ঢাকা, সোমবার   ০২ ডিসেম্বর ২০২৪

বধ্যভূমি-গণকবরের সংখ্যা কত, সুরাহা হয়নি আজও (ভিডিও)

মুশফিকা নাজনীন, একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:০২, ৩ ডিসেম্বর ২০২২ | আপডেট: ১২:০৩, ৩ ডিসেম্বর ২০২২

সারাদেশে বধ্যভূমি ও গণকবরের সংখ্যা ২০৯টি। এটি কেবল সরকারি হিসেব। বেসরকারি অনুসন্ধান বলছে, বধ্যভূমি আর গণকবরের সংখ্যা দু’হাজারের বেশি। মহান মুক্তিযুদ্ধের এসব স্মৃতি সংরক্ষণে উচ্চ আদালতে রিট আবেদনের সুরাহা না হওয়ায়, পূর্ণতা পায়নি শহীদদের প্রতি জাতির সম্মান প্রদর্শন।

১৯৭১ সালে পাকিস্তানী ও তাদের এদেশীয় দোসররা মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয়দের ধরে এনে এই আম গাছের গোড়ায় জবাই করতো। পরে মরদেহগুলো ফেলতো পুকুরে। 

এ নৃশংসতা সইতে পারেনি আমগাছটি। কিছুদিন পর মরে যায়। তার শেকর থেকে জন্ম নেয় এই বর্তমান আমগাছটি। 

কালের সাক্ষী এই আমগাছটি রয়েছে সরকারি বাঙলা কলেজে। অবস্থান ঢাকার মিরপুরে, যেখানে পাকিস্তানী দোসরেরা হত্যা করেছিল মুক্তিকামী অসংখ্য বাঙালিকে।
 
এই কলেজের পুকুরের পানি সেদিন রক্তে লাল হয়েছিল। জোড়া গাবগাছের গোড়ায় মাটিচাপা দেয়া হয়েছিল নাম না জানা বহু মানুষকে। নারী নির্যাতন কক্ষ যেন আজও বেদনায় নীল। 

৩টি কুয়া ছিল যাতে ভর্তি ছিল শহীদের লাশে। বহুদিন পর্যন্ত বাঙলা কলেজের ঝোপঝাড় আর আশেপাশে পাওয়া যেত হাড়গোড় আর কঙ্কাল। ইতিহাসের সাক্ষ্য বাঙলা কলেজের স্মৃতি অমলিন হলেও সংরক্ষণ হয়নি ক্যাম্পাস সংলগ্ন অনেক বধ্যভূমি। দখল হয়ে গেছে এর অনেক জায়গা।

মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. ফেরদৌসী খান বলেন, “এখানে একটা টিনশেড আছে, সেখানে রায়ের বাজারের মতো বধ্যভূমি নির্মাণ করার প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া হয়েছিল। পিডব্লিউডি থেকে পাস করা হয়েছিল। কিন্তু সেই জিনিসটা কেন হলো, সেই সময়কার প্রিন্সিপ্যাল কেন করলেন- এটাই আমার প্রশ্ন।”

রাজধানী ঢাকার ৭০টি বধ্যভূমির মধ্যে শুধু মিরপুরেই রয়েছে ২৩টি। সংরক্ষণ করা হয়েছে মাত্র তিনটি গণকবর। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের তথ্য বলছে, ঢাকা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ৩৯টি বধ্যভূমি আছে। 

খুশবন্ত সিংয়ের সাড়া জাগানো বই ট্রেন-টু পাকিস্তান যাঁরা পড়েছেন কিংবা দেখেছেন এই সিনেমা তাদের কাছে চুয়াডাঙ্গার ঘটনাটি সহজেই অনুমেয়। পাকিস্তানী সেনারা আলফাডাঙ্গায় ট্রেন থামিয়ে হত্যা করেছিল শত শত মুক্তিকামী বাঙালিকে। পরে মাটিচাপা দিয়েছিল শহীদের মরদেহ।

নাটোরের ছাতনী গ্রাম। যেখানে ৪শ’ বাঙালিকে ব্রাশ ফায়ারে হত্যা করেছিল পাকিস্তানী সেনারা। এসবের স্মৃতি বহন করছে রাজশাহী, দিনাজপুর, গাইবান্ধার কয়েকশ’ গণকবর। যেখান থেকে উদ্ধার হয়েছিল হাজার হাজার কঙ্কাল।

চট্টগ্রামের দামপাড়ায় ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়েছিল শত মানুষকে। খুলনার চুকনগরে শহীদ হয়েছিল ১০ হাজারের বেশি। খালিশপুরে জ্বলন্ত বয়লারে অসংখ্য বাঙালিকে পুড়িয়ে হত্যা করে হানাদাররা। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার চড়িয়া গ্রামে ১৫৪ জন মানুষকে এসিড দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। 

গণকবরের জায়গাগুলো দিনে দিনে হারিয়ে গেছে। গড়ে উঠেছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বহুতল ভবনসহ নানান ধরণের স্থাপনা। কোথাও বনজঙ্গলে ঢাকা পড়েছে মুক্তিযুদ্ধের অমরসাক্ষী।

ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন জানান, ৫০ জেলায় গবেষণা চলছে। আর ৩৮ জেলার বধ্যভূমির চিত্র চূড়ান্তভাবে জানা সম্ভব হয়েছে। 

৩৮ জেলায় গণহত্যার ঘটনা ঘটেছে  ১৫ হাজার ৮২৮ টি, বধ্যভূমি ৮০৭, গণকবর-১২৩৭
ও নির্যাতন কেন্দ্র ছিল ১ হাজার ৮৪টি। 

জেলাওয়ারি জরিপ চালালে সংখ্যা আরও বাড়বে, বলেন অধ্যাপক মামুন। 

ইতিহাসবিদ ও গবেষক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, “অনেক নদীতে হারিয়ে গেছে, অনেক দখল হয়ে গেছে। যে কারণে কেউ আর এগুলো চিহ্নিত করতে চায় না। তারা মনে করে জমিটা তাদেরকে থেকে নিয়ে নেওয়া হবে।”

গণকবরও বধ্যভূমি সংরক্ষণে উচ্চ আদালতের ভূমিকার প্রসঙ্গও টানেন ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন। 

তিনি বলেন, “হাইকোর্টে একটি রিট করেছিলাম, তারা একটি রায় দিয়েছে। সেটা হচ্ছে যে, মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত প্রতিটি বিষয় সরকারকে সংরক্ষণ করতে হবে। সরকারি দপ্তরগুলো সেটা জানে কিনা তা জানি না।”

সরকারিভাবে বেশক’টি স্থানে তৈরি হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ। কিন্তু সংরক্ষণ হয়নি দেশের সবগুলো বধ্যভূমি আর গণকবর।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি