ঢাকা, বুধবার   ০৬ নভেম্বর ২০২৪

‘ছোট বেলা থেকেই লক্ষ্যভেদী ছিলেন বঙ্গবন্ধু’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:৪৫, ১৭ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ১৬:৪৮, ১৭ মার্চ ২০১৮

ড. মুনতাসির মামুন

ড. মুনতাসির মামুন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সবচেয়ে বড় গুণ তিনি জনগণের পালস বুঝতেন। মানুষ কি চায় তিনি সেটা দ্রুত উপলব্ধি করতে পারতেন। জনগণের হৃদয়ের আওয়াজটাই তাঁর কন্ঠ দিয়ে বের হয়ে আসতো। ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষ্যে একুশে টেলিভিশন অনলাইনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন অধ্যাপক ড. মুনতাসির মামুন

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কখনো এলোমেলো বা উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটেননি। ছেলেবেলা থেকেই তাঁর লক্ষ্য স্থির ছিল। টুঙ্গিপাড়ার অতি সাধারণ খোকার জাতির জনক হয়ে উঠার পথটা মোটেও মসৃণ ছিল না। জেল-জুলুম-হুলিয়া যেমন বঙ্গবন্ধুকে মাথা পেতে নিতে হয়েছে, তেমনি বুকে ধারণ করতে হয়েছে বাংলার জন্য নিবেদিত অসংখ্য দামাল ছেলের ভালোবাসা। সমসাময়িক নেতাদের তুলনায় বঙ্গবন্ধু তাঁর দাবির পক্ষে সব সময় যেমন সোচ্চার ছিলেন তেমনি লক্ষ্য অটুট রেখে এগিয়ে গেছেন। কখনো উদ্দেশ্যহীন হাটেননি। লক্ষ্যচ্যুতও হননি। যা অন্যরা পারেননি। এজন্য ইতিহাস তাঁকে ঠাঁয় দিয়েছে জাতির জনকের মর্যাদায়। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অালী আদনান

একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ টুঙ্গিপাড়ার খোকা একদিন হয়ে উঠলেন একটি জাতির জনক। হাজারো আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে গড়ে উঠা স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের স্থপতির স্বীকৃতি পেলেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো?

ড. মুনতাসির মামুনঃ বঙ্গবন্ধু কখনো এলোমেলো বা উদ্দেশ্যহীনভাবে হাঁটেননি। ছেলেবেলা থেকেই তাঁর লক্ষ্য স্থির ছিল। ছেলেবেলায়ই তাঁর নেতৃত্বের গুণাবলী সবার চোখে পড়ত। তিনি রোজ একটু একটু করে এগিয়েছেন। তিনি যখন কলকাতা থেকে ব্রিটিশমুক্ত ঢাকায় ফিরে আসেন, তখনই তিনি বুঝে গিয়েছিলেন, তাঁকে অনেক কিছু করতে হবে। কাঁধে অনেক দায়িত্ব। জনগণকে ভালোবেসে এই দায়িত্ব তিনি কাঁধে নিয়েছিলেন। পঞ্চাশের দশকের শুরুতেই তিনি নতুন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। ভাষা আন্দোলনের পর তাঁর সেই স্বপ্ন গতি পায়। তাঁর আগে অনেক রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। সবার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, তারা বেশিক্ষণ লক্ষ্যে স্থির থাকতে পারতেন না। সেই বিবেচনায় বঙ্গবন্ধু রাতারাতি আবির্ভূত হননি। তিনি নীতিতে অটল থেকে জীবনের প্রতিটি দিন-ক্ষণ এগিয়ে গেছেন। কখনও লক্ষচ্যুত হননি।

একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ সমসাময়িককালের রাজনীতিকদের চেয়ে বঙ্গবন্ধুর বিশেষত্ব কি ছিল?

ড. মুনতাসির মামুনঃ বঙ্গবন্ধুর সমসাময়িক বহু রাজনৈতিক নেতা থাকলেও তাঁরা বেশিক্ষণ তাদের বক্তব্যে-সিদ্ধান্তে স্থির থাকতে পারতেন না। হ্যাঁ, তারাও শোষিত মানুষের কথা বলতেন। কিন্তু তারা কেউ আলাদা রাষ্ট্রের কথা বা স্বাধীন জাতিস্বত্ত্বার কথা বলেননি। বঙ্গবন্ধু শুধুমাত্র একজন বিচক্ষণ সংগঠক বা ভালো রাজনৈতিকই ছিলেন না বরং একটি দর্শনে বিশ্বাস করতেন। যেমন-আমাদের আজকের সংবিধানের মূল ভিত্তি বাঙালি জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র কিন্তু বঙ্গবন্ধুর-ই দর্শন। তিনি ওই সময়েই কতোটা আধুনিক ছিলেন তা এখান থেকে বুঝা যায়।

১৯৭২ সালে তিনি এই বিষয়গুলো সংবিধানে প্রয়োগ করেছিলেন। যখন মানুষ আরও বেশী অসচেতন ছিল। অর্থাৎ, তিনি বুঝতেন, জাতিগতভাবে আমাদের জন্য কোনো দর্শন মঙ্গলজনক। এককথায় বলতে হয়, বঙ্গবন্ধু মানুষকে ভালবাসতেন। সেই ভালবাসায় আবেগ যেমন ছিল তেমনি বাস্তবচিন্তা ও বিচক্ষণতাও ছিল। তিনি জনগণের পালস বুঝতেন। দেশবাসী কী চায়, সেটা তিনি বুঝতেন। জনগণের আওয়াজটা তাঁর কণ্ঠ দিয়ে বের হতো। এসব কারণেই বঙ্গবন্ধু সমসাময়িককালে অন্য অনেক রাজনীতিবিদদের ডিঙিয়ে গিয়েছেন।

একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ কোনো কোনো সমালোচক অভিযোগ করেন বঙ্গবন্ধু রাজনীতিক হিসেবে শতভাগ সফল হলেও রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে তিনি সমালোচনা ঊর্দ্ধে নন- এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আপনি কী বলবেন?

ড. মুনতাসির মামুনঃ এটা একটা অপপ্রচার। আমি নিজে বঙ্গবন্ধুর বহু সংবাদ কাভার করেছি। আমি কাছ থেকে দেখেছি, আজকে বাংলাদেশে যত আইন আছে সব আইনের ভিত্তি, এমনকি সমুদ্র আইন পর্যন্ত- সব বঙ্গবন্ধু করে গেছেন। বিধ্বস্ত একটি দেশে তিনি হাল ধরেছিলেন। সদ্য স্বাধীন একটা দেশে তখন তার চারদিকে শত্রু। যে উদ্যোগগুলো তিনি নিয়েছিলেন তা বাস্তবায়নের জন্য সময় পেলে বাংলাদেশ আজকে অন্য এক উচ্চতায় থাকতো। কিন্তু দুর্ভাগ্য, তাঁকে সে সুযোগ দেওয়া হলো না। মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় তাঁকে খুন করা হয়। আবার তাঁকে খুন করার পর যে শক্তিটি ক্ষমতায় আসে, সেই শক্তিটি বঙ্গবন্ধুর অর্জনগুলো মুছে ফেলার জন্য উঠে পড়ে লাগে। এমন অবস্থায় যারা প্রশাসক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করেন তারা একচোখা।

একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক দর্শন বাস্তবায়নে তাঁর মেয়ে আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কতটুকু সফল বলে আপনি মনে করেন?

ড. মুনতাসির মামুনঃ বঙ্গবন্ধু যে সময়ে রাজনীতি করেছেন, সেই সময়ের প্রেক্ষাপটে আর এখনকার প্রেক্ষাপট এক নয়। ফলে দুটো বিষয়ে তুলনা করলে চলবে না। বঙ্গবন্ধু সমাজতন্ত্রে বিশ্বাস করতেন। কিন্তু এখন আমাদের সমাজতন্ত্রে যাওয়ার সুযোগ নাই। বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুজনেই ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করেন। কিন্তু সেই আদর্শ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে প্রতিনিয়ত অনেক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। যা সব সময় তিনি অতিক্রম করতে পারছেন না। তবে আদর্শের জায়গা থেকে আমরা তাকে বিশ্বাস করি ও মেনে চলি।

একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ বঙ্গবন্ধুর এই জন্মদিনে তরুণদের উদ্দেশ্যে কী বলবেন?

ড.মুনতাসির মামুনঃ বঙ্গবন্ধু কর্মে বিশ্বাসী ছিলেন। মানুষের কল্যাণে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি মানুষকে ভালোবাসতেন এবং অন্তরে সবসময় ধর্মনিরপেক্ষতা লালন করতেন। আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে হলে তরুণদেরও কর্মে একাগ্রতা থাকতে হবে। সৎ হতে হবে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইনঃ আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

ড. মুনতাসির মামুনঃ আপনাকে এবং একুশে পরিবারকে অনেক শুভেচ্ছা।

/ এআর /


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি