ঢাকা, শনিবার   ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪

৪ ডিসেম্বর : লক্ষ্মীপুর হানাদার মুক্ত দিবস

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৪:৩৫, ৪ ডিসেম্বর ২০২০

৪ ডিসেম্বর। ইতিহাসের এইদিনে লক্ষ্মীপুর জেলা হানাদার মুক্ত হয়েছিল। স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিবছর এইদিনটি লক্ষ্মীপুর হানাদার মুক্ত দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয়। ‘লক্ষ্মীপুর হানাদার মুক্ত দিবস’ উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারো শহীদদের কবর জিয়ারত, দোয়া-মুনাজাত, আলোচনা সভা ও গণকবরে পুষ্পস্তবক অর্পণসহ নানা কর্মসূচি পালন হবে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে লক্ষ্মীপুর ছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার, আলবদর ও আল-শামসদের লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, নৃশংস হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনায় ক্ষত-বিক্ষত। ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা সর্বাত্মক আক্রমণ চালিয়ে এ জেলায় পাক-হানাদারদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করে। যুদ্ধের মহাসংকট থেকে মুক্ত হয় জেলাবাসী।

স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা জানান, স্বাধীনতা যুদ্ধে জেলার বিভিন্ন স্থানে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধারা ১৯টি সম্মুখ যুদ্ধসহ ২৯টি দুঃসাহসিক অভিযান চালায়। এসব যুদ্ধে আবু ছায়েম, সৈয়দ আবদুল হালিম বাসু, রবিন্দ্র কুমার সাহা, মাজহারুল মনির সবুজ, মুনছুর আহম্মদ, চাঁদ মিয়া, মো. মোস্তফা মিয়া, জয়নাল আবেদিনসহ ৩৫জন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং হাজার-হাজার নিরীহ মুক্তিকামী মানুষ শহীদ হন। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সদর উপজেলায় ২৩ জন, রামগতিতে ২জন, কমলনগর ১জন, রায়পুরে ৭জন ও রামগঞ্জে ২জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

পাক বাহিনীকে প্রতিরোধ করতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা সর্বপ্রথম শহরের মাদাম ব্রিজ বোমা বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেন। আজও এর স্মৃতি হিসেবে পুরাতন ব্রিজটির লোহার পিলার দাঁড়িয়ে আছে।

৭১’ এর মুক্তিযুদ্ধকালীন এ জেলায় উল্লেখযোগ্য রণক্ষেত্রগুলো হল- কাজির দিঘীর পাড়, মিরগঞ্জ, চৌধুরী বাজার, দালাল বাজার, রায়পুর আলীয়া মাদ্রাসা, বাসু বাজার, ডাকাতিয়া নদীর ঘাট, চর আলেকজান্ডার, প্রতাপগঞ্জ হাই স্কুল, রামগঞ্জ হাই স্কুল এবং রামগঞ্জের গোডাউন এলাকা।

জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধে পাক-হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা জেলার বিভিন্ন স্থানে নারকীয় তান্ডব চালায়। হানাদার বাহিনীর প্রধান ক্যাম্প ছিল জেলা শহরের বাগবাড়ি এলাকায়। তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে মুক্তিকামী মানুষদের তুলে এনে এই ক্যাম্পে রেখে অমানবিক নির্যাতন চালাতো। এখানেই অসংখ্য নারী ধর্ষণের শিকার হয়। হানাদার বাহিনী মুক্তিকামী মানুষ গুলোকে হত্যা করে রহমতখালী খালে ভাসিয়ে দিতো, আবার গর্ত করে মাটিতেও পুতে ফেলতো। যার প্রমাণ জেলা শহরের বাগবাড়িস্থ গণকবর।

১৯৭১ সালের ২১ মে গভীর রাতে লক্ষ্মীপুর শহরের উত্তর ও দক্ষিণ মজুপুর গ্রামের হিন্দু পাড়ায় পাক-হানাদার বাহিনী ভয়াবহ তান্ডবলীলা চালায়। বাড়িঘরে আগুন লাগিয়ে, বহু মানুষকে গুলি ও রাইফেলের মাথার বেওনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করে। এ সময় ১১টি বাড়ির ২৯টি বসতঘর আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে আগুনে দগ্ধ হয়ে ও হানাদারদের গুলিতে প্রাণ হারায় প্রায় ৪০জন নিরস্ত্র বাঙালি। এ সব নারকীয় হত্যাযজ্ঞের আজও নীরব স্বাক্ষী হয়ে আছে শহরের বাগবাড়িস্থ গণকবর, মাদাম ব্রিজ বধ্যভূমি, পিয়ারাপুর ব্রিজ ও মজুপুরের কয়েকটি মুসলিম ও হিন্দু বাড়ি।

একাত্তরের ১ ডিসেম্বর প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হায়দার চৌধুরী এবং সুবেদার আব্দুল মতিন, আ ও ম শফিক উল্যা, হামদে রাব্বীর নেতৃত্বে হানাদার বাহিনীর বিভিন্ন ক্যাম্পে বীর মুক্তিযোদ্ধারা সাঁড়াশি অভিযান চালায়। অবশেষে ৪ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণ করে পাক-হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের অনেকে।

লক্ষ্মীপুর জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার হুমায়ুন কবির তোফায়েল বলেন, ‘পাক হানাদার বাহিনীর গতিরোধ করতে জেলা শহরের মাদাম ব্রিজটি বোমা বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। এরপর সর্বাত্মক আক্রমণ চালিয়ে পাক-বাহিনীকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করা হয়। মহান মুক্তিযুদ্ধে এ অঞ্চলের অসংখ্য নর-নারী হানাদার বাহিনীর বর্বর নির্যাতন ও হত্যার শিকার হন। সেই স্মৃতি আজও আমাদেরকে কাঁদায়।’

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে আরও বলেন, বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে প্রতারকদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। তারা ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য দৌঁড়ঝাপ করছে। অথচ আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি শুধুমাত্র দেশ ও মানুষের স্বার্থে।’
সূত্র : বাসস
এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি