ঢাকা, রবিবার   ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

সুরসম্রাট শচীন দেব বর্মণের প্রয়াণ দিবস

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১০:২৪, ৩১ অক্টোবর ২০২১

উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতশিল্পী, সুরকার, গীতিকার ও সঙ্গীত পরিচালক শচীন দেববর্মণের প্রয়াণ দিবস ৩১ অক্টোবর। বাংলা গানের এই কিংবদন্তী ১৯৭৫ সালের এই দিনে পরলোকগমন করেন। তিনি এস ডি বর্মণ কিংবা শচীন কর্তা নামেও ব্যাপক পরিচিত ছিলেন।

বাংলা এবং হিন্দী উভয় ভাষার গানে সমান দক্ষ শচীন দেব তৎকালীন পূর্ববাংলা ও পশ্চিম বাংলার পাশাপাশি ভারতের হিন্দি বলয়েও তুমুল জনপ্রিয় ছিলেন।

ত্রিপুরার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সন্তান শচীন দেববর্মণ চাইলেই অনেকটা রাজকীয় জীবন কাটাতে পারতেন। বিলাসে-ভোগে কাটাতে পারতেন দিন। কিন্তু তিনি প্রচলিত ডথে হাঁটেননি। রক্তে মিশে থাকা সঙ্গীতের নেশায় তিনি কষ্টের পথ বেছে নেন। পরিবারের আপত্তি উপেক্ষা করে নিজ চেষ্টায় ও উপার্জনে সঙ্গীতের চর্চা চালিয়ে যান। এক সময় অধরা সাফল্য এসে তার পায়ের কাছে লুটোপুটি খেতে থাকে। একইসঙ্গে বাংলা ও হিন্দী ভাষার জনপ্রিয়তম শিল্পীতে পরিণত হন তিনি।

শচীন দেববর্মণের জন্ম ১৯০৬ সালের ১ অক্টোবর অবিভক্ত ভারতের কুমিল্লায শহরে। তিনি ছিলেন ত্রিপুরার চন্দ্রবংশীয় মাণিক্য রাজপরিবারের সন্তান।

বাবা নবদ্বীপচন্দ্র দেব বর্মন ছিলেন একজন সেতারবাদক এবং ধ্রূপদী সঙ্গীতশিল্পী। তিনিই ছিলেন শচীন দেববর্মনের প্রথম শিক্ষক। এরপর তাঁর সঙ্গীত শিক্ষা চলে উস্তাদ বাদল খান এবং বিশ্বদেব চট্টোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে। ধ্রূপদী সঙ্গীতের এই শিক্ষা তাঁর মধ্যে সঙ্গীতের মৌলিক জ্ঞান সঞ্চারে গভীর ভূমিকা পালন করে। পরবর্তীতে তিনি উস্তাদ আফতাবউদ্দিন খানের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন।

১৯২৫ সালে তিনি কুমিল্লায় পৈত্রিক নিবাস ছেড়ে ভারতে গমন করেন। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে হিন্দুস্তান মিউজিক্যাল প্রোডাক্টস থেকে শচীন দেবের দুটি রেকর্ড বের হয়। গান দুটি ছিল পল্লীগীতির ঢঙে গাওয়া “ডাকিলে কোকিল রোজ বিহানে” এবং খাম্বাজ ঠুমরি অঙ্গের রাগপ্রধান “এ পথে আজ এসো প্রিয়”। এরপর থেকে তাঁর পরিচিতি ও জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়তে থাকে।

১৯৩০-এর দশকে তিনি রেডিওতে পল্লীগীতি গেয়ে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। পূর্ব বাংলা এবং উত্তর-পূর্ব বাংলার পল্লীগীতির উপর তাঁর বিশেষ ঝোঁক ছিল। বাংলা লোকসঙ্গীতে শচীন কর্তার ছিল অগাধ জ্ঞান। লোক গানের খোঁজে তিনি বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ববঙ্গ) বিভিন্ন জেলার গ্রাম ও গ্রামান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি তার আত্মজীবনীতে লিখেছেন, ‘পূর্ববঙ্গের এমন কোনো অঞ্চল নেই, এমন কোনো নদী নেই যেখানে আমি যাইনি, ঘুরিনি।’

বাংলা লোকসঙ্গীত তাকে এতোটাই মুগ্ধ করেছিল যে, তার প্রায় প্রতিটি গানেই তার ছোঁয়া পাওয়া যেত। তিনি উচ্চঙ্গ সঙ্গীত ও লোকগানের একটি অভিনব সুন্দর সমন্বয় ঘটিয়েছিলেন। লোকগানের ছাপ তাই তার কালজয়ী নানা গানে ঘুরেফিরে এসেছে। তার বিখ্যাত অনেক বাংলা ও হিন্দী গান বাংলার ঐতিহ্যবাহী ভাটিয়ালী, ভাওয়াইয়া, সারি, মুর্শিদী, বাউল, ঝুমুর গানের ভিত্তির ওপর রচিত।

১৯২৫ সালে বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার পর ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত কলকাতায় বসবাস করেন শচীন কর্তা। এরপর তিনি বোম্বে চলে যান এবং সেখানেই স্থায়ী হন।

বড় সঙ্গীতশিল্পী হওয়ার স্বপ্নের কারণে কলকাতায় পাড়ি জমালেও শচীন দেববর্মণের মন পড়ে থাকতো বাংলাদেশে। বাংলার জল, হাওয়া, নদী, গাছ, পাখপাখালির জন্যে তার মন কাঁদত। বুকের ভেতর হাহাকার করে উঠত। এই হাহাকারই উঠে এসেছে তার সেই বিখ্যাত গানে, যেখানে তিনি ডানা ভেঙ্গে কলকাতায় পড়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করেন।

‘হবিগঞ্জের জালালী কইতর সুনামগঞ্জের কুড়া
সুরমা নদীর গাংচিল আমি শূন্যে দিলাম উড়া
শূন্যে দিলাম উড়া রে ভাই যাইতে চান্দের চর
ডানা ভাইঙ্গা পড়লাম আমি কইলকাত্তার উপর’

শচীনের গাওয়া অথবা সুর করা গানের মধ্যে আরও রয়েছে- ‘তুমি এসেছিলে পরশু’, ‘বাঁশি শুনে আর কাজ নাই’, ‘কে যাস রে ভাটিগাঙ’, ‘নিশিথে যাইওরে ফুলবনে’, ‘শোনো গো দখিন হাওয়া’, ‘রঙিলা রঙিলা’, ‘ঝিলমিল ঝিলমিল’, ‘নিটল পায়ে রিনিক ঝিনিক’, ‘বর্ণে গন্ধে ছন্দে গীতিতে’, ‘তুমি আর নেই সে তুমি’, ‘টাকডুম টাকডুম বাজে’, ‘আঁখি দুটি ঝরা’ ইত্যাদি।
এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.










© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি