পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়েই বেগবান হয় স্বাধীনতা আন্দোলন (ভিডিও)
প্রকাশিত : ১১:৫৭, ২ মার্চ ২০২২ | আপডেট: ১২:৪০, ২ মার্চ ২০২২
জাতীয় পতাকা উত্তোলন দিবস ২ মার্চ। বাঙালির মনন, মুক্তি, স্বাধীকার ও চেতনার প্রতীক জাতীয় পতাকা। ১৯৭১ এর এই দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় উত্তোলন করা হয়েছিল বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা। এর ফলে আরো এক ধাপ এগিয়ে যায় স্বাধীনতা আন্দোলন।
পাকিস্তানী শাসকদের শোষণ আর নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে একাত্তরের শুরুতেই আন্দোলন বেগবান হয়। মার্চের প্রথম থেকেই শুরু হয় সশস্ত্র সংগ্রাম। ১৯৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরংকুশ বিজয়ের পর শঙ্কিত হয়ে ওঠে পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী। ৩ মার্চ ঢাকায় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করার কথা থাকলেও ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার নীল নকশায় ১লা মার্চ দুপুর ১টা ৫ মিনিটে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন অনির্দিষ্ট কালের জন্য স্থগিত করেছিলো ইয়াহিয়া।
এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ছাত্র ও জনতা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ শুরু করে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ২ ও ৩ মার্চ হরতাল ডাকা হয়। সংগ্রামী ছাত্র সমাজের উদ্যোগে ২ মার্চ বিক্ষোভ সমাবেশ হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবন প্রাঙ্গণের বটতলায়। সেখান থেকেই স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠের কথা উঠেছিল।
সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করে তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি নূরে আলম সিদ্দীকী বলেন, ‘‘আমাদের প্রস্তুতিটা ছিলো খুব কঠিন, দুর্বার-দুর্গম-দুস্তর পথযাত্রার। এজন্য বাংলার জনগনকেও আমরা প্রস্তুত রেখেছিলাম। বিভিন্ন সভা, পথসভা, স্লোগান, মিছিলের মাধ্যমে পুরো পাকিস্তানের পাশাপাশি পুরো বিশ্বকেই আমরা জানান দিয়েছিলাম যে, এইবার আর প্রতিবাদ নয়, এইবার আমরা প্রতিরোধ করবো। এবার লড়াই এসেছে, আমরা সেই লড়াই জিতবো।’’
সেদিন বেলা ১১ টার দিকে বক্তব্য দিচ্ছিলেন ডাকসু ভিপি আ স ম আব্দুর রব। মিছিল নিয়ে আসা ছাত্রলীগ নেতা শেখ জাহিদ সবুজ জমিনের ওপর লাল বৃত্তের মাঝখানে সোনালি মানচিত্র খচিত একটি পতাকা মঞ্চে তার হাতে তুলে দেন।
সেই কথা বলতে গিয়ে নূরে আলম সিদ্দীকী বলেন, ‘‘ তখনকার ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক শেখ জাহিদ সবুজ। পতাকাটিসহ একটি খন্ড মিছিল নিয়ে ওই মিটিংয়ে প্রবেশ করেন তিনি। তখন আ স ম আব্দুর রব অতি সম্মানের সঙ্গে নিচু হয়ে পতাকাটি গ্রহণ করেন।’’
সমাবেশ থেকে ছাত্ররা মিছিল সহকারে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে যেয়ে সেখানেও বাংলাদেশের নতুন পতাকা উড়িয়ে দেন। সার্বোভৌম দেশের প্রতীক এই পতাকা আকাশে বাতাসে ঘোষণা করেছিল স্বাধীকারের দাবী।
নূরে আলম সিদ্দীকী আরও বলেন, ‘‘সেদিনও কিন্তু আমরা ম্যানডেটের বাইরে কোনও কথা বলতে রাজি ছিলাম না। ২৫ মার্চের এই সচস্ত্র আক্রমণ আমরা নিরস্ত্র বাঙ্গালিদের দ্বারা প্রতিরোধ করতে সাহস পেয়েছি।’’
লাল, সবুজ, সোনালি তিন রঙের পতাকাটি সেই যে বাংলার আকাশে উড়লো তা আর নামাতে পারেনি পাকিস্তানের বর্বর সেনাবাহিনী ও সরকার। সেদিনের পতাকা উত্তোলন এগিয়ে নেয় স্বাধীনতা সংগ্রাম, তারই ফসল স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
এমএম/