মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি বন্ধুদের ভূমিকা (ভিডিও)
প্রকাশিত : ১২:৩৬, ১২ মার্চ ২০২২
কেউ আশ্রয় দিয়েছেন, কেউ যুগিয়েছেন অর্থসাহায্য। এর বাইরেও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নিয়েছিলেন বিদেশি বন্ধুরা। বিপন্ন মানুষের পাশে থেকে যারা পালন করেছেন অগ্রণী ভূমিকা।
২৫শে মার্চ কাল রাত, পূর্ব বাংলায় গণহত্যার পর নীরব থাকেনি ব্রিটেন সরকার। সোচ্চার হয়েছিল দেশটির গণমাধ্যম। বাংলাদেশের স্বাধীনতার লড়াইকে সমর্থন জানায় দেশটি। উচ্চবাক্য, তর্ক-বিতর্ক হয় হাউস অব কমন্সে।
জরুরিভাবে অর্থ ও ত্রাণ সাহায্য পাঠায় দেশটির সরকার। তাতে যোগ দেন সাধারণ মানুষ। স্যার অ্যালেস ডগলাস হিউম, রাসেল জন স্টোনহাউসসহ আরও ক’জন এমপি ব্রিটেন থেকে ছুটে আসেন শরণার্থীদের অবস্থা জানতে। যুদ্ধের পরিস্থিতি আর গণহত্যা সাধ্যমতো তুলে ধরেন বিশ্ববাসীর কাছে।
পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মতো পাকিস্তান আর্মির আজগর বেলজুর প্রাণ কেঁদেছিল স্বাধীনতাকামী মানুষের জন্য। পাক সেনাদের গণহত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছিলেন।
স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত বীরপ্রতীক লে. কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, “সেন্ট্রি পোস্টে ছিলেন। সেদিন গভীর রাতে বৃষ্টি হচ্ছিল, সিদ্ধান্ত নিলেন- এদের সঙ্গে আর থাকবো না। তারা এভাবে মানুষকে অত্যাচার করে। আমার দেশ বেলুচিস্তানে করেছে, বাংলাতেও করছে, আমি শান্তি চাই। আপনাদের প্রতি আমার ভালবাসা আছে, আপনারা সত্যের জন্য লড়ছেন। আমার রাইফেলটা আপনাকে দিয়েদিলাম, সেভাবেই মুক্তিযোদ্ধার মাঝে মধ্যে এসে তার সঙ্গে যুদ্ধের কলাকৌশল নিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে যেতেন।”
এমন আরো অনেক মানবতাবাদী ছিলেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে পরম বন্ধু হয়ে কাজ করেছেন।
কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, “একজন কর্নেল র্যাঙ্কের অফিসার শাফকাত বালুজ, তার ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু তার এলাকাতে যাতে গণহত্যা না হয় সেই চেষ্টা করেছিলেন। এতে টিক্কা খান এবং অন্যান্য জেনারেলরা রাগান্বিত হন। তাকে কম্যান্ড থেকে সরিয়ে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। এই লোকটার বিরুদ্ধে গণহত্যা করার কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।”
যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর এডওর্ড কেনেডির কথা না বললেই নয়। শরণার্থী ক্যাম্পগুলো নিজের চোখে দেখেছিলেন তিনি। জুডিশিয়ারি কমিটিতে সরব থেকে নিক্সন প্রশাসনকে চাপে রেখেছিলেন এই সিনেটর।
একেবারে কাছে থেকেই ত্রাণ কার্যক্রমে যুক্তছিলেন তৎকালীন অক্সফার্মের কর্মকর্তা ব্রিটিশ মানবাধিকারকর্মী জুলিয়ান ফ্রান্সিস। বিপন্ন মানুষকে সহায়তা, বিশ্বজনমত গড়তে এবং সহায়তা অব্যাহত রাখতে তার হাত ধরেই বিশ্ব কাপানো “টেস্টমনি সিক্সটিন” দেখেছিল আলোর মুখ।
বহু চেষ্টা করেও জান্তা সরকার ঢেকে রাখতে পারেনি অপারেশন সার্চ লাইটের খবর। অনুসন্ধানী সাংবাদিক সিডনি এইচ সাহেন্ডাবার্গ ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’ পাকস্তানি বাহিনীর নির্মম হত্যাযজ্ঞ তুলে ধরেছিলেন। ৩০শে মার্চ দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকায় সাইমন ড্রিংয়ের প্রতিবেদন থেকে বিশ্ববাসী জানতে পারে এদেশের নির্মম গণহত্যার কথা।
সান ডে টাইমসের এ্যান্থনি মাসকারেনহাস-এর গণহত্যার প্রতিবেদন নাড়া দিয়েছিল বিশ্বজুড়ে। বিবিসির সাক্ষাৎকারে ইন্দিরা গান্ধী তাই বলেছিলেন, এ্যান্থনির লেখা সশস্ত্র প্রস্তুতির সহায়ক হয়েছে।
বীরপ্রতীক লে. কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বলেন, “ইয়াকুব খান চলে গেলেন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল ছিলেন তিনি। তাকে লেফটেন্যান্ট জেনারেল থেকে মেজর জেনারেলে ডিমোট করা হয়েছিল। সার্সলাইটের পূর্বে তিনি তখন এই এলাকার ইস্টার্ন কমান্ডের অধিনায়ক ছিলেন। সশস্ত্র অপারেশন চালানোর অর্ডার হলে, তখন তিনি বললেন- সঠিক হবে না কারণ তারা এদেশের নাগরিক।”
সম্মুখ সারিতে থেকে যুদ্ধ করেছেন ডাচ-অস্ট্রেলিয়ান বীর প্রতীক ওডারল্যান্ড। প্রত্যক্ষ সংগঠিত করতেও সহায়তা করেছিলেন বন্ধু ফাদার রিগান। এই তালিকায় আছেন আরও অনেক বন্ধুর নাম। যাদের অবদান কোনদিনই ভোলার নয়, ভুলবে না বাঙালি।
এএইচ/