ঢাকা, সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বেবী মওদুদের জন্মদিন আজ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৩৪, ২৩ জুন ২০২১ | আপডেট: ১২:৩৬, ২৩ জুন ২০২১

বিশিষ্ট সাংবাদিক, লেখক ও সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত বেবী মওদুদের জন্মদিন আজ। ১৯৪৮ সালের ২৩ জুন ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ, দেশপ্রেম এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনাই তাকে দিনে দিনে সমৃদ্ধ করেছে, দৃপ্ত পদভারে মাথা উঁচু করে এগিয়ে চলার সাহস ও প্রেরণা যুগিয়েছে। তাইতো বেবী মওদুদ একটি সাহস ও প্রত্যয়ের নাম।

বেবী মওদুদের পুরোনাম আনা মাহফুজা খাতুন। তবে বেবী মওদুদ নামেই তিনি সর্বত্র পরিচিত। এ নাম তাকে ব্যাপক পরিচিতি দিয়েছে সাহিত্য, সাংবাদিকতার জগতে নিরলস, সাহসী, প্রতিবাদী ইতিবাচক উদ্যোমের জন্য। ’৬৭ সাল থেকে তিনি লেখালেখি শুরু করেন। এই একই সময়ে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথেও সম্পৃক্ত হন। ’৬৯ এ আসাদ হত্যার পর রাজপথের মিছিলে যারা নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। ঠিক সেই সময়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি সংসদের তিনি ছিলেন পুরোধা ব্যক্তিত্ব। ’৬৭ থেকে ’৭০ পর্যন্ত তিনি রোকেয়া হলের সাহিত্য সম্পাদক এবং বাংলা বিভাগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। লিফলেট তৈরী, ম্যাগাজিন প্রকাশ, রচনা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা আয়োজনে তার দারুণ উৎসাহ ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় অবরুদ্ধ ঢাকায় থেকে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অনেক কাজ করেছেন। যুদ্ধ নির্যাতিত নারীদের আশ্রয়, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঔষধপত্র জোগার, ঢাকার এবং বিদেশী সাংবাদিকদের সাথে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে তিনি জীবন বাজী রেখে কাজ করেছেন। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় মাস্টার্স শেষ করার পর সাংবাদিকতা শুরু করেন তিনি। দীর্ঘ কর্মজীবনে বেবী মওদুদ দৈনিক সংবাদ, ইত্তেফাক, চিত্রালী ও মুক্তকণ্ঠ-এ কাজ করেন। সাপ্তাহিক বিচিত্রার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-বাসস এর প্রধান বার্তা সম্পাদক ছিলেন তিনি। মৃত্যুর আগে বিডি নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডট কমের সামাজিক বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন বরেণ্য এই সাংবাদিক। 

শিশুসাহিত্যিক হিসেবেও বেবি মওদুদের খ্যাতি দেশজুড়ে। প্রগতিশীল রাজনীতিতেও সক্রিয় ছিলেন তিনি। নবম জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ নির্বাচিত হন। সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি এবং লাইব্রেবী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তথ্য অধিদপ্তরে গবেষণা সহকারী এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিশেষজ্ঞ নারী সাংবাদিক হিসেবে বিভিন্ন সময়ে প্রশিক্ষণও দিয়েছেন। বিশ্বব্যাংক এবং ইউনিসেফের উদ্যোগে বিভিন্ন দেশে গেছেন। বিশিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ, মানবতার আন্দোলনে হল্যান্ড এবং সার্ক শীর্ষ সম্মেলনের জন্য সার্কভুক্ত দেশগুলোও ভ্রমণ করেছেন।

সাংবাদিকতার পাশাপাশি লেখালেখিতেও ছিলেন সিদ্ধাহস্ত। ছোটবেলা থেকেই দৈনিক পত্রিকায় তার ছোটদের জন্য লেখালেখির হাতেখড়ি, অনেক বইও লিখেছেন তিনি তাদের জন্য। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি লিখে গেছেন জীবনী গ্রন্থ ‘স্মৃতিচারণ’, গল্প উপন্যাস, প্রবন্ধ ও অনুবাদ প্রবন্ধ। তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা প্রায় ২০। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনেক গ্রন্থ এবং বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী গ্রন্থ প্রকাশের পেছনেও তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।

তিনি মহিলা পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। স্বাধীনতার পর প্রকাশনা, প্রচার ও আন্দোলন সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছিলেন। মহিলা সমাচার প্রকাশ করার দায়িত্বও ছিলো এক সময়ে তাঁর। যুদ্ধ বিরোধীদের বিচারের দাবীতে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাথে যুক্ত হয়ে আন্দোলনে সোচ্চার ছিলেন।

২০১৪ সালে ২৫ জুলাই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। 
এসএ/

 

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি