অনুবাদ সংকটে বিশ্বে পিছিয়ে বাংলা সাহিত্য (ভিডিও)
প্রকাশিত : ১৩:০৭, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪
দক্ষ অনুবাদকের সংখ্যা দেশে খুবই কম। আবার রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ কিংবা অনুবাদশিল্পের পৃষ্ঠপোষকতা নেই বললেই চলে। ফলে বিশ্বসাহিত্যের মানদরবারে বাংলার উপস্থিতি অনেকটাই ম্লান এবং বিষন্ন। এ স্থবিরতা কাটাতে দরকার বিশেষ প্লাটফর্ম।
অনুবাদের মাধ্যমে আঞ্চলিক সাহিত্য হয়ে ওঠে ভিনদেশি মানুষের সুখপাঠ্য। সরল এবং প্রাঞ্জল ভাষার অনুবাদ সব সময়ই ভিন্ন আবহ দান করে আসছে বিশ্বসাহিত্যের অঙ্গনে। এর মাধ্যমে ব্যক্তি যেমন জানতে পারেন ভিন্ন সমাজকে, তেমনি রাষ্ট্রিক পরিচয় সর্বগ্রাহী হয়ে ওঠে মুহূর্তেই। সামষ্টিক সমাজ থেকে বিশ্বজনীন চিন্তার খোরাক জোগাতে তাই অনুবাদসাহিত্য অনন্য এবং অনবদ্য।
সার্বিক বিবেচনায় একেবারেই পিছিয়ে আছে বাংলা সাহিত্য। প্রতিবছর সাহিত্যের যে সকল বই প্রকাশিত হয় তার ২ শতাংশেরও কম বাংলা থেকে রচিত বিদেশি অনুবাদ।
পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সের প্রকাশক কামরুল হাসান শায়ক বলেন, “সাহিত্য যেমন বিশ্বমানের হতে হবে, অনুবাদকে যুগোপযোগী এবং সেই মানসম্মত অনুবাদে পৌঁছে দিতে হবে।”
দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতকে গ্রিক ভাষায় অনূদিত বাইবেলকেই মনে করা হয় প্রথম অনূদিত গ্রন্থ। ১৯৯০ সাল থেকে অনুবাদ শুরু হয় বাংলাদেশে। যদিও ১৯৫৫ সালের পর বাংলা একাডেমি অনুবাদ শুরু করলেও তা নিভে যায় পরবর্তী সময়ে।
বিশ্ব সাহিত্যিক লুৎফর রহমান রিটন বলেন, “আমাদের সেরা লেখাগুলো পৃথিবীর মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছেনা ভালো অনুবাদের অভাবে।”
লেখক প্রকাশকেরা বলছেন, দেশি সাহিত্য বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে নানান ধরণের অনুবাদ প্রয়োজন।
বিটিএফ সভাপতি অধ্যাপক খালিকুজ্জামান ইলিয়াস বলেন, “বাংলা থেকে বিদেশি ভাষায় অনুবাদ করার লোক খুবই কম। ইংরেজিতে ভালো অনুবাদ হয়না, অন্য ভাষাতে তো কোনো প্রশ্নই আসেনা।”
ভারত অনুবাদক অধ্যাপক অভিজিৎ মুখার্জি বলেন, “পৃথিবীর প্রত্যেকটা কোন কিভাবে আমার সঙ্গে যুক্ত সেটা তারা প্রত্যেকটি মানুষ ব্যক্তিগত চেতনায় ধরবার চেষ্টা করেছেন। সেই আত্মবিশ্বাস যদি আমরা পাই যে দায়িত্বটা নেবো, সেটা হবে কিন্তু বেশি দেড়ি করলে ভাষা দুর্বল হয়ে যাবে।”
অনুবাদকেরা বলছেন, অনুবাদকর্ম এখনও স্বীকৃতি ও সম্মান পায়নি বাংলাদেশে।
অনুবাদক রিফাত মুনীম বলেন, “আমাদের ভেতরে একটা মানসিকতা আছে যে, কে অনুবাদ করেছে। এই মানসিকতা একটা বাধা তৈরি করে। পরিবেশ এবং প্রনোদনা দিতে পারিনা বলে আমাদের এখানে ভালো অনুবাদ তৈরি হচ্ছে না। কিন্তু বাংলাদেশের অনুবাদরাই যদি দেশের সাহিত্য অনুবাদ করে তাহলে সব থেকে ভালো অনুবাদগুলো আসবে।”
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক জানান, সংকট কমাতে কাজ শুরু হয়েছে।
বাংলা একাডেমি মহাপরিচালক নুরুল হুদা বলেন, “আমাদের দীর্ঘদিনের একটা প্রস্তাব ছিল, অনুবাদ একাডেমি নামে বাংলাদেশে একটা একাডেমি হতে পারে। আর বিশ্ববিদ্যালগুলোতে অনুবাদের উপর শিক্ষণ দিতে হবে, একটা কোর্স এটাকে চালু করতে হবে।”
অনুবাদ সাহিত্যের বিস্তার ঘটাতে আলাদা প্রতিষ্ঠান দরকার বলে মনে করেন কেউ কেউ।
এএইচ