৫০ বছরেও প্রাপ্য সম্পদ ফেরত দেয়নি পাকিস্তান (ভিডিও)
প্রকাশিত : ১২:১৪, ১৫ ডিসেম্বর ২০২১
স্বাধীনতার ৫০ বছরেও বাংলাদেশের প্রাপ্য সম্পদ ফেরত দেয়নি পাকিস্তান। আন্তর্জাতিক আইনে স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির সুষম বন্টন বিধান থাকলেও তা বরখেলাপ করেছে পরাজিত এই রাষ্ট্র। এমনকি মুক্তিযুদ্ধকালীন ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও নির্ধারণ করেনি পাকিস্তান।
সাতচল্লিশে ভাগ হয় উপমহাদেশ, জন্ম হয় ভারত আর পাকিস্তান। তখন ভারত প্রাপ্য সম্পদ বুঝে দিয়েছিল পাকিস্তানকে। এমনকি মালয়েশিয়া থেকে সিঙ্গাপুর যখন আলাদা হয়েছিল তখনও বহির্বিশ্বের ঋণের দায় ও প্রাপ্য সম্পদ বুঝে নিয়েছিল দু’দেশ।
পাকিস্তানী শোষণ নির্যাতনের প্রতিবাদে বাঙালি মুক্তিযুদ্ধ করে বিজয় এনেছিল একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বরে। অতঃপর ৫০ বছর পেরুলেও রাষ্ট্র পাকিস্তান ফেরত দেয়নি বাংলাদেশের প্রাপ্য সম্পদ।
বছরের পর বছরজুড়ে বৈদেশিক মুদ্রার বেশিভাগই অর্জন ছিল পূর্ব পাকিস্তানের। অথচ পাট, চামড়াসহ শিল্প-কলকারখানায় রপ্তানির পুরো লভ্যাংশই জমা হতো পশ্চিম পাকিস্তানের রিজার্ভে।
বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ, এফসিএ বলেন, আমাদের কাঁচা পাট রপ্তানি করতো। ১ ডলারে আমাদেরকে দিত ৪ টাকা আর পাকিস্তান পেত ৮ টাকা। আমাদের পাট, চা ও চামড়া রপ্তানি করে তাদের আর্নিং ছিল। এছাড়াও আদমজি, বাওয়ানি, যত রকমের ইন্ড্রাস্ট্রি, ইন্স্যুরেন্স-ব্যাংক সবগুলোতে ছিল তাদের মালিকানা।
ফিরে দেখার একাত্তর সাক্ষ্য দিচ্ছে, স্বাধীনতাযুদ্ধের ৯ মাস বহুমাত্রিক ক্ষতি করেছে জান্তা সরকার। ত্রিশ লাখ মানুষকে নির্বিচারে হত্যা করেছে পাকিস্তান। বিজয়ের প্রাক্কালে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান-বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে। অর্থমূল্যে যা নির্ধারণ করা একেবারেই অসম্ভব।
অন্যদিকে ব্রিজ, কালভার্ট, সড়কসহ অধিকাংশ যোগাযোগ অবকাঠামো ধ্বংস করেই থেমে থাকেনি হানাদাররা। ভেঙ্গে-গুঁড়িয়ে দেয় শিল্প, কলকারখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য অবকাঠামো।
ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘এই মানুষগুলোর লাইফের ইকোনমিক ভেল্যু কত, সেটার কিন্তু ফর্মূলা আছে। ইন্টারন্যাশনাল বেঞ্চ মার্ক রয়েছে, এটাও কিন্তু করা হয়নি। এগুলো যদি করা হয় এই ৫০ লাখ হাজার কোটি ক্ষতিপূরণ গিয়ে দাঁড়াবে ৫ থেকে ৭ গুণ বেশি।’
এতো এতো মানুষ হত্যা, অবকাঠামো ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া, অগ্নিসংযোগ-লুটপাটের কারণে দেশের জিডিপি গ্রোথ এক নাগাড়ে ১৭ বছর ছিল নিম্নমুখি।
সাবেক কম্পট্রোলার এন্ড অডিট জেনারেল মাসুদ আহমেদ বলেন, ‘স্বীকৃতি পাবার পর দু’দেশের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। জিয়াউল হকের আমলে যেসব আলোচনা হয়েছে তা ছিল অত্যন্ত ধূর্তাপূর্ণ। ওখানে কোন ধরনের মীমাংসা হয়নি।’
অন্য এক হিসেব বলছে, পাকিস্তানী বর্বরতায় ক্ষতি হয়েছে ৪০ হাজার লাখ কোটি টাকা। যুদ্ধের আগে ও পরের হিসেব যোগ করলে ক্ষতির পরিমাণ ছাড়াবে ৭০ থেকে ৮০ লাখ হাজার কোটি। জাতিসংঘের হিসেবে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১২ লাখ ডলার।
মাসুদ আহমেদ আরও বলেন, ‘সেই সময়ে সম্পদের যে মূল্য ছিল সেটা মাল্টিপ্লেয়ার দিয়ে নির্ণয় করা সম্ভব।’
ক্ষয়ক্ষতি আর পাওনার প্রকৃত অর্থমূল্য নির্ধারণে কমিশন গঠনের দাবিও ঝুলে রয়েছে দীর্ঘদিন।
এএইচ/