শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস মানে ‘গণতন্ত্রের মুক্তি দিবস’
প্রকাশিত : ১৯:৪১, ১১ জুন ২০২০ | আপডেট: ১৯:৫০, ১১ জুন ২০২০
আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস আজ। দীর্ঘ প্রায় ১১ মাস কারাভোগের পর ২০০৮ সালের ১১ জুন সংসদ ভবন চত্বরে স্থাপিত বিশেষ কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
সেনাসমর্থিত ১/১১-এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই গ্রেফতার হয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় কারাগারের অভ্যন্তরে শেখ হাসিনা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন বিদেশে চিকিৎসার জন্য তাকে মুক্তি দেওয়ার দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ক্রমাগত চাপ, আপসহীন মনোভাব ও অনড় দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। এরপর থেকে দিনটি শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে আওয়ামী লীগ।
ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুর্নীতিবিরোধী অভিযানকালে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই গ্রেফতার হন শেখ হাসিনা। বেশ কয়েকটি মামলায় প্রায় ১১ মাস কারাবন্দি ছিলেন তিনি। পরে জরুরি অবস্থার মধ্যেই নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন ও প্রতিবাদের মুখে এবং উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজনে আট সপ্তাহের জামিনে মুক্তি দেওয়া হয় তাকে। মুক্তি পেয়েই চিকিৎসার উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রে যান তিনি। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায়ই তার অস্থায়ী জামিনের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়। ২০০৮ সালের ৬ নভেম্বর দেশে ফিরলে স্থায়ী জামিন দেওয়া হয় তাকে।
পরে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনে ঐতিহাসিক বিজয়ের মাধ্যমে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি তার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগসহ মহাজোট সরকার গঠিত হয়। এরপর ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। শেখ হাসিনাও টানা তৃতীয়বারসহ চতুর্থবারের মতো দেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
প্রতি বছর নানা আয়োজনে দিনটি পালন করে থাকে আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনগুলো। কিন্তু এ বছর বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে সৃষ্ট সংকটে শেখ হাসিনার নির্দেশে সব ধরনের জনসমাগমপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিহার করায় কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেনি দলটি।
তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে যার যার জায়গা থেকে শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে পরম করুণাময়ের কাছে দেশবাসীকে প্রার্থনা করার আহ্বান জানিয়েছে আওয়ামী লীগ। একই সঙ্গে বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত সরকারকে সহযোগিতা করারও অনুরোধ জানিয়েছে দলটি।
এদিকে, তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ ১১ জুনকে শুধু শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস হিসেবে নয়, গণতন্ত্রেরও মুক্তি দিবস হিসেবে মন্তব্য করেছেন।
দিবসে’র দ্বাদশ বার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের এই দিনে দীর্ঘ ১১ মাস কারাভোগের পর মুক্ত হন। এদিনটি প্রকৃতপক্ষে শুধু শেখ হাসিনার কারামুক্তি দিবস নয়, গণতন্ত্রেরও মুক্তি দিবস। কারণ তিনি সারাজীবন ধরে গণতন্ত্রের জন্য ও মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম করেছেন।’
‘২০০৭ সালে যেদিন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে বন্দী করা হয়েছিল, সেদিন শুধু তাকেই নয়, গণতন্ত্রকেও বন্দী করা হয়েছিল’ বলেন তথ্যমন্ত্রী।
মন্ত্রী এসময় শেখ হাসিনাকে গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার অগ্নিবীণা হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, ‘শেখ হাসিনা যেভাবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণের পথে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তা বিশ্বের সামনে এক অনন্য নেতৃত্বের উদাহরণ। তিনি আজ শুধু প্রধানমন্ত্রী নন, আওয়ামী লীগের সভাপতি নন, তিনি বিশ্বনেতার আসনে আসীন।’
এর আগে দিবসটিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, আ.ফ.ম বাহাউদ্দিন নাসিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, বি.এম মোজাম্মেল হক, এস.এম কামাল হোসেন, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা ও উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান উপস্থিত ছিলেন।
পরে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু ও মঙ্গল কামনা এবং দেশ ও বিশ্বকে করোনা থেকে মুক্তির জন্য মোনাজাত করা হয়।
অপরদিকে, দিবসে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে স্বেচ্ছাসেবক লীগ। শেখ হাসিনা’র দীর্ঘায়ু কামনার পাশাপাশি করোনাভাইরাসের উদ্ভুত পরিস্থিতিতে নেতৃত্ব এবং দুর্যোগ মোকাবেলায় তার দক্ষতার প্রশংসা করা হয়।
বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউ স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় পার্টি অফিসে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এ সংক্ষিপ্ত আলোচনা’র পর মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের সভাপতি বাবু নির্মল রঞ্জন গুহ সভাপতিত্ব করেন।
আলোচনা সভায় সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু। তিনি বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা কারাগারে থাকা অবস্থায় দেশ নিয়ে ভেবেছেন এবং পরিকল্পনা করে রেখেছেন ক্ষমতায় এলে কি ভাবে দেশকে এগিয়ে নেয়া যায়, ২০০৮ সালে দল ক্ষমতায় এলে কারাগারে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করে দেশকে আজ শক্তিশালী অবস্থানে দাড় করিয়েছেন, এ হলো শেখ হাসিনা , তিনি যে কোনো দুর্যোগে দেশকে নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষমতা রাখেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কারাগারে থাকা অবস্থায় ততকালীন সময়ে সংগঠনের সভাপতি আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিমের নির্দেশক্রমে স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতৃবৃন্দ নেত্রীর কারামুক্তি আন্দোলনে ব্যাপক ভূমিকা রাখে, সে আন্দোলনে ভুমিকা রাখার জন্য বর্তমান সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহের ভুয়সী প্রশংসা করেন আফজালুর রহমান বাবু।’
সভাপতির বক্তব্যে নির্মল রঞ্জন গুহ বলেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার দেশের উন্নয়নের জন্য তার আরো অনেক দিন বেঁচে থাকা দরকার। আমরা ভগবানের কাছে তার দীর্ঘায়ুর জন্য প্রার্থনা করছি । তিনি বেঁচে থাকলে করোনাভাইরাস কেনো যে কোনো মহাদুর্যোগে দেশের নেতৃত্ব দেয়ার তিনি ক্ষমতা রাখেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের মতো মহা দুর্যোগকালীন সময়ে যেখানে বিশ্ব নেতৃত্ব দিশেহারা, সেখানে আমাদের নেত্রী তার শক্তিশালী মনোবল এবং নেতৃত্বের কারনে দেশের মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন এবং বেচে থাকার জন্য তাদের সাহস যুগিয়ে যাচ্ছেন, তাই মানুষ বেঁচে থাকার প্রেরণা পাচ্ছেন, তিনি বলেন, যে কোন মহাবিপদে শেখ হাসিনাই পারে এবং তার দ্বারাই সম্ভব।’
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, কেন্দ্রীয় নেতা মজিবুর রহমান স্বপন, দেবাশীষ বিশ্বাস, কাজী মোয়াজ্জেম হোসেন, এড. মানিক কুমার ঘোস, আশীষ কুমার মজুমদার, কৃষিবিদ এ এফ এম মাহবুব হাসান, আজিজুল হক আজিজ ,রফিকুল ইসলাম বিটু, আঃ হান্নান, জসীম উদদীন মাদবর এবং মহানগর দক্ষিণ সাধারণ সম্পাদক তারিক সাঈদসহ অনেকে।
এসএ/