষক

এসবি 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি